
আমান আব্দুল্লাহ (Aman Abdullah)
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের আঁতুরঘর এবং বাকশালী আওয়ামী লীগদের প্রতীক বত্রিশ নাম্বার গুড়িয়ে দেয়ার পর থেকে চিহ্নিত আওয়ামীদের কথাগুলো শুনছিলাম এবং লেখাগুলো পড়ছিলাম। তাদের কথা শোনাটা একটা আজাবের মতো। প্রথম মিনিটে মাথা গরম হয়ে যায়। মনে চায় মিথ্যাবাদী বাটপারগুলোতে ধরে ঘাড়াইতে। কিন্তু তা করা যেহেতু সম্ভব না তাই বন্ধ করে দিয়ে অন্য কিছু শুনতে। অন্য কিছু পড়তে। কিন্তু সেই অসহ্য আজাব সহ্য করেও চালিয়ে গেছি। উদ্দেশ্য ছিলো তারা কি কথা বলতেছে এবং কেন বলতেছে তা বুঝার চেষ্টা করা।
তবে এটা নিয়ে লেখার কোন চিন্তা ছিলো না। কিন্তু আজ যখন দেখলাম ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদী ছেলেটা ডিজিএফআই এর টার্গেটে পরিণত হয়েছে এবং তাকে ঘৃণ্য হাসিনার সাথে তুলনা করার মতো মরণপণ কামড় তারা দিয়েছে, তখন মনে হলো কিছু চিন্তা শেয়ার করা দরকার। কেউ শুনলো কি শুনলো না, তা আমার বিবেচ্য বিষয় না। তদুপরি যখন দেখলাম লতিফুল ইসলাম শিবলী একটা সরকারী পদে থেকেও পরিস্কার মত প্রকাশ করতেছেন, তখন মনে হলো আসলে এইটা আমাদের প্রত্যেকের এখন দায়িত্ব। সবাইকে কথা বলতে হবে। মনের কথা বলতে হবে।
আওয়ামীরা মূলত চেষ্টা করতেছে বিএনপির হাতে পায়ে ধরে এবং বিএনপি ঘাড়ে চড়ে পুনর্বাসিত হওয়ার। বত্রিশ নাম্বার ধ্বংসের জন্য তারা বিএনপিকে দোষারোপ করতেছে না। বরং মনের আওয়ামী ক্রোধ তারা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে বিএনপি সম্পর্কে নানা ইতং বিতং কথা বলে এবং বিএনপির লোকদেরকে এড্রেস করে তাদেরকে প্রচন্ড অপরাধবোধে আক্রান্ত করার চেষ্টা করতেছে। এইটা এদের একটা টেকনিক। সম্ভবত সেন্ট্রাল থেকে ছড়ানো মনে হলো।
জামায়াতকে তারা দোষারোপ করতেছে। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ হলো তাদের মূল পুঁজি সুতরাং জামায়াতকে দোষারোপ করাটাই তাদের চিরন্তন স্ট্রাটেজি। জামায়াত আমীর বিবৃতি দিয়ে কেন, বত্রিশ নাম্বার আবার বানিয়ে দিলেও কোন লাভ নাই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের অস্তিত্বই হলো ব্যবহৃত হওয়ার জন্য।
কিন্তু তাদের মূল রাগটা আসলে ছাত্রদের উপর। তারা তাদের শত্রু চিহ্নিত করতে ভুল করেনাই।
আওয়ামীদের কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শুনে, তাদের মুখভঙ্গী পর্যন্ত খেয়াল করার এবং বুঝার চেষ্টা করেছি, আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে পরিবর্তন আমরা চাই, সেই পরিবর্তনের ভ্যানগার্ড হলো ছাত্ররা। তবে একই সাথে এও মনে হয়েছে, এই ছাত্ররা হলো ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার। উপদেষ্টা, আর্মি, বিএনপি, জামায়াত কেউ তাদের শুভাকাঙ্খী না। প্রত্যেকে নিজ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে এখনো প্রশাসন, পুলিশ, আর্মি, বিচারবিভাগ সব জায়গায় আওয়ামী লোকজন বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
সুতরাং ছাত্রদের প্রতিটা কাজ এখন মাইক্রোস্কোপের নিচে। তাদেরকে অনেক বেশি পরিণত হতে হবে। অনেক বেশি সাহসী হতে হবে। বত্রিশ নাম্বার প্রসঙ্গেই বলি। যদি মানুষ মনে করে যে এটা পিনাকী ভট্টাচার্য্যের কর্মসূচী এবং ছাত্ররা বাস্তবায়ন করেছে, তাহলে এভাবে চলতে চলতে এক সময় তারা তাদের নায্যতা ও অবস্থান হারাবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে ঐ রাতে নেমে এসেছিলো, তারাও হতাশ হবে এক সময়। এর মাধ্যমে আওয়ামীদের অব্যাহত প্রচারণাও সফল হবে। বিদেশে নিরাপদে থেকে যাওয়া একজন মানুষের নেতৃত্বে বা বুদ্ধিতে চলার ইমেজ ছাত্ররা এই সময়ে এফোর্ড করতে পারেনা। ছাত্ররা বড় কিছু করলে পিনাকী স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে কথা বলবে এবং তা ক্যাশ করার চেষ্টা করবে। এই বিষয়টা কিভাবে সামাল দেয়া যায় তা হলো ছাত্রদের জন্য এই মূহুর্তে বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লবীরা যা অর্জন করেছে তার কণাপরিমাণ কিছুও আমার নিজের ব্যক্তিগত অর্জন নাই। আমি সম্পূর্ণ ছাপোষা স্বার্থপর একজন সাধারণ মানুষ। তবে আমার কিছু শিক্ষাগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতা আছে। এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় ক্ষুদ্র পরিসরে পাওয়া একটা শিক্ষা হলো, আমি বারবার দেখেছি, কেউ যখন নিজ বুদ্ধিতে কোন কিছু করার চেষ্টা করে, বেশিরভাগ সময় ঠিক করে কারণ সে বুদ্ধিমান কিন্তু মাঝে মাঝে ভুলও করে এবং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, সে পেশাগত জীবনে একসময় এক্সিলেন্স অর্জন করতে পারে। স্পেশালাইজড নলেজ এবং এক্সপেরিয়েন্স হয়। অন্যরা এসে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। কিন্তু কেউ যখন কেবলমাত্র অন্যের পরামর্শের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে, সেইফ সাইডে খেলতে চায়, সে একজন মিডিওকার স্টাফ মেম্বার হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। বড় কিছু করতে পারেনা।