Image description
ঋণ পরিশোধ নিয়ে দোটানা

রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন হলেও বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুরাহা হয়নি। গত ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটের পর পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনায় আসতে থাকে নানা ইস্যু। বিলম্বিত হতে থাকে ঋণের অর্থ প্রদানের বিষয়টি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক উপায়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলে। ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রোসাটমের কাছে অনুরোধ জানালেও ঋণ পরিশোধ করতে দুই বছর সময় পেছানোয় অগ্রগতি দেখা যায়নি। বর্তমানে প্রকল্পটির ড্রাই রান চলছে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার কথা থাকলেও ঋণ পরিশোধের সময় বর্ধিত না হলে কিংবা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পেমেন্ট নিশ্চয়তা না পেলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কবে নাগাদ বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে এবং প্রকল্পের অপরিশোধকৃত অর্থ সংক্রান্ত জটিলতাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছেন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সেই লিখাচেভ ও ডেপুটি মহাপরিচালক। সফরকালে তারা জ্বালানি উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উন্নয়নে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে অব্যাহত সহযোগিতার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যা পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী প্রকল্প।

আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস প্লান্ট নির্মাণে রোসাটমের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন। অন্যদিকে মহাপরিচালক লিখাচেভ বলেছেন, নির্মাণকাজ পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে চলেছে এবং পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। উভয় পক্ষ ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত ঋণ ব্যবহারের সময়কাল বাড়িয়ে আন্তঃসরকারি ঋণ চুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধনের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছে। এক্ষেত্রে, উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে শিগগির আইজিসিএ-তে প্রটোকল নম্বর ২ স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সুরক্ষা প্রটোকল এবং জ্ঞান স্থানান্তরের মতো ক্ষেত্রে অব্যাহত সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছে উভয় পক্ষ।

এ বিষয়ে সরকারের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে ঋণ চুক্তি বর্ধনের বিষয়ে আলাপ হলেও কবে নাগাদ দুপক্ষ বসে সেটি স্বাক্ষর করবে তা নিয়ে এখনো কেউই সম্মত হতে পারেনি। ফলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর চুক্তিটি আদৌ স্বাক্ষর করা হবে কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর অন্যতম পূর্বশর্ত যেহেতু অবিরাম এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা। তাই বিদ্যুৎ প্রদানের আগেই তারা পাওনা বুঝে পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অর্থ প্রাপ্ততার বিষয়টি সুরাহা না হলে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের গ্রিন সিগন্যাল নাও আসতে পারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা রাশিয়াকে স্যাংশন দিলে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ প্রদান নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। চায়নার ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় আনুষঙ্গিক খরচ। তবে রোসাটমের পেমেন্ট দেওয়া আটকে যায়। ৫ আগস্টের পর নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রকল্পের কাজ অল্প সময় বন্ধ থাকলেও পরে তা চালু হয়। কিন্তু রাশিয়ার এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অর্থ নিয়েছেন এমন আলোচনাও শুরু হয়, তবে তা প্রত্যাখ্যান করে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, এবার রোসাটমের বাংলাদেশ সফরে এ ইস্যুটি আবারও এসেছে; কিন্তু এবারও তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন জানায়। এ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমাদের দেশে যেভাবে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়েছে, তা সমাধানের পূর্ণ ব্যবস্থা আমাদের নেই। ফলে ভারত থেকে আমদানি করা লাগে, এমনকি কয়লাও আনতে হয় দেশটির কাছ থেকে কিন্তু পারমাণবিক প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে আমরা অনেকটাই আত্মনির্ভর হবো এই খাতে। রোসাটমের মহাপরিচালকের বাংলাদেশ সফরে ঋণের অর্থ প্রদানের বিষয়টি কীভাবে পরিচালনা হবে জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার যতটুকু মনে হচ্ছে তারা পরিশোধের সময় বাড়ানোয় নীতিগত সিদ্ধান্তে এক হতে পেরেছেন। ফলে তাদের এবং আমাদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে এবং বিষয়টি সমাধান হবে।