তারিক আহমেদ সিদ্দিক। আয়নাঘরের কারিগর। অসংখ্য গুম-খুন, ক্রসফায়ারের সেনাপতি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা। জনশ্রুতি আছে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার পরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সাবেক এ মেজর জেনারেল। দেশের সমরাস্ত্র, ব্যাংক বীমা, পোশাক শিল্প, আবাসন, এভিয়েশন, শেয়ারবাজার, জ্বালানি, সামরিক বাহিনীর বদলি-পদোন্নতি, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে তারিক সিদ্দিকের ছিল একক অধিপত্য। এসব খাত সংশ্লিষ্টদের জিম্মি করে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানদের নামেও দেশে-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ব্যবসায়ীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল তারিক সিদ্দিক। যখন তখন একে ওকে ডেকে পাঠাতেন। দাবি করে বসতেন শত কোটি টাকা। দেড় যুগে নিজের পদ ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত বিঘা জমি, শতাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি, বাড়ি, রিসোর্ট, বাংলো বাড়ি, মাছের ঘের, গরুর খামারের মালিক হয়েছেন তারিক সিদ্দিক। সম্পদে শেখ পরিবারের লোকজনকেও ছাড়িয়ে গেছেন। এক প্রকার বাধাহীনভাবে অঢেল সম্পদ গড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এই জেনারেল। কারণে অকারণে হস্তক্ষেপ করতেন সেনাবাহিনীতেও। মানবজমিন অনুসন্ধানে দেশের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তার গোপন বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের নানা প্রান্তে তারিক সিদ্দিকের হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান মিলেছে। ঢাকার পূর্বাচলে শত শত বিঘা সম্পদ কিনে রীতিমতো হৈচৈ ফেলেছেন শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকের এ ছোট ভাই।
কোন মৌজায় কতো জমি: পূর্বাচলের ৩০০ ফিট মূল সড়ক থেকে ১০০ ফিট সংযোগ সড়কের ইছাপুর বাজার টেম্পার গ্লাস ফ্যাক্টরির পূর্ব পাশে তারিক সিদ্দিকের ৫টি আবাসিক প্লট রয়েছে। এগুলো বাড়িয়াছনি মৌজায় ৫১০৬ খতিয়ানের আরএস ১২৩ নং দাগে ২৫ শতাংশ, ১২৪ নং দাগে ১৩.৯২ শতাংশ, ১২৫ নং দাগে ১২.৬৫ শতাংশ, ১২১ নং দাগে ৯ শতাংশ। একই মৌজায় ৫২০৭ খতিয়ানের ১২৫ নং দাগে ৮.২২ শতাংশ। জমিগুলো তারিক সিদ্দিকের নিজের নামেই রয়েছে। এ ছাড়া রূপগঞ্জ আনন্দ হাউজিং এর পশ্চিম পাশে গোপালেরঠুঠা গ্রামে তার ১৫০ শতাংশের একটি মাছের ঘের রয়েছে। এগুলো রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গুতিয়াব মৌজায় ৮৬৪০ নং খতিয়ানের আরএস ২২৩৬ নং দাগে ২৬ শতাংশ, ২৭৩৪নং দাগে ২৪ শতাংশ। একই মৌজায় ৮৫৭২ নং খতিয়ানের আরএস ২২২৪ নং দাগে ২.৭৫ শতাংশ, ২২৩৮ নং দাগে ১২.৩৭ শতাংশ, ২২৪১ নং দাগে ৪.২৫ শতাংশ, ২২২৪ নং দাগে ২ শতাংশ, ২২৪১ নং দাগে ২ শতাংশ। পাশের আরও ৩টি দাগে ৭৭ শতাংশ জমিতে মাছের ঘের করা হয়। ওই ঘেরে এখনো মাছ চাষ হচ্ছে। তবে ৫ই আগস্টের পরে এলাকাবাসী দলবেঁধে এসে অনেক মাছ ধরে নিয়ে যান। এ ছাড়া রূপগঞ্জ দাউদপুর ইউনিয়নের বিরহাটাব গ্রামে আল জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার পাশে বিরহাটাব মৌজায় ১৯৪ নং খতিয়ানের আরএস ৩৫ নং দাগে ৮.৯০ শতাংশ, ৩৬ নং দাগে ৭৫.৭ শতাংশ, ৩৪ নং দাগে ৪.৫ শতাংশ, ৭৪ নং দাগে ২১ শতাংশ, ৪৭ নং দাগে ১৪.৫৬ শতাংশ জমি রয়েছে তারিক সিদ্দিকের। একই ইউনিয়নের দাউদপুর ভূমি অফিসের আওতাধীন দেবাগ্রাম মৌজার দেবই এলাকায় ৪ দাগে ৯ বিঘা জমি রয়েছে তার। জমিটি ফারুক নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি কিনে দিয়েছেন। একই ইউনিয়নের বাঘপাড়া মৌজার বাঘলা ও রহিলা এলাকায় ৩০০ শতাংশ জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে এই জমি কেনেন তারিক সিদ্দিক। এ ছাড়া উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের হিরনাল গ্রামে ছায়াবীথি হাউজিং সোসাইটিতে ৯০ শতাংশের ১১টি প্লট রয়েছে তারিক সিদ্দিকের। ওই হাউজিংয়ের মূল সড়ক থেকে একটু ভেতরে ঢুকেই ৩ ইউনিটের বিলাশবহুল একটি ৫ তলা বিল্ডিং করা হয়েছে। ভবনটিতে বর্তমানে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা ভাড়া থাকেন।
তারিক আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট রফিকুল ইসলাম মোল্লার মাধ্যমে রূপগঞ্জ ও পূর্বাচলে বেশকিছু জমি কিনেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এই রফিকুলের বাড়ি রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের কালনি গ্রামে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মোল্লাকে ফোন করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, তারিক সিদ্দিক একটা জালেম। তার কোনো বুক পিঠ নাই। আমি তাকে সব জমি কিনে দিয়েছি এটা সত্য নয়। তবে আমি তাকে বিঘা পাঁচেক জমি কিনে দিয়েছি। তার পিএস শামসুল আলম তাকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে তিনি আমাকে রূপগঞ্জ এলাকায় জমি কিনে দিতে চাপ দেন। কিন্তু আমি তখন রাজি হইনি। ২০১৮ সালে একদিন রাতে আমাকে র্যাব দিয়ে তুলে নেয়া হয়। ১০ দিন আমাকে আয়নাঘরে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করান। পরে জীবন বাঁচাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে জমি কিনে দিতে হয়েছে। সে আমার একটি জমি দলিল করে নিয়ে আমাকে টাকা দেয়নি। আসলে ও একটা মুনাফেক। তারিক সিদ্দিকের একটি পালিত ছেলে আছে। নাম মেজর শরিফ। শরিফ নিজে এসে জমি কিনতো। ওই শরিফের নামে রূপগঞ্জে শত শত প্লট কিনেছে তারিক সিদ্দিক। শরিফের নামে জমি নাই রূপগঞ্জে এমন কোনো মৌজা পাওয়া যাবে না। পিএস শামসুলের নামেও অনেক জমি কিনেছে। জমি কেনা ওর নেশা ছিল। সে কম দামে জমি কিনে বসুন্ধরার কাছে চড়া দামে বিপুল পরিমাণ জমি বিক্রি করেছে। বিভিন্ন জনের নামে শত শত বিঘা জমি কিনেছে। জমি কিনেই হাউজিং কোম্পানিগুলোকে ধরে এনে জোর করে চড়া দামে জমি বিক্রি করে দিতেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কখনোই তারিক সিদ্দিকের ভালো সম্পর্ক ছিল না। মৃত্যুর ভয়ে তাকে জমি কিনে দিতে হয়েছে। রূপগঞ্জ ঘেঁষা গাজীপুর কালিগঞ্জ উপজেলায় তারিক সিদ্দিকের ১১ বিঘা জমি রয়েছে। জমিগুলো রূপগঞ্জের লোকজন দেখাশোনা করেন। এ ছাড়া পূর্বাচল নিউ টাউনে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডে তারিক সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকের ১০ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে। তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল কুলিয়াদী মৌজায় ১৮৯৬ নং খতিয়ানের আরএস ৫৩ নং দাগে ১৪.২৫ শতাংশ জমি রয়েছে। রূপগঞ্জ পুটিনা মৌজায় ৪টি দাগে ৭০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার হোল্ডিং নম্বর-২৪৪। এ ছাড়া রূপগঞ্জ কামালকাঠি মৌজায় ৩৫ শতাংশ জমি রয়েছে। যার হোল্ডিং নম্বর-৪৯১/১।
পূর্বাচলে প্লটের ছড়াছড়ি: পূর্বাচলে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহর জলসিঁড়ি আবাসিক প্রকল্পের ১৭টি সেক্টরের মধ্যে ৫টি সেক্টরে তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের নামে ৪১টি প্লট রয়েছে। প্লটগুলো হাউজিংয়ের সেক্টর-১, সেক্টর-২, সেক্টর-৩, সেক্টর-১০ ও সেক্টর-১৫ এর বিভিন্ন রোডে। এরমধ্যে মুশুরীগ্রাম মৌজা সেক্টর-১ এর ৫০৫ নম্বর রোডে ২০ কাঠার একটি প্লট, ৫০২-এফ নং রোড ও ৪০১-এ নং রোডে ২টি ৫ কাঠার প্লট। এ ছাড়া ৪০১-বি নং রোডে একটি ২০ কাঠার প্লট, ৫০১ রোড ও ৪০৩-বি নং রোডে ১০ কাঠার আরও দুটি প্লট। এবং ৫০৩ নং রোডে ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। একই মৌজায় জলসিঁড়ির ২ নম্বর সেক্টরে তারিক সিদ্দিকের বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। এরমধ্যে ২০৭ ও ৪০২ নং রোডে ২০ কাঠার দুটি প্লট, ৪০৫, ৪০৬ ও ৫০১ নং রোডে ১০ কাঠার ৩টি প্লট। ৪০৭, ৫০১সি ও ৫০১বি নং রোডে ৫ কাঠার ৩টি প্লট। এ ছাড়া দক্ষিণ নবগ্রাম মৌজায় জলসিঁড়ির ৩ নম্বর সেক্টরে ৪০২, ৪০৩, ৫০২, ২০৭, ৪০২ এইচ নং রোডে ৫ কাঠার ৬টি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া বাঘাবের মৌজায় জলসিঁড়ির ১০ নম্বর সেক্টরে বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। এরমধ্যে ১০৯, ৩০৩বি, ৪০৭, ৫১১, ৪০৬, ৪০২, ৪০৩, ২০৫ নং রোডে ৫ কাঠার ১০টি প্লট। ৪০৩ নং রোডে ১০ কাঠার একটি প্লট পাওয়া গেছে। এছাড়া জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে ৩০১ নম্বর রোডে একটি কমার্শিয়াল স্পেস, ১০৪বি, ১০৪জি নং রোডে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট স্পেস এবং ১০৪, ৪০৬, ৫১৬, ৪০৮ ও ৩০৪ নং রোডে ৫ কাঠার ৬টি প্লট রয়েছে। রূপগঞ্জ আনন্দ হাউজিং, পূর্বাচল হিল সিটি, আশালয় হাউজিং, পূর্বাচল লেক ভিউ সিটিতে তার বিপুলসংখ্যক প্লট রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি মানবজমিনকে বলেছে, জলসিঁড়ির ১৭টি সেক্টরেই তারিক সিদ্দিকের প্লট রয়েছে। কয়েকটি প্লটে ইতিমধ্যে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তার প্লটের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। পুরো প্রকল্পটিই তার সহযোগিতায় হয়েছে। তার সহায়তা ছাড়া এত বড় প্রজেক্ট দাঁড় করানো সম্ভব ছিল না। সে কারণে এখানে তার অনেক প্লট থাকাটাই স্বাভাবিক। জলসিঁড়িতে গিয়ে রেজাউল হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, প্রায় প্রতিটি রাস্তায়ই তারিক সিদ্দিকের প্লট রয়েছে। ভালো প্লটগুলো সে নিয়েছে। সেনাবাহিনীতে তার একটি সিন্ডিকেট ছিল তাদের নামে অনেক প্লট কিনেছে। মেজর শরিফ তার সবকিছু দেখাশোনা করতেন। শরিফকে ধরলে তার প্লটগুলো বেরিয়ে যাবে। এই শরিফের নামেও অনেক প্লট কিনেছেন তারিক সিদ্দিক। শরিফ মেজর হয়ে মেজর জেনারেলের মতো ক্ষমতা দেখাতেন। তারিক সিদ্দিকের অনেক প্লটে ইতিমধ্যে বিলাশবহুল বাড়ি নির্মাণ হয়ে গেছে। এখানে শুধু তার নিজের নামে নয় বেনামেও অনেক প্লট কিনেছে।
জমি কিনেছে গাজীপুরেও: শুধু পূর্বাচল নয় তারিক সিদ্দিক বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে ঢাকার অদূরের জেলা গাজীপুরেও। ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব জমি ক্রয় করা হয়। এসব জমিতে বাগানবাড়ি, পুকুর, প্রাসাদ, পশুপাখিও লালন-পালন করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর জয়দেবপুর উপজেলার ফাওকাল মৌজায় মোট ৭টি দাগে ৬৯০ শতাংশ জমি রয়েছে তারিক সিদ্দিকের। জমিটি বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা ও সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের কানাইয়া এলকায় অবস্থিত। ওই জমিতে একটি সুবিশাল বাগানবাড়ি রয়েছে। যেখানে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি ও বিশাল দুটি পুকুর আছে। ৫ই আগস্টের পরে সেখানে স্থানীয়রা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। জয়দেবপুর ফাওকাল ভূমি অফিসের কাগজপত্র বলছে, এই বাগান বাড়িটির মালিকের নাম তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যিনি শেখ রেহানার দেবর। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে জমিগুলো কেনা হয়। পরে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ২০১৩ সালে গাজীপুর জয়দেবপুর উপজেলার বাঙ্গালগাছ মৌজায় ৯টি দাগে ৭৫০ শতাংশ জমি কেনেন তারিক সিদ্দিক। জমিটি সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডের বাঙ্গালগাছ এলাকায়। ওই জমিতে বিশাল একটি বাংলো বাড়ি করেছে। যার নাম দেয়া হয়েছে বাগান বিলাস। তবে বাগান বাড়ির গেটে যে নাম ফলকটি রয়েছে সেখানে রফিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম লেখা রয়েছে। ৫ই আগস্টের পরে এই বাড়িটিও ভাঙচুর করে এলাকাবাসী। জমিটি স্বপন মিয়া নামের স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় কেনা হয়। এ ছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলার চান্দনা মৌজায় কুমার ডোবা এলাকায় তারিক সিদ্দিকের নামে ১৩ বিঘার একটি বাগানবাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার পাশের উপজেলা কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান, সাভার, আশুলিয়া, কালীগঞ্জ, ধামরাইতে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তারিক সিদ্দিকের। ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব জমি কেনা হয়।
ঢাকায় যত ফ্ল্যাট প্লট: মিরপুর ডিওএইচএসে এভিনিউ-১ এবং এভিনিউ-৩ রোডে স্ত্রীর নামে ১৩টি ফ্ল্যাট রয়েছে। একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমণ্ডিতেও। এ ছাড়া পল্লবী সিরামিক রোডে স্ত্রীর নামে ১০ তলা একটি বাড়ি রয়েছে। ক্যান্টমেন্ট থানা এলাকায় স্ত্রী-সন্তানের নামে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তারিক সিদ্দিকের। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বারিধারা পশ্চিম ডিওএইচএসে তারিক সিদ্দিকের একটি বাড়ি রয়েছে। রোড নং-০২। বাড়ি নং-১২২/২। এ ছাড়া সাভার ডিওএইচএসেও তারিক সিদ্দিক পরিবারের বেশ কয়েকটি প্লট, ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ার সাহারা, ইব্রাহিমপুর, ধামালকোট মৌজায় শাহিন সিদ্দিকের নামে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। এসব জমি জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের এনটিএমসি সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসান কিনে দিয়েছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর বদলি পদোন্নতি সহায়তা দিয়ে গুলশান থানার গুলশান আ/এ, ঢেলনা, মহাখালী, বনানী আ/এ, পশ্চিম উলুন মৌজায় বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক ভবনও উপহার নিয়েছেন সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক। কিছু কিছু সম্পত্তি মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নামে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে বাড্ডা সাঁতারকুল এলাকায়ও। এসব জমি বাড্ডার সাঁতারকুলে মগারদিয়ার পূর্ব হাররদিয়া মৌজায় বাড্ডা মডেল টাউনের মধ্যে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকায় নয় তারিক সিদ্দিক দেশের নানা প্রান্তে জমি কিনেছেন। এরমধ্যে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ, শীলখালী ও লেঙ্গুরবিল মৌজায় বিপুলসংখ্যক জমি রয়েছে সিদ্দিক পরিবারের। তারিক সিদ্দিকের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, রূপগঞ্জের পূর্বাচল নিঝুম পল্লী রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট, গাজীপুরের ভাওয়াল ও সারা রিসোর্টে তারিক সিদ্দিকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। এদিকে সরজমিন রূপগঞ্জ গেলে স্থানীয়রা মানবজমিনকে বলেন, তারিক সিদ্দিক রূপগঞ্জ দাউদপুর ও নাওরা কায়েতপাড়া এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কেনেন রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে। মূলত তাকে জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট কাজে সহায়তার জন্য তারিক আহমেদ সিদ্দিককে বিপুল পরিমান জমি কিনে উপহার দেয়া হয়।
মেয়ের নামে বিদেশেও সম্পদ: তারিক আহমেদ সিদ্দিক লন্ডনে ১৯ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা) মূল্যে একটি আলিশান বাড়ি কিনে দিয়েছেন মেয়ে বুশরা সিদ্দিককে। লন্ডনের ফিঞ্চলি এলাকার গোল্ডারস গ্রীন কানঘাট ড্রাইভের ৫৪ নম্বর বাড়িটি (54 Connaught Drive, Golders Green, NW11 6BJ) যুক্তরাজ্যের ওয়েলেস এইচ এম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসে ২০১৮ সালের ২রা আগস্ট বাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে দুইজনের নামে। তারা হলেন- মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের ছোট মেয়ে বুশরা সিদ্দিক ও তার স্বামী মোহাম্মদ আশিক সালাম। এ ছাড়া তারিক সিদ্দিক তার বড় মেয়ে নুরীন তাসমিয়া সিদ্দিককে লন্ডনের পার্শ্ববর্তী টাউন ক্যান্টে আরেকটি দামি বাড়ি কিনে দিয়েছেন বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। এদিকে তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে সরকার। শেখ পরিবারের পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি জমি আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংসহ দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। তিন বিমানবন্দরে চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি। সম্পদের বিষয়ে জানতে তারিক সিদ্দিকের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে ওই নম্বরের হোয়াটঅ্যাপে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।