
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিতে লাখো মানুষের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাহমিদ হুজায়ফা। তখন নির্বিচারে গুলি চলছিল ছাত্রজনতার ওপর। সেই গুলিতেই আহত হন তাহমিদ হুজায়ফা। সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
বলেন, ‘আমি দেখেছি আমি ভোট দিতে পারছি না। দেখেছি একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা- সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। ১৮ সালের ইলেকশনে ভোট দিতে পারিনি, ২৪ সালের ইলেকশনে ভোট দিতে পারিনি। আমি দেখেছি যে কোনো ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামলে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই চলত অত্যাচার। আমি শুরু থেকেই যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছি। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলাম। সরকার সবসময়ই যাকে থ্রেট মনে করে তার ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাত। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। এরই ধারাবাহিকতায় গত জুলাইয়ে ছাত্রজনতার ওপর চড়াও হয় সরকার। এ আন্দোলনে রাজধানীর উত্তরায় আমাকে খুব কাছ থেকে ছররা গুলি করা হয়। রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ি আমি। ভেবেছিলাম মারা যাচ্ছি।’
তাহমিদ হুজায়ফা বলেন, ‘একপক্ষীয় আক্রমণ হচ্ছিল। আমাদের হাতে ইটপাটকেল, আর তাদের হাতে অস্ত্র। ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ে গুলির সামনে দাঁড়াতে পিছপা হইনি।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমার বোনাস জীবন চলছে। বিশ্বাস করতে পারিনি আমি বেঁচে ফিরব। আমার পাশে মানুষকে শহীদ হতে দেখেছি। আমাকে গুলি করা হয়েছিল উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে। সেদিন মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় নেমেছিলাম। আমরা মিছিল করছিলাম। সেখানে বেশির ভাগই ছিল স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। জমজম টাওয়ার পেরিয়ে যেতেই পুলিশ হামলা করে।
উত্তরার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবরাজের ছেলে আমাকে গুলি করে। এর ভিডিও ফুটেজও রয়েছে আমার কাছে। এতটা কাছ থেকে কেউ গুলি করবে- আমি চিন্তা করিনি। গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমার শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। আমার চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। আমার মুখে মাথায় ঠোঁটে চোখে গুলি লাগে। তবে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। যে হাসপাতালে প্রথমে আমাকে নেওয়া হয় সেখানে হামলা চালানো হয়। পরিবার ফুটেজ দেখে আমাকে শনাক্ত করে, আমাকে খুঁজে বের করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আমাকে আগারগাঁও চক্ষু ইনস্টিটিউটেও নেওয়া হয়। জানলে অবাক হবেন, আমার অপারেশন করতে হয় হাসপাতাল বন্ধ থাকা অবস্থায়, আমাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। অন্যায়ের শেষ সীমাও অতিক্রম করে গিয়েছিল সরকার।’ ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে গত ডিসেম্বরে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তাহমিদ হুজায়ফা। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ তার মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে। তাহমিদ স্বপ্ন দেখেন মানবিক বাংলাদেশের।