
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমিয়ে আনছে সরকার। এজন্য আমানতের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে ঋণের সুদহারও বাড়ানো হয়েছে। যদিও ঋণের সুদ বাড়লে বিনিয়োগের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে সুদহার বাড়ানোর ফলে (জুলাই-ডিসেম্বর) ছয় মাসে ব্যাংক খাতে ৩৪ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতির চাপও কিছুটা কমেছে। আগামী মার্চের মধ্যে বাজার থেকে আরও অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য মার্চজুড়ে রমজান ও ঈদুল ফিতরের কারণে সেটা কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে জানুয়ারি, ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যম্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে, যা ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে দুই মাস ধরে বাজারে সবজির দামে নিম্নগতি থাকায় সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। এবং সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাজারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আনাটা খুবই কঠিন বলে মনে করেন তিনি। এদিকে, নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের প্রস্তুতি শুরু করেছে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে বাজেটে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানমুখী উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। এ ছাড়া আসছে এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট করবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ সম্মেলন কেন্দ্র করে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগে আর্থিক খাতের সংস্কারগুলো এগিয়ে নিতে পারলে পরবর্তী সরকার এসে একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশে দেশ পরিচালনায় মনোনিবেশ করতে পারবে বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হলো ব্যাংক ও রাজস্ব। তবে এনবিআরের কার্যকর সংস্কার না হলে ব্যাংক খাত এগোবে না। একইসঙ্গে শুধু সুদহার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো যাবে না।’ এদিকে, অর্থ বিভাগ সূত্র জানান, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও তা আগাম বাজেটেয় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এজন্য বাজেটে কিছু নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে নিত্যপণ্য থেকে তা প্রত্যাহারও করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও সংকুচিত হতে পারে। এজন্য মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।