Image description

রাজধানীর বনশ্রীতে রবিবার রাতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছে পুলিশ। দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে ব্যবসায়ীর ওপর হামলা হয়। পুলিশের ধারণা, এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আগে থেকেই ওই ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করছিল দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ছিনতাইয়ের শিকার আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছিনতাই ও হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে রাজধানীবাসী। বনশ্রীসহ সর্বত্র এ ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, গুলি করে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে গেট খোলার কথা বললেও তিনি খোলেননি। নিরাপত্তাকর্মী কেন গেট খোলেননি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জুয়েলারি মালিকরা।

গতকাল ঢামেকে স্বর্ণালংকার লুট করার ঘটনার এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আনোয়ার। তিনি জানান, রবিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে দোকান বন্ধ করে বনশ্রীর ডি ব্লকে বাসায় ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্বজনরা রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

তিনি বলেন, ‘বাসার গেটে মোটরসাইকেল রাখামাত্র তিনটি মোটরসাইকেলযোগে সাত ব্যক্তি এসে আমাকে গুলি করে। তখন আমি দৌড়াতে থাকি। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে সোনাসহ টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। দুই ঊরুতে দুটি ও অ-কোষের নিচে একটি গুলি লাগে। হাত, পা ও ঊরুতেও সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করে।’

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, আনোয়ারকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়ে এবং ছুরিকাঘাত করে। তাঁর শরীরে গুলি ও কোপের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা চিহ্নিত করা যায়নি। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবারকে থানায় আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা থানায় এসে অভিযোগ করলে মামলা হবে। জানা গেছে, হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ভুক্তভোগীর বাসার সামনেই ঘটেছে। ওই ব্যবসায়ী সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। 

বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুরো এলাকাবাসী। রবিবার রাত থেকেই স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে রাতভর সম্মিলিত পাহারার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলছেন, সরকার যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই নিতে হবে। তাই রাত থেকে সবাই মিলে ব্লকভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সম্মিলিত পাহারা দেওয়ার বিষয়ে রবিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের তো প্রতিদিনই রাত জাগা হয়। একটা বড় টিম হয়ে কাজ করলে এবং পাঁচটা বাইক নিয়ে অন্তত ১০ জন মানুষ একসঙ্গে বনশ্রীতে সারা রাত ঘুরলে অনেকটুকু বিপদ কাটবে।’ ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন করেছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। পরে তাঁরা বনশ্রীর মূল সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে অনুরোধ করে রাস্তা থেকে তাঁদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বিক্ষুব্ধ জুয়েলারি মালিক সমিতির দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধার ও জুয়েলারি ব্যবসায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তাঁদের। মানববন্ধন থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমরা সব সময় শঙ্কায় থাকি। যেভাবে আমাদের ব্যবসায়ীদের ওপর হুমকি জুলুম নেমে আসছে, তা আগে কখনো এভাবে ঘটতে দেখিনি।’ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, ‘স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট নেয় সরকার। কিন্তু নিরাপত্তা কোথায়? আমরা চাই সরকার দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক, স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের ওপর গুলি, হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের যেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়।’ তাঁরা বলেন, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও রামপুরা থানা স্বর্ণ শিল্পালয় মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন। তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন সন্ত্রাসীরা তাঁর কাছে চাঁদা চায়। বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিছু টাকাও তিনি দিয়েছিলেন।