Image description
► দুই সংস্কার কমিশনের সুপারিশ- ► আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নয় ► অঙ্গসংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না ► বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য অসদাচরণ ► আদালত অঙ্গনে মিছিল সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে আইন

দেশের বিচারাঙ্গন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। আইনজীবী সমিতি এবং বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কোনো ভূমিকা থাকবে না। কোনো রাজনৈতিক দল আইনজীবীদের কোনো সংগঠন নিজেদের অঙ্গসংগঠন হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে পারবে না। বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে বলেও সংস্কার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংস্কার কমিশন বলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আদালত চত্বরে রাজনৈতিক সমাবেশ, মিছিল এবং বিক্ষোভের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ ধরনের কর্মকাে র সঙ্গে জড়িতরা রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগও পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন। আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকা  সম্পর্কে সুপারিশে বলা হয়েছে, আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করে এমন রাজনৈতিক কর্মকা  থেকে আইনজীবীদের বিরত থাকা আবশ্যক। আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের কর্মসূচি বা কর্মকা  পেশাগত অসদাচরণের অন্তর্ভুক্ত করে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে এ ব্যাপারে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা প্রচলন করা এবং এজন্য বার কাউন্সিল আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা জরুরি।

বিচারকদের রাজনৈতিক কর্মকাে র বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিচারকদের অবশ্যই সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ও সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট আচরণবিধি অনুসারে এ বিষয়ে কঠোরভাবে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আদালত প্রাঙ্গণে সভাসমাবেশের বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, হাই কোর্টের ২০০৫ সালের রায় অনুযায়ী আদালত চত্বরের মধ্যে কোনো জমায়েত, মিছিল, বিক্ষোভ, বয়কট বা ঘেরাও কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে স্পষ্ট নির্দেশ জারি করতে হবে। নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, তা-ও তদারকি করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাও কর্মসূচি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে আদালত প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার ঘোষণা রয়েছে। তবে বর্তমান কাঠামোয় বিচার বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। ফলে বিগত কয়েক দশকে বিচার বিভাগের ওপর সহজেই রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা গেছে। বিচার বিভাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম হিসেবে অপব্যবহারের কারণে পুরো সমাজকে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ রাজনীতিকরণের বহিঃপ্রকাশ বিভিন্নভাবে ঘটেছে। যোগ্যতর ও কর্মে প্রবীণ বিচারককে প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন রায়ে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো রায়ে অপ্রয়োজনীয় ও দৃষ্টিকটুভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য, মতামত ও বিতর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলার রায়ে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা বাস্তবায়নের নজির দেখা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন মামলার রায়। এ রায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আইনজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে মামলা পরিচালনায় তাদের সুবিধা প্রদানের প্রবণতা এবং মামলার ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা যায় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।