Image description

প্রকল্পে অনিয়মসহ বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সাবেক এই মন্ত্রীও আত্মগোপনে রয়েছেন। অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগে তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বহাল তবিয়তে আছেন দুই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপালন করা তার একান্ত সচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ সবুর। এই মন্ত্রণালয়ে সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি সচিব পদে পদোন্নতি পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের রাতের ভোটে সরকার গঠন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান শ ম রেজাউল করিম। তার একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুরকে। শ ম রেজাউল করিমকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দেয়া হলে একান্ত সচিব হিসেবে সাথে নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০ ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে। এরপর ২০২৪ সালের একতরফা ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পান ফরিদপুর-১ আসনের আবদুর রহমান। তার একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এই কর্মকর্তা।

এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন হলে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান ফরিদা আখতার। দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন এই কর্মকর্তা।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হেনস্তা করে বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। এ সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা) আমেনা বেগম অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। এরপর আমেনা বেগমকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। তার স্বামী একই ক্যাডারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো: নবীরুল ইসলামকে ওএসডি করে অন্তর্বর্তী সরকার। আমেনা বেগম প্রাণিসম্পদ অনুবিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা সৈয়দা নওয়ারা জাহান। আওয়ামী সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা গত ১৩ বছর ঘুরে ফিরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্মসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোসাম্মৎ জোহরা খাতুন। বিসিএস ২২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ৭ জুন এই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা গত ১০ বছর ধরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন।

একই অনুবিভাগে কর্মরত আছেন বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মো: আ: জলিল। এই কর্মকর্তা ২০১৮ সালের রাতের ভোটে সরকার গঠনের পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদ শূন্য থাকায় সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব মো: তোফাজ্জেল হোসেন। বিসিএস ১৫ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা এখানে যোগদানের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে শ ম রেজাউল করিমের হাত ধরে এই মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছিলেন।

এই কর্মকর্তার পিডিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছর প্রশাসনে দাপটের সাথে চাকরি করেছেন এই কর্মকর্তা। পদোন্নতিও পেয়েছেন নিয়মিত। ২০০৬ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব। এরপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর তাকে নিয়োগ দেয়া হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের একান্ত সচিব হিসেবে। সেখানে তিনি ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১১ মাস পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কাজ করার পর তাকে আবারো পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীকের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। রাতের ভোটে আবার ক্ষমতায় এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয় এই কর্মকর্তাকে। সেখানে প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালনের পর গত ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়।

জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নয়া দিগন্তকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা সঙ্কট রয়েছে। কর্মরত কর্মকর্তাদের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে নানা রকম তথ্য পাচ্ছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।