![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/e9eaba29a39373ea2b80f7a235685155.jpg)
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। এরপর গত বুধবার রাতে হাসিনার প্রয়াত পিতা ও দেশের স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আগুন দিয়েছে একদল জনতা। শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর বাড়ির পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা তার দল আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বাড়িতেও আগুন দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ৩২ নম্বরে আগুন দিল জনতা?
বুধবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ জনতা ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে জড়ো হয়। ওই বক্তব্যে হাসিনা তার সমর্থকদের নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আহ্বান জানান।
সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে গত বছরের মধ্যভাগে ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় ছাত্রদের দমন করতে দেশব্যাপী সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল। যার ফলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় এবং তাতে অন্তত ৮৩৪ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ওই আন্দোলনের একপর্যায়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ওই দিনও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিতে হামলা চালানো হয়।
৩২ নম্বরে সাম্প্রতিক হামলার কারণ কী?
শেখ মুজিবের বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সম্পত্তিকে বছরের পর বছর ধরে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতি এবং বিরোধী কণ্ঠ দমনের আইকন হিসেবে দেখে বিক্ষোভকারীরা। গত বছর হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভেঙে ফেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার জোরদার করা হয়। গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বুধবার রাতে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। ভারতে থেকে হাসিনার এভাবে প্রচারণা চালানোয় গত বছর ভারতকে হুঁশিয়ার করেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা। দিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা বলেছিলেন, ভারত থেকে হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে ‘বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে ভারত। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ রাতে ফ্যাসিবাদের আস্তানা থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ।’ প্রতিক্রিয়ায় ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ।
হাসিনার পারিবারিক বাড়িটির কী হয়েছে?
বুধবার সন্ধ্যার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তা জোরদার করতে সেনাবাহিনীর একটি দল পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য যোগ দেয়। তবে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বাগবিতণ্ডার পর তারা সেখান থেকে সরে যায়। এরপর আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং এক্সে নিজের লাইভ বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারকে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ করেন হাসিনা। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-জনতা। তারা লাঠি, হাতুড়ি এবং অন্য সরঞ্জাম নিয়ে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি অন্য কেউ ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ক্রেন ও বুলডোজার নিয়ে আসে। এরপর বুলডোজার দিয়ে যখন বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়, তখন উল্লাসে ফেটে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। তারা স্লোগান দিতে থাকে—‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও। দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা।’
আলজাজিরাকে সাঈদ আহমেদ নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, এ বাড়িটি ফ্যাসিবাদের প্রতীক। অন্যদিকে পালিয়ে থেকেও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন হাসিনা। তাই আমরা ফ্যাসিবাদের কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট রাখব না। অবশ্য এ বিষয়ে দর্শকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে এসেছিলেন ইকবাল নামের এক যুবক। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, নিঃসন্দেহে হাসিনা দোষী; তার কারণেই মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করেছে। কিন্তু বাড়িটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। আমি মনে করি না যে পদক্ষেপটি সঠিক। তবে তার পাশে থাকা বন্ধুটি বলেছেন, তিনি এ পদক্ষেপকে অবশ্যই ঠিক বলে মনে করেন।