Image description
♦ ইউরোপিয়ান মানের ১৫ রাইড নিয়ে চালু হচ্ছে রাজধানীর শিশুপার্ক ♦ থাকছে ফুড কোর্ট ♦ গ্যালারিসহ পুকুর ♦ চলছে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ

শাহবাগের কেন্দ্রীয় শিশুপার্কটি ছয় বছর ধরে বন্ধ। ঢাকা ও তার বাইরে থেকে আগত দর্শনার্থীরা দীর্ঘ সময় শিশুপার্কে যেতে পারছে না। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের যেখানে কোনো ব্যবস্থাই নেই সেখানে এতগুলো বছর পার্কটি বন্ধ থাকায় হতাশ অভিভাবকরা। আশার কথা হলো- পার্কটি নতুন আঙ্গিকে ইউরোপিয়ান মানের ১৫টি রাইড নিয়ে আবারও শিশু-কিশোরদের জন্য চালু হতে যাচ্ছে।

বর্তমানে পার্কটির ভিতর অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই পার্কের রাইড ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পার্কটির দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গত মঙ্গলবার বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে সব কাজ শেষে শিশুপার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুনভাবে শিশুপার্কে মোট ১৫টি রাইড স্থাপন করা হবে। এ জন্য ইউরোপের জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ইতালির রাইড সরবরাহকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। বিভিন্ন রাইডের মধ্যে আছে- ডিস্ক’ ও মেগা, সুপার এয়ার রেইস, টি কাপ, ফ্লাইং কারায়ুসেলস, গ্যালিয়ন, ১২ডি থিয়েটার, মাইন কোস্টার, ক্লাইম্বিং কার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইকস, ট্রামোলাইন বেড, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি গো রাউন্ড এবং ওয়াটার ম্যানিয়া। প্রসঙ্গত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ছয় বছর আগে শিশু পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে পার্কের রাইডসহ যন্ত্রপাতি সরাতে বলা হয়। মন্ত্রণালয় ৭৮ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে পার্কের নতুন রাইড স্থাপন ও উন্নয়নের জন্য দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শিশুপার্কের জন্য এই পরিমাণ অর্থ অপর্যাপ্ত ছিল। এর মধ্যে তিনবার টেন্ডারও করা হয়। চীনের মেশিনের জন্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি অর্থের টেন্ডার হয়। তবে সে সময় চীনের মেশিন ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনাগ্রহ দেখান। এরপর টেন্ডারে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী আবারও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে টাকা বরাদ্দের জন্য ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ পার্কটির জন্য ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে, যা ২০২৩ সালের আগস্টে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন  দেওয়া হয়। সে সময় ঠিক করা হয় প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি আসবে ইউরোপ থেকে। এর আগে পুরোনো পার্কের যন্ত্রপাতি ও রাইড এসেছিল জাপান থেকে। ৬০৩ কোটি টাকার মধ্যে ৪৪১ কোটি টাকা শুধু ১৫টি রাইড কেনার জন্য ধরা হয়েছে। বাকি অর্থ ওয়াকওয়ে, বাগান, অফিস বিল্ডিং, লাইটিংসহ অন্য পূর্তকাজ করার জন্য ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্প ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ পেয়েছেন ২৮ কোটি টাকা। নিয়োগকৃত কনসালট্যান্ট পার্কে কাজ শুরু করেছে। পার্কের নকশা অনুযায়ী ড্রেনেজ, ব্যাংক ভবন, গ্যালারিসহ কিছু অবকাঠামোগত কাজ চলছে। শিশুপার্ক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এতে আরও থাকছে নামাজের সুবিধা, পার্কিং ও ব্যাংকিং সুবিধা,  ওকয়ার সেন্টার, ডিজিটাল এলইডি স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেম, গ্যালারি সংবলিত পুকুর, ফুডকোট ইত্যাদি। পার্কে থ্রিডি এনিমেশন থাকবে। পার্কে আসা দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকবে। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকবে। সূত্র জানায়, শাহবাগ থানা স্থানান্তর নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। শাহবাগ থানা আগের জায়গাতেই থাকবে। এটি হবে বহুতল ভবন। আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যে প্রকল্পের কাজ তার মূল কাঠামো নির্মাণের কাজ এখন শেষের পথে।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আনিছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্ক তৈরির সময় ইউরোপের কিছু বৈশিষ্ট্য রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের কাজ এখন চলছে। রাইড ক্রয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি রাইডগুলোর মূল্য নির্ধারণ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। এই মূল্য পুনর্নির্ধারণ হলেই ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ টেন্ডারে চলে যাবে। এটি করতে দুুই মাস সময় লাগবে। সব মিলিয়ে রাইড ক্রয়ের প্রক্রিয়াসহ এগুলো লাগাতে দেড় বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে গোটা পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শিশুপার্কটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। 

২০২১ সালে জিয়া শিশু পার্কের নাম বদলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতনিক পট পরিবর্তনের কারণে এখন এর নাম আবার পরিবর্তন হবে কি না এ প্রশ্নে আনিছুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত নাম পরিবর্তন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে আসেনি। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে  সেটিই চূড়ান্ত হবে।