![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/f0ce5cb983c408a3bd681acf0aa9d76d.png)
মহিউদ্দিন মোহাম্মদের লেখা বই ‘মূর্তিভাঙ্গা প্রকল্প’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। বইটিতে হাদিস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে লেখকের বিরুদ্ধে। বিতর্কের মুখে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী অমর একুশে বইমেলায় বইটি বিক্রি বন্ধ রেখেছে। পাশাপাশি স্টল থেকে বইটি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মহিউদ্দিন মোহাম্মদের বইটির ৩৯তম পাতায় একটা হাদিসের রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষণ করা বৈধ: তিরমিযি ১৫১০।’ অন্যদিকে তিরমিযি শরীফের ১৫১০ নং হাদিসে কোরবানি সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ আছে বলে ফেসবুকে লেখালেখি করেছেন অনেকেই।
পাল্টা যুক্তিতে লেখক এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, সংকলনভেদে হাদিসের ক্রমিক নং ভিন্ন হতে পারে। তার শেয়ারকৃত ওই হাদিসের একটা ছবিতে দেখা যায়, হাদিসটার অর্থ তিনি নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন।
তার শেয়ারকৃত তিরমিযি শরীফের একটা সংকলনে ১৫১০ নং হাদিসটি হুবহু এরকম, ‘উম্মু হাবীবা বিনতে ইরবায ইবনে সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তার পিতা (ইরবাষ) তাকে জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) গর্ভবর্তী যুদ্ধবন্দিনীদের সঙ্গে গর্ভমোচন না হওয়া পর্যন্ত সংগম করতে নিষেধ করেছেন।’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামে যুদ্ধবন্দীদের সাথে সুনির্দিষ্ট আচারবিধি রয়েছে। সেখানে ইন্টারকোর্সের বিষয় আছে। কিন্তু ইন্টারকোর্স আর ধর্ষণ এক জিনিস না। লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ইসলামকে ডিহিউম্যানাইজ করতেই ‘ধর্ষণ’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে হাদিসটি বিকৃত করেছেন।
তবে লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ প্রতিরোধমূলক তার পরবর্তী ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সশরীরে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে অবস্থিত জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে বইটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে বিক্রয়কর্মী জানান, বইটি স্টলে নেই।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইয়ে কিছু ভুলভ্রান্তি রয়েছে। সে কারণে আমরা আর বইটি প্রদর্শন করছিনা। বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
কীরকম ‘ভুলভ্রান্তি’ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
এদিকে, বইটির উল্লিখিত অংশ নিয়ে নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব সমালোচনা করেছেন লেখকের। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এভাবেই লেখক তরুণ প্রজন্মের কাছে ইসলামবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
জানা যায়, প্রথম কয়েকদিন জ্ঞানকোষ প্রকাশনী বইটি বিক্রি করলেও পরবর্তীতে মেলা থেকে সরিয়ে ফেলেন সেটি।
এর আগে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের গল্পের বই ‘চুম্বন’ প্রদর্শন করায় ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলার সব্যসাচী প্রকাশনের ১২৮ নং স্টলে বিশৃঙ্খলা করেছে একদল যুবক। ঘটনার আগের দিন থেকেই মেলায় এই বই প্রদর্শনের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি করেছেন নেটিজেনরা। সব্যসাচীর প্রকাশক সানজানা মেহেরান বিশৃঙ্খলার আগে থেকেই হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করে লেখালেখি করেছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সনজানা মেহেরান বলেন, প্রতি বছর তিনি তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করেন এবং বইমেলায় বিক্রি করেন। তবে বাংলাদেশে তসলিমার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি কিছু হুমকিও পান। তবে অতীতে সেগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। এ বছরও তিনি তসলিমার ‘চুম্বন’ বইটি প্রকাশ করেছেন এবং এর পর থেকে একের পর এক হুমকীবার্তা আসছে তার কাছে।
একদিন আগে থেকেই বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকার পরেও প্রতিরোধমূলক আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে।
অন্যদিকে, একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছেন, মেলার শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের না। এর দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর।
মেলায় বইকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এই ধরনের ব্যাপারগুলোতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হয় না। যখন কোন বইয়ের ব্যাপারে আপত্তি উঠছে, তখন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা আছে, প্রক্রিয়া আছে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে। এবং সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাংলা একাডেমির যে মেলা পরিচালনা কমিটি আছে তারা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। একটা খুবই স্পষ্ট প্রক্রিয়া।
রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত আসার আগেই যদি কোন বিশৃঙ্খলা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে মেলা পরিচালনা কমিটির ভূমিকা কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, মেলা রাষ্ট্রের বাইরে নয়। মেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ পুলিশের। এখানে হাজার হাজার পুলিশ বাহিনীর লোক কাজ করছে। এটা ঐতিহ্য। এক দেড় মাস আগে থেকেই সব আয়োজন করা আছে। তাই মেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। আমরা তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
একাডেমি কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সের ব্যাপারে তিনি বলেন, বইমেলার কিছু নীতিমালা আছে। টাস্কফোর্স দেখছে যে, এসব নীতিমালা ভঙ্গ হয় কিনা।