জাতিসংঘ স্বীকৃত খুনি, লুটেরা শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপি ঘরানার আইনজীবীরা। ‘পেশাদারিত্ব’র দোহাই দিয়ে ঘৃণ্য অপরাধীদের হয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন তারা। ছবক দিচ্ছেন ‘অপরাধীদের আইনি সহায়তা লাভের সাংবিধানিক অধিকার’ বিষয়ে। ছুড়ে ফেলেছেন দেশ, জাতি এমনকি রাজনৈতিক আদর্শের গাউন। ‘ফি’র মোড়কে আঁকড়ে ধরছেন খুনি ও লুটেরা মক্কেলদের লুণ্ঠিত অর্থ। আইনজীবী সমিতিতে তারা আবার ‘নামকরা আইনজীবী’ হিসেবেও পরিচিত। বিষয়টি এমন যে, আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে ধ্যানমগ্ন এক ঠ্যাঙে বকের মতোই তারা ওঁৎপেতে বসেছিলেন এত দিন। শিকারের মোক্ষম মওকাটি এনে দিয়েছে আগস্ট বিপ্লব। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে জীবন ও রক্ত দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর আয়-রোজগারে ফুলে-ফেঁপে ঢোল হচ্ছেন এক শ্রেণির আইনজীবী। হাসিনার নৃশংসতা ও লুটপাটের ক্ষত সাধারণ মানুষের মনে দগদগে ঘা হয়ে জ্বলছে। অথচ ‘প্রথম শ্রেণির নাগরিক’ হিসেবে পরিচিতি আইনজীবী কমিউনিটি এখন আর দুর্নীতির কথা বলছে না। বলছেন না দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের অপসারণের কথা। অদৃশ্য ইশারায় সংক্ষিপ্ত হয়ে এসেছে হাসিনার করুণাপুষ্ট দলকানা, দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের তালিকাও। যে তালিকাটি প্রণয়ন করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত ঘরানার এই আইনজীবীরাই। হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের স্টেকহোল্ডারদের ‘আইনি সেবা’ দিতে এসব আইনজীবী এতটাই বেপরোয়া যে, তারা বিচারকের ওপর চড়াও হতে দ্বিধা করছেন না। চাপ সৃষ্টি করছেন। বেঞ্চ থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন। জামিন না দেয়ার ‘অপরাধে’ বিচারকের বিচার চাইছেন। এক শ্রেণির আইনজীবীর এমন কদর্য ‘পেশাদারিত্বে’ স্তম্ভিত, হতবিহ্বল খোদ বিচারাঙ্গনের মানুষজন। তারা ফ্ল্যাশব্যাকে তুলনা করতে চাইছেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী জমানাকে।
ভারত সমর্থিত ওয়ান-ইলেভন উত্তর সময়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আ’লীগ। ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ’র ধুয়া তুলে প্রতিপক্ষীয় রাজনীতিক হত্যায় বিচারিক আয়োজন করে তারা। বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হয় বিএনপি নেতা, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম, জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ অনেককে। তখন ভুল করেও কোনো আওয়ামী ঘরানার আইনজীবী তাদের পক্ষে দাঁড়াননি। আওয়ামী দলীয় আদর্শের প্রতি তারা এতটাই আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন যে, ডাকসাইটে কোনো আইনজীবী তো ননই-শিক্ষানবিশ কোনো আওয়ামী আইনজীবীও কথিত ‘যুদ্ধাপরাধী’দের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে আসেননি। বরং ব্যারিস্টার সুমনের মতো বটতলার উকিলও তখন ছিলেন প্রসিকিউশনের পক্ষে। অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, গোলাম আরিফ টিপু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ওজায়ের ফারুকদের তখন ‘পেশাদারিত্ব’ ছোটেনি। কারণ সেটি ছিল এসব আওয়ামী আইনজীবীদের নীতিগত অবস্থান। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। একইভাবে কথিত ‘যুদ্ধাপরাধী’দের মৃত্যুদ- কার্যকরের পর শেখ হাসিনা শতভাগ মনযোগী হন বিএনপি দমনে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে শহীদ প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমানের পরিবারের দিকে চোখ পড়ে হাসিনার। ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎ’ করেছেন মর্মে বয়ান তৈরি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। গ্যাটকো, নাইকো, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মতো গাঁজাখুরি মামলার ‘বিচারে’ মরিয়া হয়ে ওঠে হাসিনা সরকার। শহীদ জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধেও তোলা হয় অর্থ পাচারের কাল্পনিক অভিযোগ। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ১৮ বছর ধরে চলা বিচারিক নিপীড়নে পাশে ছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাই। একজন আওয়ামী আইনজীবীকেও পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এমনকি বিএনপির প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জামিনের পক্ষেও কোনো আওয়ামী আইনজীবীকে আদালতে লড়তে দেখা যায়নি। অথচ মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার বিচার, দুর্নীতির অভিযোগে হাসিনা, তার দোসরদের ‘ন্যায়বিচার’ পাইয়ে দিতে বিএনপি ঘরানার আইনজীবীরা যারপরনাই ‘পেশাদার’ হয়ে উঠেছেন। তারা ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা হাসিনার দোসরদের পক্ষে কোমর বেঁধে নেমেছেন। নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক পরিচয়, আদর্শ, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতাÑ সবই মক্কেলদের পয়সার কাছে তুচ্ছ।
গত ১১ জানুয়ারি এক ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল চলতি বছর অক্টোবরের মধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া তিন-চারটি মামলার রায় হবেÑ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তার আশাবাদ হয়তো দেশের মানুষ এবং জুলাই-আগস্টের ভিকটিম পরিবারগুলোকে আশাবাদী করবে। এই আশাবাদ ব্যক্তের কারণটিও আইন উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন। এটি হচ্ছে, তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিমের কাজের গতি-প্রকৃতি ও প্রস্তুতি। যে কারণে এক বছরের ভেতর মামলার রায় আসবে বলে তিনি আশা করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আইন উপদেষ্টা কি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গতি-প্রকৃতি ও প্রস্তুতির কথা জানেন? আসামিপক্ষ কী ধরনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে জানেন সেটি?
বিচারাঙ্গনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে আসছেন ‘আওয়ামী বিরোধী’, ‘বিএনপিপন্থী’ আইনজীবীরা। তারাই ফ্যাসিস্ট ও লুটেরাদের ‘আইনি সুরক্ষা’ প্রদানের ঠিকাদারি নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি জামিনের ঘটনায় এ তথ্যের যথার্থতাও মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফোকলা করে দেয়া ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের স্ত্রী-কন্যাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং আইনজীবীদের শীর্ষ নেতা। জানা গেছে, এস কে সুরের পক্ষেও এ আইনজীবী-বিএনপি নেতা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
এনবিআরের সাবেক মেম্বার, বহুল বিতর্কিত ছাগলকা-ের মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রীর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার আইনজীবী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর তিনি এখন সবচেয়ে ‘দামি আইনজীবী’। জানা গেছে, সন্ধ্যার পর তার চেম্বারে বড় বড় দুর্নীতি মামলার আসামিদের দামি গাড়ির লাইন পড়ে যায়। হাসিনার আমলে প্রকল্পের নামে যত লুটপাট হয়েছে সে সব ঘটনায় মামলা করছে দুদক। এসব মামলায় হাসিনা ছাড়াও আসামি হচ্ছেন তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশ্বস্ত আমলা, প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলী, ঠিকাদাররা। দুর্নীতি মামলার এই আসামিদের নির্ভরযোগ্য আইনজীবী হয়ে উঠেছেন বিএনপিপন্থী অনেক আইনজীবী। ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পালিয়ে যান সুপ্রিম কোর্ট বারের অনেক আওয়ামী আইনজীবী। কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন। তাদের চেম্বারের বড় বড় (অর্থনৈতিক মানদ-ে) ক্লায়েন্ট চলে আসছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের কাছে।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকা-ে অনেক স্থানীয় আ’লীগ নেতা, পুলিশ কর্মকর্তারা আসামি হয়েছেন। তাদের জামিনের জন্য আদালতে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাই। ছাত্র-জনতা হত্যা এবং দুর্নীতির মামলায় পেশাদারিত্বের কথা বলে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট দোসরদের আইনি সহায়তা দিচ্ছেন তারা।
হাসিনার মাফিয়াযুগে কাস্টমসে পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অপু চাকলাদার-দীপু চাকলাদার। এই দুই সহোদর অভিনব কায়দায় কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে হাজার হাজার কনটেইনার খালাস করেছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন ধারায় অন্তত ২২টি মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান দীপু ওরফে দীপু চাকলাদার এখন পলাতক। কারাগারে রয়েছেন হাবিবুর রহমান অপু। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ‘সব ম্যানেজ’ করে আসামিকে জামিনে ছাড়ানোর ‘কন্ট্যাক্ট’ নেন ঢাকা বারের বিএনপিপন্থী কয়েক আইনজীবী। জামিন শুনানি শেষে ঢাকা সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূরে আলম আবেদন নামঞ্জুর করেন। এতে ওই বিচারকের প্রতি যারপরনাই ক্ষিপ্ত হন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তিনি সতীর্থ আইনজীবীদের নিয়ে রীতিমতো চড়াও হন বিচারকের ওপর। বিচারককে আদালত থেকে নেমে যেতে বলেন। সর্বশেষ ওই বিচারককে প্রত্যাহারের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লিখেছেন ঢাকা বারের অ্যাডহক কমিটির মহাসচিব। বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনও কড়া ভাষায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। একজন চিহ্নিত অপরাধীকে ছাড়াতে পেশাদারিত্বের নামে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আইনজীবীরা। ৯ থেকে গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে। একজন আসামির জামিন প্রশ্নে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে বন্ধ রয়েছে ট্রাইব্যুনালে চলমান অন্য মামলার বিচার।
‘বিএনপিপন্থী’ হিসেবে পরিচিত আইনজীবীদের আদর্শ ও নৈতিকতা-বিবর্জিত ‘আইনি সেবা’ ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা হাসিনা রেজিমের বিচার বিলম্বিত করবে মর্মে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিচারাঙ্গনের মানুষ। এ ছাড়া আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে জামিন নেয়ার চেষ্টা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করবে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন তারা।
ফ্যাসিস্ট এবং লুটেরা হাসিনা সরকারের দোসরদের পক্ষে আইনি লড়াই করা বিএনপির দলীয় পরিচয়ধারী আইনজীবীদের ‘পেশাদারিত্ব’ নাকি রাজনৈতিক আদর্শচ্যুতি? এ প্রশ্ন করা হয় বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, যিনি আইনজীবী হিসেবে বিচারপ্রার্থীর পক্ষে আদালতে দাঁড়ান তিনি তখন দলকে রিপ্রেজেন্ট করেন না। তিনি আইনজীবী হিসেবেই দাঁড়ান। বিচারপ্রার্থীর সাংবিধানিক অধিকার ও আইনি স্বার্থ রক্ষা করাই একজন আইনজীবীর পেশাদারিত্ব। তবে হ্যাঁ, যে আইনজীবীরা দলীয় পরিচয় ধারণ করেন তাদের উচিত মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকা। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা কোনা বিএনপি নেতার পক্ষে ভুলক্রমেও কোনো আইনজীবী আইনি লড়াই চালিয়েছিল কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে বিএনপির আইন-বিষয়ক সম্পাদক বলেন, এটি আওয়ামী লীগের প্রতি ওই আইনজীবীদের আনুগত্য ও রাজনৈতিক আদর্শের দৃঢ়তা। এখানে দুটি বিষয়। রাজনীতি ও পেশাদারিত্ব। যাদের দুটি বজায় রাখতে চান এবং যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তারা নীতিগতভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদের আইনজীবী হতে পারেন না। দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট থাকা উচিত।
এদিকে বড় অঙ্কের ফির বিনিময়ে বিচারপ্রার্থীর পক্ষে বিচারকের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা। সাইবার ট্রাইব্যুনালের ঘটনা উল্লেখ করে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, অ্যাথিকস বা বার কাউন্সিল অ্যাক্ট অনুযায়ী, একজন আইনজীবী বাদী-বিবাদী যে কারো পক্ষাবলম্বন করতে পারেন। নীতিগতভাবে আইনজীবীর করণীয় ক্লায়েন্টের পক্ষে আইনি লড়াই করা। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আসামিকে কারামুক্ত করতেই হবে। কিংবা বিচারককে জামিন প্রদানে বাধ্য করা যাবে। আইন উপদেষ্টা যেখানে বিচারকদের উদ্দেশে বলছেন, হুটহাট করে জামিন দেবেন না। সেখানে আইন উপদেষ্টার নাকের ডগায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারককে চাপ দেয়া হচ্ছে জামিন দেয়ার জন্য। আদালতের বিচার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। যে আইনজীবীরা এটি করেছেন তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এটি প্রধান বিচারপতি করতে পারেন। বার কাউন্সিল করতে পারে। আইন উপদেষ্টাও ব্যবস্থা নিতে পারেন। জামিন দেয়া কিংবা না দেয়া দুটোই আদালত করতে পারে। আদালত ভুল করবে এবং সেই ভুল নির্ভয়ে করবে। ভুল শোধরানোর জন্য উপরিস্থ আদালত রয়েছে। তিনি বলেন, এই উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রশ্রয় দেয়া হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন বিফলে যাবে। সংস্কারের পক্ষে এত যে কথাবার্তা সবই ব্যর্থ হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বিচারকদের ওপর অদৃশ্য চাপ ছিল। সেই চাপ এখন দৃশ্যমান। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি কিংবা আইন উপদেষ্টা যদি নীরব ভূমিকায় থাকেন তাহলে দেশে বিচার বলে কিছু থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই জেলা জজ।