
রাজধানীতে বেশ কিছু দিন ধরে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের আতঙ্কে তটস্থ নগরবাসী। অনেক এলাকায় সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। এসব অপরাধ তদারকে নেই পর্যাপ্ত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। রাজধানীতে মোট দুই হাজার ১০০ সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল, যা দিয়ে এত দিন রাজধানীর অর্ধেক এলাকায়ও তদারকির কাজ করা যায়নি।
এর মধ্যে তিন শতাধিক ক্যামেরা অকেজো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে অপরাধমূলক বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও চিত্র পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত জুলাই বিপ্লবের সময় সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। ফলে সেই ক্যামেরাগুলো মেরামত করে কাজে লাগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপরাধমূলক ঘটনার তদারকি ব্যাহত হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে বেসরকারি অর্থায়নে ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা প্রকল্প চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে দুই হাজার ১০০ ক্যামেরা বসানো হয়। ট্রাস্টের অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান, বনানী, উত্তরা, বিমানবন্দর, নিকেতন, বারিধারা ও ডিওএইচএস এলাকায় এক হাজার ৪০০টি ক্যামেরা বসানো হয়। ৭০০ ক্যামেরা বসানো হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর সিটিতে বসানো এক হাজার ৪০০ ক্যামেরার মধ্যে বর্তমানে এক হাজার ২০০ ক্যামেরা রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানীতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ডিএমপি থেকে ক্যামেরাগুলো পরিচালনা করা হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে ক্যামেরাগুলো নষ্ট, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে।’ তবে কতসংখ্যক ক্যামেরা নষ্ট, তাত্ক্ষণিকভাবে তিনি তা জানাতে পারেননি।
রাজধানীর উত্তরা এলাকাকে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সেই এলাকায়ও সরকারের তরফ থেকে কোনো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নেই। যেগুলো ছিল, সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে বাড়ির মালিকদের লাগানো ক্যামেরা ও সাধরণ মানুষের ভিডিও করা ছবির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে পুলিশকে।
কিছু দিন আগে উত্তরা এলাকায় এক পুরুষের ওপর রামদা দিয়ে কোপানোর সময় এক নারীর ফেরানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই দৃশ্য সরকারি কোনো ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। পথচারী একজন মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করায় সেটি পুলিশের কাজে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরা এলাকায় বেশ কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও ভাঙচুর হয়। সেই ক্যামেরাগুলো এখনো মেরামত করা যায়নি।
এ ব্যাপারে উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহমেদ আলী গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘থানাগুলোর সিসি ক্যামেরাগুলো ঠিক করা হয়েছে। আর বাইরের ক্যামেরাগুলো এখনো সেভাবে মেরামত করা যায়নি। দুটি করা হয়েছে। আমরা তাগিদ দিচ্ছি ক্যামেরাগুলো চালু করার জন্য।’
পুলিশ সূত্র জানায়, পুরো রাজধানীকে তদারকের আওতায় আনতে কক্ষপক্ষে ১০ হাজার সিসি ক্যামেরার দরকার। সেখানে মাত্র দুই হাজার ১০০ ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অপরাধী ধরার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজে আসে ক্লোজড সার্কিট ক্যামরা। ছবি দেখে গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার করার সুযোগ থাকে না অপরাধীর। এতে পুলিশের তদন্তকাজের অনেক সুবিধা হয়। এ ছাড়া অপরাধীর অপরাধও আদালতে সহজে প্রমাণ করা যায়। সেই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার বেশ কিছু নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে পুলিশকে নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্যামেরার ওপর। শুধু অপরাধী শনাক্ত কিংবা রহস্য উদঘাটন করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র জানায়, জুলাই বিপ্লবের সময় রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার কিছু ক্যামেরাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গুলশান-বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন হওয়ায় সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই ক্যামেরার কারণে অনেক উপকারও পাচ্ছে পুলিশ। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় এ এলাকায় অপরাধও কম। তিনি বলেন, রাজধানীর পল্লবী এলাকায় গত বছর ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় ফয়সাল নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই দৃশ্য ধরা পড়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায়। ক্যামেরা থেকে ছবি নিয়ে সহজেই খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব।