Image description

একদল ডাকাত। বসবাস করে সিলেট নগরেই। রাত হলেই নামে ডাকাতির মিশনে। টার্গেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। ক’বছর আগেও একইভাবে নগরে বালুচরে অবস্থান নিয়েছিল ডাকাতরা। ঘুম হারাম করে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এবারের ডাকাত দলের সদস্যরা আর এক বাসাতে থাকে না। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই একত্রিত হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে বের হয় ডাকাতি করতে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বিশ্বনাথ জুড়ে তীব্র ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করে। প্রত্যন্ত এলাকা খাজাঞ্চি থেকে আতঙ্ক শুরু। এরপর একে একে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা উপজেলায়। রাতে বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আসে মানুষ। দল বেঁধে চলে টহল। অলঙ্কারী ইউনিয়নের সমাজসেবক আলাউদ্দিন পাশা রাত দেড়টার দিকে মানবজমিনকে জানান, মানুষজন দল বেঁধে রাস্তায় নেমেছেন। পাহারা দিচ্ছেন। ডাকাত ঢুকেছে বলে খবর এসেছে। এ কারণে আতঙ্কে পাহারা বসিয়েছেন এলাকার মানুষ। একই সময় বিশ্বনাথ সদরেও ডাকাত ঢোকার খবর আসে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। মানুষজন সড়কে অবস্থান নেন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেই গতকাল বুধবার ভোররাত পর্যন্ত ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোরের পর মানুষ ঘুমাতে যায়। শুধু বিশ্বনাথই নয়, পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। নগরের কিছু কিছু এলাকায় এ আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে এ আতঙ্ক যে অমূলক নয় সেটির প্রমাণ মিললো গভীর রাতে পুলিশের চেকপোস্টে দুই ডাকাত আটকের মধ্যদিয়ে। বসে থাকেনি পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সহ পুলিশের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাতে নেমে আসেন রাস্তায়। জোরদার করা হয় টহল। পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল- একটি ডাকাত দল মিশনে রয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগর থেকে গাড়িযোগে যাওয়া একদল ডাকাত ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের রশিদপুর এলাকা দিয়ে ঢুকেছিল। স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে সড়কে নেমে আসায় তারা ধাওয়া খেয়ে দিক বদল করে। রশিদপুর থেকে দক্ষিণ সুরমা হয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা সিলেট নগর এলাকায় এসে গোলাপগঞ্জে ঢুকে পড়ে। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে তারা গোলাপগঞ্জ সদরের একটু সামনে পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে ঘুরে ফের সিলেট শহরের দিকে আসতে থাকে। এমন সময় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেট নগরের প্রবেশমুখ গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। শুরু করে যানবাহনে তল্লাশি। এমন সময় ডাকাতদলের গাড়িটি চেকপোস্টে এসে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ধাওয়া করে দুই ডাকাতকে আটক করে। তবে পালিয়ে গেছে আরও পাঁচজন। তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। গতকাল দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- জকিগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামের কবির আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদ ও নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার রানীগাঁ গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে মো. ফয়সাল হাসান। আব্দুল্লাহ আহমদ বর্তমানে জালালাবাদ থানার পার্কভিউ আবাসিক এলাকার ১৪০ নম্বর বাসায় ও মো. ফয়সাল হাসান আখালিয়া এলাকায় বসবাস করে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত আব্দুল্লাহ আহমদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানাসহ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় ১টি ডাকাতি, ১টি চুরি ও ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে। অপর আসামি মো. ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) এ ১টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাদের কাছে ডাকাতির সরঞ্জাম মিলেছে। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, ৬-৭ জনের ডাকাতদল। হেতিমগঞ্জ চেকপোস্টে ধরা পড়েছে দুইজন। তাদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে ডাকাতদলের সদস্যরা সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে। রাত হলে তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতে বের হয়। মঙ্গলবার রাতে বিশ্বনাথের রশিদপুরে বাধাগ্রস্ত হয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা গোলাপগঞ্জে গিয়েছিল। তিনি বলেন, দুই ডাকাতের সহযোগীদের নামও পুলিশ পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ডাকাতদলের আর কোনো টিম সিলেটে রয়েছে কি না সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সিলেট নগরের প্রবেশমুখগুলোতে হঠাৎ তল্লাশি চৌকি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যের যৌথ টিম। মঙ্গলবার বিকালে এয়ারপোর্ট রুটে তল্লাশির পর মধ্যরাতে নগরের টিলাগড় এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়। এ সময় বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয় বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। 

একজনকে গণধোলাই: এদিকে রাতে নগরের বনকলাপাড়া এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে এক ছিনতাইকারী। পরে পুলিশ গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। স্থানীয়রা জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে রিকাবিবাজার পয়েন্টে শরীফ মোটরসাইকেলযোগে এসে এক নারীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় জনতা তাকে ধাওয়া করে সুবিদবাজার বনকলাপাড়ায় গিয়ে আটক করে এবং ধোলাই দেয়। এ সময় শরীফের কাছ থেকে ছুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দর থানার এসআই প্রনজিত মণ্ডল জানান, শরীফের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।