
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যথাযথ নজরদারির অভাবে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক। হালের কিশোর গ্যাং অপরাধীরা এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মানুষ হত্যার পর এখানে এনে লাশ ফেলা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
পুলিশ সূত্র বলছে, গত পাঁচ বছরে ৩০০ ফিট সড়ক ও আশপাশের এলাকা থেকে ৭৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে অনেকে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে অহরহ ছিনতাই ও ডাকাতি হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, নির্মাণের পর থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলার লোকজন বিকেলে উন্মুক্ত স্থানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছুটে আসে পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন সেক্টরে। এরই মধ্যে এই এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা।
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, সড়কটা অনেক বড়। এর একটা অংশ ডিএমপি, আরেকটা অংশ রূপগঞ্জ থানার আওতায়। সড়কে চেকপোস্ট রয়েছে। তার পরও শৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে কালের কণ্ঠের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল আহমেদ জানান, রূপগঞ্জে মাদকের স্পট রয়েছে দুই শর ওপরে, আর মাদক ব্যবসায়ী প্রায় চার শ। খুচরা ব্যবসায়ীও রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এদের বেশির ভাগ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
জানা গেছে, এই এলাকায় মাদক প্রবেশের সবচেয়ে নিরাপদ রুট বালু নদ। এই নদে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে মাদক আনা-নেওয়া করে। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদী দিয়েও পণ্যবাহী জাহাজে করে মাদক ঢুকছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা হচ্ছে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট। এ ছাড়া চনপাড়া-নগরপাড়া সড়ক দিয়েও মাদক পাচার হয়।
এর বাইরে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে কুমিল্লা থেকে মাদক ঢোকে এই এলাকায়। এর বাইরে আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে মাদক ঢোকে।
পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে নানা কৌশলে মাদক বহন করে থাকে। এর মধ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বহন করা হয় লাউ, নারকেল আর ম্যাচের বাক্সের ভেতরে করে। হেরোইন বহন করা হয় মিষ্টির প্যাকেটের ভেতরে করে। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের দিয়েও মাদক আনা-নেওয়া করে থাকে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, গত সাত বছরে নেশার কাজে বাধা ও প্রতিবাদের কারণে পাঁচজন খুনের শিকার হয়েছে ৩০০ ফিট এলাকায়।
খিলক্ষেত থানার ওসি কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে সব ধরনের তৎপরতা নেওয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে।