Image description
ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করা ছাড়াও ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনাও ঘটছে রাজধানীজুড়ে ছিনতাই আতঙ্ক :: কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, মাস্তানী, চাঁদাবাজি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নামধারী ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য :: মহাসড়কগুলোতে সন্ধ্যার পর ডাকাতির আতঙ্ক :: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন :: সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল বিকেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন। অথচ রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই টের পায়নি রাজধানীবাসী। অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যেই রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে লুট, ধানম-ির শংকর এলাকায় অস্ত্র নিয়ে দুর্বৃত্তদের মহড়া ও সায়েদাবাদে তরুণকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। পাড়া-মহল্লার গলিপথ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সর্বত্র এখন ছিনতাই আতঙ্ক, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, মাস্তানী, চাঁদাবাজি, কথায় কথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নামধারী ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এখন সন্ধ্যার পরেই ডাকাত আতঙ্ক। ডাকাতদের হাত থেকে মহিলারাও রেহাই পাচ্ছেন না। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর জেলার চান্দুরা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে প্রায় অর্ধশত যাত্রীকে জিম্মি করে তাদের সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, ডাকাতদল একজন নারী যাত্রীকে ধর্ষণ ও কয়েকজনের শ্লীলতাহানিও করে। ডাকাতদল বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মহাসড়কে ঘোরাঘুরি করে এসব ঘটনা ঘটায়। অথচ রাতে হাইওয়ে পুলিশের মহাসড়কে পাহারা দেয়ার কথা। এর আগে নাটোরেও ঘটে একই রকম ঘটনা।

এদিকে, সন্ধ্যা নামলেই রাজধানীসহ শহর, নগর-বন্দর এমনকি গ্রামের মানুষও ছিনতাই-ডাকাতির আতঙ্কে বাইরে বের হতে ভয় পায়। খোদ রাজধানীতে শত শত মানুষের সামনে রামদা দিয়ে রিকশা আরোহীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি বাসের মধ্যেও কেউ এখন নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। সারাদেশেই ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করা ছাড়াও ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই সারা দেশে এ রকম অপরাধ বাড়ছে। তবে এত পুলিশ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কেন এত অবনতি হচ্ছে- সেটি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর প্রশ্নের শেষ নেই। অপরাধীদের প্রকাশ্যে নৃশংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে লুট হওয়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ অস্ত্র এবং আড়াই লাখ গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি।

সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সারা দেশে চলমান ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থ হয়েছেন। এতে করে তার এই পদে থাকার আর কোনো যোগ্যতা নেই। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের নিয়ন্ত্রণ এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হাতে নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার) মো. খোদা বখস চৌধুরী।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, পেশাদার পুলিশিং হচ্ছে না বলেই এমনটি হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের মতে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এ বাহিনীতে নিয়োগের সময় একেবারে বেছে বেছে আওয়ামীপন্থিদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর সেসব দলীয় পুলিশ সদস্যের ভয়ঙ্কর রূপ দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ কারণে পুলিশ বাহিনীর বর্তমান আইজিসহ পুলিশের একটি অংশ শত চেষ্টা করেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। মূলত তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে পুলিশের অনেক সদস্য কৌশলে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কেউ অফিসিয়ালি বিষয়টি স্বীকার না করলেও এটিই বাস্তবতা। আবার বৈষম্যবিরোধী নামধারী কিছু ছাত্রও খুন-খারাবি, ছিনতাই, রাহাজানিতে জড়িয়ে পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

সারাদেশে নারীদের নিরাপত্তা, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ দাবি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গভীর রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এরই মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গায়েবানা জানাযাও পড়েছেন।

পুলিশ সদর দফতরসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগ পাওয়াদের একটি বড় অংশ এখনও পুলিশ বাহিনীতে রয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে সুবিধাভোগীদেরও একটি অংশ এখন ছদ্মবেশে সক্রিয়। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহিদুল হকের সময়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি পাওয়া অনেক পুলিশ সদস্য এখনো নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন)সহ ১৯টি ও ডিআইজি ৩৫টি পদে যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্বেও রহস্যজনক কারণে পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারণে শত প্রচেষ্টায়ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধীরা এখন যতটা সক্রিয়, পুলিশ ততটা নিস্ক্রিয়। পেশাদার পুলিশিং হচ্ছে না বলেই এমনটি হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বড় অস্বস্তি তৈরি করেছে ছিনতাই, ডাকাতিসহ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। যত্রতত্র ছিনতাই হচ্ছে। পুলিশ ও ঢাকার আদালতের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ১ নভেম্বর থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০০ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেন। এ সময় ২ জন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরো ৫০জন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রী এলাকায় কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা জুয়েলকে গুলি করে অস্ত্রধারীরা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি উত্তরা এলাকায় একটি চলন্ত বাসে অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়াবহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা শহরসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যৌথবাহিনীর কম্বাইন্ড পেট্রোলিং চলবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ.বি.এম নাজমুস সাকিব ইনকিলাবকে বলেন, সমাজে হঠাৎ করেই যখন কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়, তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, আর এ বিশৃঙ্খলার সুযোগটাই নিচ্ছে অপরাধী চক্র। গত বছরের জুলাই- আগস্টের গণআন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে পুলিশ। পুলিশের ওপর জনগণের যে আস্থা ছিলো সেটা অনেকাংশেই হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে পুলিশের মোরাল অথরিটি দুর্বল হয়ে গেছে। বর্তমানে ডেভিল হান্ট অভিযান চলছে। কিন্তু আইন-শঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বরতদের সমন্বয় করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ইনকিলাবকে বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ একটা ট্রমার মধ্যে ছিল। এখনো পুরো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই উন্নতির দিকে। ছিনতাই-ডাকাতি রোধে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

