
আমাদের ঢাকার রাস্তায় মাস্ক পড়ে চলতে হয় কেন! আমরা শব্দে ঘুমাতে পারি না কেন! আমরা সবসময় এত উত্তেজিত থাকি কেন! এত আওয়াজের মধ্যে তো মানুষের শান্তভাবে, ভদ্রভাবে বসে চিন্তা করার সুযোগ হওয়ার কথা না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “আমাদের নদীগুলো ভয়ঙ্কর রকমের দূষিত, যদিও আমরা নদীমাতৃক দেশ। আমাকে এখনো কিন্তু শুনতে হয়, দেশে আর উন্নয়নের দরকার নাই, শুধু পরিবেশ থাকলেই হবে।”
আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭৫ বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “হয়তো আমি এখানেই ভর্তি হতাম, কিন্তু এটা তো আর তখন আমাদের সময় ছিল না। কাজেই আমি মোটামুটি কাঠখোটটা একটা বিষয়ই পড়েছি, ল পড়েছি। কিন্তু তারপর, নিজের ক্যারিয়ারে এসে চুজ করেছি যে, আমি একজন এনভাইরনমেন্টাল অ্যাক্টিভিস্ট হব। ফলে আমি যে কাজটা করি, তার সাথে আমার ল এবং জিওগ্রাফি এবং এনভারনমেন্টের খুবই নিবিড় সম্পর্ক। একটু যদি দুটো বিষয়কে আলাদা করে দেখেন, বর্তমানে যে বাস্তবতায় আমরা দেশ পরিচালনা করছি, আমরা একটা কথা বলি জিওপলিটিক্স।”
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, “জিওগ্রাফি শুনতে যতটা মনে হয় একটা নির্বিবাদী বিষয়, আসলে জিওপলিটিক্সে জিওগ্রাফি আর অত নির্বিবাদী থাকে না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আর এনভাইরনমেন্ট শুনলে মনে হয় খুবই রোমান্টিক একটা এজেন্ডা। কিন্তু আসলে এনভায়রনমেন্ট প্রটেক্ট করতে গেলে, আপনাকে সত্যিকার অর্থে স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে হবে।
আমাকে এখনো কিন্তু শুনতে হয়, দেশে আর উন্নয়নের দরকার নাই, শুধু পরিবেশ থাকলেই হবে। এই কথা আমাকে এখনো, এখন যে অবস্থানে আছি, সেই অবস্থানে থেকেও কিন্তু শুনতে হয়। একটা জাতি হিসেবে আমরা সবচেয়ে শব্দের দেশে বসবাস করি। সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের দেশে বসবাস করি। আমাদের নদীগুলো ভয়ঙ্কর রকমের দূষিত, যদিও আমরা নদীমাতৃক দেশ। আমাদের খাদ্য ভেজালে ভরা।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমরা যদি সেগুলোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে, কেবল মেট্রোরেল হলো কিনা, দ্রুতগামী ট্রেন হলো কিনা, কয়টা ফ্লাইওভার হলো, সেগুলোর চিন্তা করি, তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যা রেখে যাব তা হচ্ছে, কয়টা ফ্লাইওভার আছে সেই হিসাব, মেট্রোরেলে কয়টা রুট আছে সেই হিসাব, কতগুলো বড় আটলেনের রাস্তা আছে সেই হিসাব।”
তিনি বলেন, “আর ওরা আমাদেরকে তখন প্রশ্ন করবে যে, আমাদের ঢাকার রাস্তায় মাস্ক পড়ে চলতে হয় কেন! আমরা শব্দে ঘুমাতে পারি না কেন! আমরা সবসময় এত উত্তেজিত থাকি কেন! এত আওয়াজের মধ্যে তো মানুষের শান্তভাবে, ভদ্রভাবে বসে চিন্তা করার সুযোগ হওয়ার কথা না।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ভিন্ন বিভাগে পড়লেও যেটা বললাম, আপনাদের সাথে আমাদের, আমার গড়ে ওঠার জায়গায় একটা আত্মীয়তা আছে। এবং সবচেয়ে বড় আত্মীয়তাটা হচ্ছে, আমি যে কাজ করি, এটার ভিত্তি হচ্ছে, আপনারা যে বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করেছেন, সে বিষয়টা। কিন্তু মুশকিল হলো যে, আমরা পড়ালেখা করেছি কিন্তু বাস্তবে গিয়ে সেটার যখন আমরা বাস্তবায়নের দিকে যাই, তখন কেন জানি যা পড়েছিলাম, তার সাথে আর বাস্তবতার আমরা মিল রাখি না।
আরেকটা বড় কথা হচ্ছে, প্রচন্ড আওয়াজে যেভাবে আমাদের বিয়েবাড়িতে গান হয়, সেইভাবে যদি সারাটা দিন আপনার বিকেল চারটা পর্যন্ত আওয়াজ চলে, বাসায় কি আসলে আপনি স্থির মাথা নিয়ে যেতে পারবেন! তার তো আমি কোন সুযোগ দেখি না। ফলে আমরা প্রত্যেকেই যখন উদযাপন করি, যখন জীবনে একটা সিদ্ধান্ত নেই, আমাদের শিক্ষার সাথে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ যেন হয়।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সরওয়ার আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ৭৫ বর্ষ উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ।