![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/9db7b77296fd747d7ad9d22c03705137.webp)
যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল মাদরাসা রোড দিয়ে যাওয়ার সময় ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন কাউসার হাওলাদার নামে এক যুবক। তার বুকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে স্থানীয়রা কাউসারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পিরোজপুর সদর থানার হরিণা গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে কাউসার। তিনি মাতুয়াইল মৃধাবাড়ী এলাকায় থাকতেন। কাজ করতেন মশার কয়েলের ‘স্ট্যান্ড’ তৈরির কারখানায়।
৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আদাবর থানার ১০ নম্বর রোড বালুরমাঠ এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন মো. সুমন শেখ নামে এক যুবক। তিনি ঢালাই মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ছিনতাইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে সুমন বলেন, ৪-৫ জন ছিনতাইকারী টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায় আমি দৌড়াতে থাকি। তখন পেছন থেকে ছিনতাইকারীরা চাপাতি দিয়ে হাতে কোপ দেয়। এতে আমার বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা ১৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় জড়িত মো. আলমগীর, শাহজাহান, তরিকুল ইসলাম ও মো. রাহাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির মিরপুর বিভাগ।
এসব এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এমন চিত্র এখন রাজধানীজুড়ে। ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রতিটি স্থানে এ মুহূর্তে বড় আতঙ্কের নাম ছিনতাই। বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের ভয়ে পথচারীদের তটস্থ হয়ে চলাফেরা করতে হয়। শুধু সন্ধ্যা বা রাত নয়, দিনদুপুরেও এখন ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সশস্ত্র ছিনতাইকারী চক্র ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। এদের টার্গেট ভ্যানেটিব্যাগ, হাতব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসেট। রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে ছিনতাই বাড়ছে। ছিনতাইকারীদের হাতে অনেকে প্রাণও হারাচ্ছেন। অনেকে আবার আহত হয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে দুর্বিষহ জীবন। ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারানো বা নির্মমতার শিকার এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। একটু বলপ্রয়োগ করতে গেলে প্রাণে মারা পড়ার ভয় থাকে। ভোরে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে বাসামুখী অথবা বাসা থেকে স্টেশনমুখী যাত্রীদের তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়। নির্জন গলিতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। আবার গাড়ি ও মোটরসাইকেলে পথরোধ করে টাকা, মুঠোফোন বা স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে।
বেশির ভাগ ছিনতাইকারীই নেশাগ্রস্ত। নেশার টাকা জোগাতে তারা এ পথ বেছে নেয়। সচেতন মহলের ধারণা, মাদকের চালান আটকাতে না পারলে মাদকাসক্তদের ছিনতাই থেকে ফেরানো অসম্ভব। কারণ, যখই মাদকাসক্তরা নেশাদ্রব্য গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে তখনই তাদের প্রয়োজন হয় টাকার। আর রাস্তাঘাটে ছিনতাই করা অর্থ বা পণ্য তাদের ওই চাহিদা পূরণ করতে পারে। এজন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক ছিনতাইকারী নেশার টাকার জন্যই ছিনতাইয়ের মতো খারাপ ও সমাজবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা কমাতে হলে সামাজিক নজরদারি বাড়ানোসহ একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছিনতাই প্রতিরোধে আরও বেশি তৎপর হতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে তিন মাসে (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) ১ হাজার ২৫২ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১২০টি। এর মধ্যে নভেম্বরে গ্রেপ্তার ১৪৮, ডিসেম্বরে ৩৮৫ এবং জানুয়ারিতে ৭১৯ জন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, নগরীতে ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে র্যাব সর্বদা তৎপর রয়েছে। র্যাবের অধীনে ঢাকার ৫টি ব্যাটালিয়ন ছিনতাইকারীদের ধরতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট, টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। নিয়মিতই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে চেকপোস্ট, ফুট প্যাট্রোলিং, টহলসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব কৌশল কাজে লাগিয়ে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। নগরীতে ছিনতাই অনেক কমে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ছিনতাইকে বড় কোনো ধরনের অপরাধ হিসেবে এখনো গণ্য করা হয় না। ফলে যারা গ্রেপ্তার হয়, তারা আদালত থেকে দ্রুত জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছে।