Image description

দেশের নানা প্রান্তসহ অজপাড়াগাঁয়েও হদিস মিলছে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীদের গোপন সম্পদের। তেমনি বিপুল গোপন সম্পদের হদিস মিলেছে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নে। গোপনে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ওই সম্পদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলাকালীন স্থানীয়দের কেউ কেউ জানতে পারেন, বাস্তবে ওই জমির মালিক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অতি গোপনে এই জমি নিজের ছেলের শাশুড়ির নামে কিনেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

 
কিন্তু জমিটির সাইনবোর্ডে মালিক হিসেবে নাম রয়েছে জনৈক হুমায়ুন কবিরের। জমিটি কেনার সময় জাহিদ মালেক কয়েক দফা সেখানে গিয়ে জমিটি পরিদর্শনও করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হুমায়ুন কবির হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অফিসের একজন কর্মচারী। তবে এত দিন বেশির ভাগ মানুষ জানত না এই জমির মালিক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
 
কারণ জমির সাব-রেজিস্ট্রি দলিলে ক্রেতার নাম রয়েছে ফারজানা রহমানের। দলিলে জমির মালিকানা একজনের নামে থাকলেও জমির সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে অন্যজনের নাম। মূলত এটি করা হয়েছে জমির প্রকৃত মালিকের নাম গোপন রাখতে।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার রত্নাপালং ইউনিয়নের যেখানে জমিটির অবস্থান সেখানে গিয়ে জানা গেছে, জমিটির প্রকৃত মালিকের তথ্য জানা গেছে, জমিটি গোপনে বিক্রির সময়।সরকারের বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় কেটে জমিটি যখন ভরাট করে টিনের ঘের দেওয়া হচ্ছিল তখনই স্থানীয়দের কাছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মালিকানার বিষয়টি জানাজানি হয়।

কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের ব্যস্ত স্টেশন কোটবাজারের পূর্ব পাশে ভালুকিয়া সড়কের রত্নাপালং মৌজার এক নম্বর বিএসসিটের ৫২২ দাগের আওতায় এক লাখ ৯৬ হাজার ২০ বর্গফুট আয়তনের ৪৫০ শতক জমি ২০২১ সালের ১৬ জুন উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করা হয়। যার দলিল নম্বর-৯৪৪/২০২১ ইং। জমিটির ক্রেতা হচ্ছেন রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩৬/২ নম্বর রোডের বাসিন্দা সামসুদ্দীন হায়দারের কন্যা ও মজিবুর রহমানের স্ত্রী ফারজানা রহমান। আর বিক্রেতা হচ্ছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মধ্যম রত্নাপালং গ্রামের মৃত অচিন্ত্য কুমার বড়ুয়ার পুত্র আশীষ কুমার বড়ুয়া।

দলিলে জমির ক্রয়মূল্য উল্লেখ রয়েছে (৪৫০ শতক জমি) তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি শতক ৮২ হাজার টাকা। তবে সরেজমিন সেখানে গেলে স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে জমিটির মূল্য অন্তত ৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কারণ বর্তমানে সেখানে প্রতি শতক জমির মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা এবং উখিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আরাফাত চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের যেকোনো নাগরিক যেখানে ইচ্ছা সেখানে সহায়-সম্পত্তির মালিক হতে পারেন। কিন্তু সম্পত্তির তথ্য গোপন করা আইনত অপরাধ। তিনি বলেন, জমির দলিলে মালিক হচ্ছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বেয়াইন অর্থাৎ মন্ত্রীপুত্র রাহাত মালিক চৌধুরীর শাশুড়ি ফারজানা রহমান।

আরাফাত আরো জানান, জমির চারদিকে হঠাৎ টিনের ঘের দিয়ে পাশের বন বিভাগের পাহাড় কেটে রাতারাতি ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় একজন সন্ত্রাসী এবং হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামির নেতৃত্বে ডাম্প ট্রাক দিয়ে পাহাড় কেটে ভরাট করা হচ্ছে ওই জমি।

সরেজমিনে গেলে কালের কণ্ঠের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে জমিটির টিনের ঘেরের দরজায় তালা লাগিয়ে পাহারাদাররা দ্রুত গাঢাকা দেয়। পরে দেখা গেছে, জমিটির অর্ধেকে রয়েছে রোপা ধান। আর জমিটির তিনদিকে পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করে রাস্তা বানানো হচ্ছে।

এলাকার একজন সিএনজিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, এগুলো চুরির টাকার চোরাই সম্পদ। সাবেক একজন মন্ত্রীর চোরাই সম্পত্তি নিয়ে এখন স্থানীয়দের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। কিভাবে রাতারাতি রেজিস্ট্রি কবলার মাধ্যমে হস্তান্তর করে মালিকপক্ষ গাঢাকা দেবে তা নিয়ে চলছে হুলুস্থুল কাণ্ড।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই সুযোগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী সাবেক মন্ত্রীর এই গোপন সম্পদ কিভাবে নামমাত্র মূল্যে হাতিয়ে নিতে পারেন সে জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। 

বন বিভাগের পাহাড় কেটে ভরাট করা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ধানি জমির বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। এরই মধ্যে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যিঁনি জমিটি দেখভাল করছেন তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফসলি জমি ভরাট করতে আইনত বাধা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পতিত সরকারের সুবিধাভোগী মানুষগুলো জনগণের টাকা কিভাবে লুট করে সহায়-সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন, এ ঘটনাটি তার উদাহরণ হতে পারে। দুদককে অবিলম্বে বিষয়টির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।