
৫ আগস্টের আগে গণভবনে কড়া পাহারায় সপরিবার থাকতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটি এখন একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। পরিত্যক্ত বাড়িটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কাগজপত্রের মধ্যে বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার নথি পাওয়া গেছে। সেই নথিতে বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে এটি কোন গোয়েন্দা সংস্থার তা পরিত্যক্ত কাগজ দেখে বোঝা যাচ্ছে না।
নথিতে বলা হয়েছে, ঘটনা সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। সেনা মোতায়েন, বিদ্রোহীদের গুলি এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টারে লেগেছিল তা উল্লেখ করা হয়নি। সেনা মোতায়েনের ফলে একজন সৈনিক বিডিআরের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং একজন আহত হয়েছে সে কথা কেন উল্লেখ করা হলো না? বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে সৈনিক মৃত্যু বরণ করল অথচ এ কথা চেপে যাওয়ার রহস্য কী? সৈনিকের জীবনে কি কোনো মূল্য নাই? তদন্ত কর্মকর্তারা এই অবদানের স্বীকৃতি কেন দিলেন তা সঠিক বোধগম্য নয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, বিদ্রোহ চলাকালীন ‘সময়গুলো’ সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয় নাই। সেনাবাহিনীকে দৃষ্টি সীমার বাইরে যেতে বলা হয়েছিল তখনই, যখন বিডিআর অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছিল। তখন আর সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। সঠিক সময় ও তথ্য দেওয়া হয় নাই। উদ্দেশ্যটা কী? আর পলায়নরত বিডিআরকে র্যাবই গ্রেপ্তার করেছিল।
বিডিআর বিদ্রোহের দিন মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ওই নথিতে বলা হয়, কোনো কোনো মিডিয়া উৎসাহমূলক সংবাদ পরিবেশন করেছে এবং এদের মালিক কারা? তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী? এই প্রচারের উদ্দেশ্য কী ছিল? তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া মিছিলকারীদেও বিষয় ও বিদ্যুতের বিষয়েও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ সংযোগ কখনই বিচ্ছিন্ন করা হয় নাই। ভিতরের রাস্তার বিদ্যুৎ বিডিআর সদস্যরাই বন্ধ করে দেয়, তার তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এ কথা কেন সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয় নাই?
ট্রলারে করে বিডিআর সদস্যদের পালানোর বিষয়ে বলা হয়েছে, ট্রলারে করে বিডিআর সদস্যদের পার করে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ করা হলো না কেন? বিডিআর বিদ্রোহে নেপথ্যে কারা, এ সম্পর্কে ওই নথিতে বলা হয়, বহু নাম জোগার করে তদন্ত কমিটির হাতে দেওয়া সত্ত্বেও সেগুলো চেপে যাওয়া হলো কেন? লেদার লিটনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সেখানে মামা লিটন, জামাই লিটন নামে আরও দুই লিটনের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেপ্তার করা হয় নাই কেন?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে কোনো একটা রাজনৈতিক দলকে বাঁচাবার জন্য এসব তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে। অথবা বিদ্রোহ সফল হলে ওই দলটিই লাভবান হতো। আরও উল্লেখ করা হয়, মঞ্জু, কচি, ঠিকাদার খোকন, সিয়ামের মালিক ইব্রাহিম, কে জি করিম, সিরাজুল ইসলাম কান্নু, পুরান ঢাকার লালবাগের জয়নাল ফার্মেসির মালিক ডা. জয়নাল, আরজু মিয়া, রক্সি খোকন, মোটা শাহিন ওরফে বটু শাহিন, শামিম, মামা লিটন, জামাই লিটন, শিবলু, আইয়ুব, সুমন, নাজিউদ্দীন, গাল কাটা আবু, পলাশ, জাহাঙ্গীর কসাইয়ের ছেলে সুমন, রহিম, জসিম, মামুন, আবেদসহ বহু নাম তখন এসেছে। যারা মিছিল করেছে, রুটি-কলা খেতে দিয়েছে।
নথিতে বলা হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৫টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে। সকাল ৬টায় মতিয়া চৌধুরীর উদ্ধার কাজ শুরু করার কথা কিন্তু তখন বিডিআর অস্ত্র সমর্পণ বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে ভিতরে যেতে দেয় না- এরই বা কারণ কী? কেন এই উদ্ধার কাজ সঠিকভাবে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় নাই? নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে সঠিক তথ্য প্রচার করা উচিত। বিডিআরের ডিজির স্ত্রী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল কি না তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে উল্লেখ করা উচিত। আর সময় সম্পর্কে রহস্যজনক তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে সময় উল্লেখ আছে যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়নি, সে সম্পর্কে নথিতে বলা হয়, পিলখানায় কত অস্ত্র এবং কী কী ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ ছিল তার তালিকা। ঢাকার বাইরে কত গোলা বারুদ ও অস্ত্র আছে। কত পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ হারিয়ে গেছে এবং কত উদ্ধার হয়েছে। বিডিআর রিক্রুটমেন্ট (বিদ্রোহীরা) কত সাল থেকে করা হয়েছিল তা উল্লেখ থাকা দরকার। ডিএডি তৌহিদ গং সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল। ভিডিও ফুটেজ থেকেও অনেক তথ্য ও সময়গুলো সংগ্রহ করা উচিত ছিল। পিলখানায় কতজন কর্মরত ছিল তার সঠিক তথ্য কেন প্রচার করা হয় নাই? কেন এক দিন ৭৩ জন মিসিং (নিখোঁজ) এবং পরের দিন ছয়জন মিসিং বলা হলো তারও ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন ছিল।