![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/73391c834b169a58f04cb9ee1501a707.jpg)
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর কয়েকটি রুটে কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তবে এতে খুঁশি নন পরিবহন শ্রমিকরা। গত দুই দিন ধরে রাজধানীর কয়েকটি রুটে কিছু বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সব রুটের যাত্রীরা। সবথেকে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। গত দুই দিন ধরে গণপরিবহনের চালক ও শ্রমিকরা সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। চালক-শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন আগের মতোই যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার দাবিতে। এতে জনপথ থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনাল পর্যন্ত সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এছাড়াও বেশকিছু বাস বন্ধ রেখে তারা নগরবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু চালক, শ্রমিকরা আগের মতো যেখানে- সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ চান। তারা বলছে, এ সুযোগ না থাকায় আয় কমে গেছে। কাউন্টার মেনে চললে বেতন বাড়াতে হবে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে চালু করা হয় ই-টিকেটিং পদ্ধতি ও কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস। এ পদ্ধতিতে গাজীপুর-ঢাকা সড়কের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ২১টি কোম্পানির ২ হাজার ৬১০টি বাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব গাড়ির রঙ নির্ধারণ করা হয় গোলাপি। তবে গত সোমবার বন্ধ হয়ে যায় এই কাউন্টারভিত্তিক বাসসেবার দুটি কোম্পানির বাস। এর মধ্যে ভিক্টর পরিবহনের বাস বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়। বলাকা পরিবহনের বাস গতকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। তবে বলাকা পরিবহনের বাসগুলো আজ থেকে চালু হওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর সায়েদাবাদ, মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা এলাকায় সড়কের পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন বহু মানুষ। দুই একটা বাসের দেখা মিললেও তাতে উঠার মতো পরিস্থিতি নেই। অনেকেই বাসের দেখা না পেয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। আর যাদের সামর্থ্য আছে তারা রিকশা, সিএনজি বা রাইড শেয়ারের মাধ্যমে গন্তব্যে ছুটছেন। তবে বাসের জন্য অপেক্ষারত অনেকেই জানেন না যে, সড়কে বাস চলাচল করছে না। ফলে তারা দীর্ঘ সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করে পড়েছেন ভোগান্তিতে। সায়েদাবাদ এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে বন্ধ হয়ে যায় এই রুটে চলাচলকারী বাস। আন্দোলনের কারণে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শুধু কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ কয়েক দফা দাবি নিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। কয়েকটি কোম্পানির বাস পুরোপুরি বন্ধ থাকায় হাতেগোনা যে কয়টি চলছে, সেগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকালে অফিস শুরুর সময়ে সড়কে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি।
এক গণপরিবহন যাত্রী বলেন, প্রায় ২ ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। আগে প্রতি ৫ মিনিট পরপর গাড়ি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শ্রমিকদের অবরোধের জন্য বাস পাওয়া যাচ্ছে না। কয়দিন পরপর এসব ঝামেলার জন্য আমাদের মতো যাত্রীরা জিম্মি হয়ে থাকি। এগুলো দেখার কেউ নেই।
পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করছেন, নতুন টিকিট পদ্ধতিতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের ইনকাম কমে গেছে। এ সার্ভিসের কারণে তেলের টাকা উঠছে না বলে জানান শ্রমিকরা। সারা দিন গাড়ি চালিয়ে রাতে যেতে হয় টাকা আনতে কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে টাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। আগে যে টাকা পেতাম তার থেকে কম নিতে হচ্ছে। এইভাবে চললে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে। আমরা নতুন নিয়মে গাড়ি চালাতে চাই না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার পরিবহন সেক্টর শৃঙ্খলায় আনতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর আদলে একটি বেতন কাঠামো তৈরি করা দরকার। দেশের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে চালক-শ্রমিকরা। তারা মালিকদের কাছ থেকে বাস ইজারার মতো নিয়ে চালায়। শৃঙ্খলা আনার জন্য একটা ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যারা এটা মানতে পারছে না, হঠাৎ করেই বাস বন্ধ করো যাত্রীদের জিম্মি করছে। পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নে যেকোনো সিদ্ধান্ত মালিকদের পাশাপাশি যাত্রী ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এত সব সমস্যা সামনে তুলে আনার সুযোগ থাকে। পরিবহনের আর এই সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রীরা।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, বাস মালিকদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সব জায়গায় ঠিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে। মূলত একটি পক্ষ দাঁড়িয়েছে, যারা সুশৃঙ্খল পদ্ধতিটি মেনে নিতে পারছে না। রাজধানীর সড়কে কোনো ভাঙাচূড়া আনফিট গাড়ি চলবে না। আমরা ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছি।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার সাঈদ বলেন, কাউন্টার সিস্টেমটা মালিকরা করছেন। বাসের শৃঙ্খলা আনার বিষয়ে বাস মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে আমাদের। আমরা বলেছি, কাউন্টার সিস্টেম হলে যানজট কমাসহ শৃঙ্খলা ফিরবে। এর পর মালিক সমিতি কাউন্টার সিস্টেম করছে।###