![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/5bb19a002c02e259552d5df8166dacd6.jpg)
‘সোনালী কাবিন’ খ্যাত কবি আল মাহমুদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ ফেব্রুয়ারি। যে কজন কালজয়ী প্রতিভা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনাম-সুখ্যাতি বাড়িয়েছেন, কবি আল মাহমুদ তাদের অন্যতম। তিনি একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। সেই কবির মৃত্যুর ছয় বছরেই তার শেষ ঠিকানা কবরটিও অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে একটি নামফলক ছাড়া আর কিছুই নেই। আল মাহমুদের কবরের ওপর দাফন করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। কবরের ওপর একাধিক কবর। ডানে-বাঁয়ে কবর। কবরটি চিহ্নিতকরণ করে সংরক্ষণসহ দ্রুত পাকা করার দাবি জানিয়েছেন কবিভক্তরা। কবিকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদানসহ তার নামে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন।
শনিবার বিকালে কবি আল মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সহচর, নব্বইয়ের দশকের কবি, আল মাহমুদ একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মহিবুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের দক্ষিণ মৌরাইল কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এখানে কবি আল মাহমুদের কবরের মাথায় একটি লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে বানানো শুধু নামফলকটি রয়েছে। এ সময় কবি মহিবুর রহিম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরব বাংলা সাহিত্যের একজন কালজয়ী লেখক কবি আল মাহমুদ মারা যাওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জায়গা না দেওয়ায় দাফন করা যায়নি। পরে কবির পৈতৃক ভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইল গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। কবি ড. মাহবুব হাসান, কবি আবদুল হাই শিকদারসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দেশের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যক, সংস্কৃতিকর্মী এবং সাধারণ মানুষ কবি আল মাহমুদের কবর দেখতে এসেছেন। তারাসহ প্রত্যেকেই দাবি করেছেন, কবির কবরটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ও সারা দেশের কবি-সাহিত্যিকরা এসে তার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। কবি আল মাহমুদের কবরের ওপর আরও কবর দেওয়ায় সারা দেশের কবি-সাহিত্যিকরা ব্যথিত হয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন। তারা কবরটিকে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন।
গেল বছর কবি আল মাহমুদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইলের গোরস্থানে কবির কবর জিয়ারত করতে এসেছিলেন দেশের অন্যতম কবি, বিশিষ্ট গবেষক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার। সঙ্গে ছিলেন কবি আল মাহমুদ একাডেমির পরিচালক কবি মহিবুর রহিম এবং কবি ও আল মাহমুদ গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন। কবি আল মাহমুদের কবরটির অবস্থা দেখে সেদিন কবি আবদুল হাই শিকদার তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছিলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত অবহেলা, উদাসীনতা, অনাদর এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে মৃত্যুর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে হারিয়ে গেছে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের কবর। এখন কবর বলতে আছে শুধু একটি নামফলক। আল মাহমুদের কবরের উপর দাফন করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। কবরের উপর একাধিক কবর। ডাইনে-বাঁয়ে কবর।’ সেই দিন তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আহা এ রকম নিষ্ঠুরতা কি আল মাহমুদের প্রাপ্য ছিল!’
কবি আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও তাকে কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কবিকে স্বাধীনতা পদক প্রদানসহ তার নামে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কবি আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ। সংগঠনটি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আল মাহমুদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সংগঠনের সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত এতে সভাপতিত্ব করেন। এসময় জানানো হয়, কবি আল মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি স্মরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী দিনে প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, গবেষক ও বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে ‘সোনালী কাবিন পদক’ প্রদান করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক এমএইচ শাহ আলম বলেন, কবি আল মাহমুদ প্রেম ও দ্রোহের কবি। তিনি অনেক কবিতা, উপন্যাস লিখেছেন। তার কবরটি সংরক্ষণ করে কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এই প্রতিভাবান কবি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। পিতা মীর আবদুর রব। হাইস্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। পারিবারিক জীবনে তিনি ছয় ছেলে ও দুই কন্যাসন্তানের জনক। কবির বড় ছেলেও মারা গেছেন।
১৯৬৩ সালে তার বই ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৭৩), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৭৬) ইত্যাদি কবিতার বই তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। পাশাপাশি তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধও লিখেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধপরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে সমালোচনামূলক লেখালেখির জন্য তাকে এক বছরের জন্য কারাবরণ করতে হয়।