
Qadaruddin Shishir ( কদরুদ্দীন শিশির)
রাস্তায় অপরিচিত নারীর '.ধ' মেপে বড় মনে হওয়ায় তার পরিহিত ওড়না বিষয়ে জ্ঞান দেয়া এবং বাজে ব্যবহার করা (আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলার ছবি দ্রষ্টব্য) একজন নারী হয়রানিকারীকে জোরপূর্বক শাহবাগ থানা থেকে বের করে নিয়ে গলায় ফুল হাতে পবিত্র কুরআন আর মাথায় পাগড়ি পরিয়ে মিছিল দেয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটিকে আরো অনেক ঘটনার মতো 'তৌহিদী জনতা'র কাণ্ড বলে প্রচার করা হচ্ছে। এখানে 'তৌহিদী জনতা' বলতে 'ধার্মিক আমপাবলিক' বলেই বুঝানো হচ্ছে।
কিন্তু এই ঘটনার সাথে সাম্প্রতিক অতীতে আরও কয়েকটি ঘটনার ছবি বিশ্লেষণ করে দেখে মনে হচ্ছে, শাহবাগের এই ঘটনাটি (এবং এরকম 'তৌহিদী জনতা'র কাণ্ড বলে চালানো) আরও অনেক ঘটনা রেন্ডম 'ধার্মিক আমপাবলিক' এর তাতক্ষণিক ক্ষোভ থেকে উতসারিত স্বতস্ফুর্ত ঘটনা নয়।
বরং এগুলো কো-অর্ডিনেটেড ঘটনা।
আমি সাম্প্রতিক ৩টি ঘটনার কিছু ছবি বিশ্লেষণ করেছি। ঘটনা তিনটি হলো, গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম আলো পত্রিকার সামনে ২ দিনব্যাপী বিক্ষোভ এবং গরু জবাই কর্মসূচি, ডেইলি স্টার পত্রিকার ভবনের গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ এবং জুমার নামাজ আদায় কর্মসূচী এবং গতকাল রাতে শাহবাগ থানায় আটক নারী হয়রানিকারী যুবককে ছাড়িয়ে নেয়ার ঘটনা।
এই তিনটি ঘটনায় কয়েকশো লোককে জড়ো করে সামনের সারিতে থেকে তাদের নেতৃত্ব দেয়া অন্তত ৩জন লোক সব জায়গায় কমন।
এদের মধ্যে ২ জনের নাম ও পরিচয় জানা গেছে-- আবু সাঈদ শের মোহাম্মদ খান, যার ফেসবুক প্রোফাইল Sher Muhammad.
শের মোহাম্মদকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার অর্থ সরবরাহকারী সদস্য হিসেবে আটক করে র্যাব। অনলাইন শরিয়াহ গ্রাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সে। ৫ আগষ্টের পর আল-ক্বায়দার কালো পতাকার সমর্থনে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় তাকে। ২০১৫ সালে হাটহাজারিতে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সামনে বিক্ষোভে তাকে নেতৃত্ব দিতে একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে।
দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলেন, আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। তিনি প্রথম আলোর সামনের বিক্ষোভে এবং সেখান থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া কয়েকজনকে থানা থেকে জোরবপূর্বক ছাড়িয়ে নেয়াতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শাহবাগ থেকে নারী হয়রানিকারী ছাড়িয় নিতেও তিনি যশোর থেকে ঢাকায় এসে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিক্রমপুরী তার ওয়াজ, অনলাইন বয়ান ও ফেসবুকে অতিউগ্র কথাবার্তা প্রচারের জন্য পরিচিত। সম্প্রতি তিনি তার এক ফেসবুক পোস্টে বায়তুল মোকাররামের বর্তমান খতীব মাওলানা আব্দুল মালেককে মুনাফেক এবং ''তাগুতের কুকুর'' বলে অভিহিত করেন।
এছাড়া তিনি 'এন্টি শাতিম মুভমেন্ট' নামে একটি ফেসবুক পেইজ চালান যেখানে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক পোস্টে 'শাতিমে রসুল' হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তাকে হত্যার আহ্বান জানানো হয়।
গণতন্ত্র চর্চাকারী মুসলিমদেরকে 'কাফির' মনে করে তিনি নিয়মিত পোস্ট করেন এবং বয়ান করেন। নাস্তিকদের হত্যা করার জন্যও তিনি উস্কানি দেন। আইএসকে খারেজি মনে করলেও আল-কায়দা ও তালিবানকে হক্বপন্থী দল বলে প্রচারণা চালান।
২০২১ সালে তাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। আতাউর কারাগারে থাকা জঙ্গিদের মুক্তির জন্য কাজ করা বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের একজন কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক। এবং ৫ আগস্টের পর তিনি তার দলবল নিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে জঙ্গিদের মুক্ত করে আনার জন্য জড়ো হয়ে কর্মকর্তাদের জেরা করেন।
তৃতীয় আরেকজন ব্যক্তি উপরের তিনটি ঘটনায়ই শের মোহাম্মদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে কিন্তু তার পরিচয় জানা যায়নি।
অর্থাত, ‘তৌহিদী জনতা‘র স্বতস্ফুর্ত কাণ্ড বলে প্রচার চালানো হলেও দেখা যাচ্ছে এই ঘটনাগুলোতে মানুষ জড়ো করার পেছনে উগ্রপন্থী কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয় ব্যক্তিদের কো-অর্ডিনেশনের বিষয়টি স্পষ্ট।
(এখানে উল্লেখ্য যে, প্রথম আলোর সামনের ঘটনাটির মূল আয়োজক কয়েকজন ব্যক্তি যেমন আবু মোস্তাফিজ হাসান, রাতুল মোহাম্মদ, মাসুদ জাকারিয়া যারা উগ্রপন্থা বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। তবে তাদের কর্মসূচিতে উপরিউক্ত তিন ব্যক্তিকে সক্রিয় থাকতে এবং বিশেষ করে থানা থেকে আটকদের ছাড়িয়ে নিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।)