পদত্যাগ দাবির বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যর্থ’ দাবি করে রোববার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সাথে দেশের আরো বেশ কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
রাত ৩টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার পদত্যাগের দাবি তো আজই প্রথম না। তারা যে কারণে আমার পদত্যাগ দাবি করে, আমি যদি সে বিষয়গুলো উন্নতি করে দিতে পারি, তাহলে তো আর পদত্যাগের প্রশ্ন থাকছে না। যারা তার পদত্যাগ চাইছেন, তারা মূলত চাইছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন উন্নতি হয়, এ ব্যবস্থা আমি করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আরো উন্নতি হতে থাকবে।

ডাকাত আতঙ্কে ধানমন্ডিতে মসজিদে মাইকিং : রোববার রাত সাতে ৮টার দিকে ধানমন্ডির শংকর এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একদল দুর্বৃত্তদের মহড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, মহল্লায় ডাকাত ঢুকেছে। স্থানীয়রা জানান, দুর্বৃত্তদের দলটি আশপাশের দোকানগুলোতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছিল। এসময় আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোকান বন্ধ করে দেন। সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান। প্রায় ৫-১০ মিনিট অবস্থান করার পর সশস্ত্র দলটি এলাকা ত্যাগ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তবে অস্ত্রধারীরা কোথাও কোনো হামলা চালায়নি বা কাউকে আঘাত করেনি। তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করে পরে রায়ের বাজারের দিকে চলে যায়।

হাজারীবাগ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, মোহাম্মদপুরের দিক থেকে আসা ১০-১২ জন লোক আলী হোসেন স্কুলের সামনে উপস্থিত হলে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মাইকিং শুরু করেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দলটি চলে যায়। দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল এবং তারা মোহাম্মদপুর থেকে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে পরে হাজারীবাগের দিকে চলে যায়। এটি অস্ত্র প্রদর্শনের উদ্দেশে করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন : রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং রামপুরা থানা স্বর্ণ শিল্পালয় মালিক সমিতির সদস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে স্বর্ণ ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। সোমবার ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থলে প্রথমে মানববন্ধন করেন তারা। পরে বনশ্রীর মূল সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে তাদের অনুরোধ করে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

সায়েদাবাদে তরুণকে ডেকে নিয়ে কোপালো দুর্বৃত্তরা : রাজধানীর সায়েদাবাদের সামীবাগ এলাকায় এক তরুণকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত তরুণের নাম মো. শামীম (২৫)। তিনি সায়েদাবাদ টার্মিনালে কাজ করেন এবং সেখানেই থাকেন। গতকাল সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক এ তথ্য জানিয়েছেন।

শামীম জানান, সোমবার ভোরে কয়েকজন তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। হামলার পর তিনি দৌড়ে টার্মিনাল এলাকায় এসে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ৭১টি ডাকাতি, ১৭১টি ছিনতাই, ২৯৪টি খুন, ১০৫টি অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মাসে রাজধানীতে ৮টি ডাকাতি, ৫৪টি ছিনতাই, ৩৬টি খুন এবং ৩১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২০২৪ সালে সারা দেশে ৪৯০টি ডাকাতি, ১৪১২টি ছিনতাই, ৩৪৩২টি খুন এবং ৬৪২টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। গত এক বছরে ডিএমপিতে ৪১টি ডাকাতি, ২৪৮টি ছিনতাই, ৩৩৯টি খুন ও ১৩২টি অপহরণের মামলা রেকর্ড হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধের মাত্রা মূলত পরিসংখ্যানের কয়েকগুণ বেশি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীদের দৌরাত্ম্য যতটা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাগজে-কলমে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও মূলত সক্রিয় নয় পুলিশ। এখনো আগের মতোই চলছে পুলিশি তৎপরতা। ঘুষ বাণিজ্য, মামলায় হয়রানিসহ নানা অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, পুলিশের দুর্বলতা কোথায় তা পুলিশকেই চিহ্নিত করে প্রকাশ করতে হবে। তারা যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, তাও জনগণকে জানিয়ে দিতে হবে। অপারেশন ডেভিল হান্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো দল-মত নয়, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে পারলে এ অভিযানের সফলতা আসবে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, মহাসড়কে যানবাহনে ডাকাতি রুখতে আমরা বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছি। দূরপাল্লার কোনো গাড়ি পথে থামিয়ে যাত্রী ওঠাতে পারবে না। এছাড়া প্রত্যেক গাড়িতে যাত্রীদের ওঠানোর সময় বাধ্যতামূলক ভিডিও করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সীমিত জনবল। তাই মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে টহল বাড়িয়েছি।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড.এএসএম আমানুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, একটি গণবিপ্লবের পরে পৃথিবীর সব দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার নজির রয়েছে। আমাদের ২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৫ আগস্টের পরে খুন-জ্বালাও ও রাহাজানির আশঙ্কার তুলনায় পরিস্থিতি তেমনটি ঘটেনি। মানুষ পরস্পর সহায়ক এবং আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কারণে পরিস্থিতি অনুকুলে ছিলো। তবে এখন পরিস্থিতির ধরনটা আলাদা। অপরাধ যা হচ্ছে তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দূর্বলতার সুযোগ নিয়েই হচ্ছে। এ মুহুর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের মানসিক শক্তি বাড়ানো দরকার। তাহলেই এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব।