Image description
ব্যাংক খাতে কমছে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষা

ব্যাংক খাতের রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে ও সরকারি খবরদারি কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পরিচালকদের খরবদারি বন্ধ করা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে পথ খুঁজছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশের ব্যাংক খাতে ক্ষমতসীন দলের অযাচিত প্রভাব বন্ধ হবে।

সূত্র জানায়, মূলত এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যাংক খাতে তাদের খবরদারি চালায় বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং দলীয় আজ্ঞাবহদের ব্যাংক খাত থেকে অনৈতিক সুবিধা দিতে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রভাবিত করা হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার স্বকীয়তা ভেঙে ব্যাংক খাতের স্বার্থবিরোধী নানা রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে  থাকে। আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এবং এ খাতের ভিত মজবুত করতে হলে এ জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থাকার প্রয়োজন নেই বলে মনে করে সরকার।

এর আগে ব্যাংক খাতে দ্বৈতশাসন ঠেকানো ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিলুপ্তি দাবি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিল। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে গভর্নর পদকে সাংবিধানিক পদে অন্তর্ভুক্তি করে মন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়া, ডেপুটি গভর্নর পদ নিয়মিত পদ দিয়ে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। এসব দাবি বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।  অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই বিভাগটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কাজে হস্তক্ষেপ করে। এ সংস্থাটির আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এটি বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। কারণ এ সংস্থাটির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বেড়েছে এটার মাধ্যমে।

সরকার গঠিত আর্থিক খাত সংস্কারে গঠিত কমিশন মনে করে বিগত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তারা যেসব নীতিমালা নিয়েছেন, সেগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ের তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। এটা করতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সবার আগে বিলুপ্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।