
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টদের প্রায় আড়াই হাজার সদস্যের প্রতিষ্ঠান ‘চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্বাচনে ৯ ফেব্রুয়ারি ভোট ছাড়াই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মিলেমিশে সংগঠনটির নেতৃত্ব দখলে নিয়েছে। পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়িক সংগঠন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনেও বিনা ভোটে ব্যবসায়ী নেতা হয়েছেন ৪১ জন। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোয় বিনা ভোটের এসব নির্বাচন নিয়ে উষ্মা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই।
গত ৩০ নভেম্বর খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে গভীর রাতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে আটকে গেছে নির্বাচনের ফল। আড়াই মাস ধরে চলছে এ দশা। কিন্তু এর সুরাহার বিষয়ে কেউ গা করছেন না।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন
আওয়ামী লীগ আমলে ভোট দিতে পারেননি দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী ভোটাররা। বৃহৎ এই পাইকারি বাজারের ভোটার সংখ্যা ৬৩০ জন। ৫ আগস্ট সরকার বিদায় নিলেও এবারও ভোটবিহীন নির্বাচনে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের। এবার সংগঠনটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সমঝোতায় নেতৃত্বে এসেছেন ৪১ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সভাপতি মনোনীত করা হয় সাবেক চেম্বার সভাপতি ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমকে। সাধারণ সম্পাদক রাখা হয় সৈয়দ ছগীর আহমেদকে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই দুই পদে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাহবুবুল আলম চার দফায় চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি থাকা সত্ত্বেও খাতুনগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদ ছাড়েননি।
জানা গেছে, ১২ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চূড়ান্ত নির্বাচিত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। সভাপতি পদে মীর গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আমিনুর রহমানসহ ৪১ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর নতুন নেতৃত্ব এসেছে, এতে আমরা খুশি। কিন্তু বিনা ভোটে নেতৃত্ব নির্ধারিত হওয়ায় খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এ ২৯টি পদের মধ্যে বিএনপি ১৩টি, আওয়ামী লীগ ১০টিসহ অন্যরা ৬টি পদ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরেও কখনো সমঝোতার নির্বাচন হয়নি এই সংগঠনে। ভোটাররা জানান, ৫০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিনা ভোটে পদ ভাগাভাগির ঘটনা ঘটল।
সংগঠনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভোটার রয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। সে দিনই ২৯টি পদের সব প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলহাজ মোহাম্মদ শরিফ।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্র বলেছে, বিনা ভোটে সভাপতি হয়েছেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ এস এম সাইফুল আলম। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিএনপির সমর্থক মো. শওকত আলী।তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলেমিশে কমিটি গঠনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি এ এস এম সাইফুল আলম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চারটি ট্রেড বডির সঙ্গে আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য কমিটি করা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করিনি।’
খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নির্বাচন
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নির্বাচন হয় ৩০ নভেম্বর। তবে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থগিত রয়েছে ভোটের ফল। এই অবস্থায় করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে জেলা প্রশাসন, শ্রম অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থায় চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউছুপ খান মাহাবুব বলেন, ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত সবকিছু সুন্দরভাবেই চলছিল। কিন্তু ভোট গণনার শেষ দিকে গভীর রাতে সভাপতি প্রার্থী এস এম আবু মনসুর তাঁর দলবল নিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালান।