![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/03adf54b6a5e67ba4cce453d9e74e173.jpg)
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বুধবার ফেরত পাঠানো হয়েছে ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে। বিমানে হাতে হাতকড়া, পা শিকলে বেঁধে তাদের আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাদের একজন।
পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরে মার্কিন সামরিক বিমানটি বিমানবন্দরে নামার পরই বাঁধন খোলা হয় তাদের। এভাবে ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর ঘটনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সংসদেও হয়েছে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী এমপিরা। এই ক্ষেভের মুখে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে যাতে কোনো দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারত সরকার আলাপ করছে। তিনি জানান, মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থা জানিয়েছে, প্রত্যর্পণের সময় নারী ও শিশুদের আটকে রাখা হয়নি। যাত্রীদের শৌচালয়ে যাওয়াতেও কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে ফিরে আসা ভারতীয়রা যে কষ্ট পেয়েছেন, তা তারা জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জয়শংকর। ভারত সরকার এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪০ ঘণ্টার যাত্রায় অমৃতসরে ১০৪ জন ভারতীয় অবৈধবাসীকে নিয়ে এসে পৌঁছায় মার্কিন সামরিক বিমান। সেই বিমানে ৭২ জন পুরুষ, ১৯ জন মহিলা এবং ১৩ জন শিশু ছিল। সেই বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতার বিষয়ে লাভপ্রীত বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, যেন আমরা হার্ডকোর ক্রিমিনাল।’ নিজের ১০ বছরের শিশুকে নিয়ে আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে এসেছেন লাভপ্রীত। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। আমাদের পা চেন দিয়ে বাঁধা ছিল। সেই চেন কোমরেও বাঁধা ছিল। বাথরুমে যেতে চাইলে পায়ের চেন খোলা হয়নি।’
এর আগে আমেরিকার সীমান্ত নজরদারি বাহিনীর প্রধান মাইকেল ব্যাঙ্কস অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে পায়ে চেন বেঁধে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের মার্কিন বিমানবাহিনীর সি-১৭ বিমানে ওঠানো হচ্ছে। হাত সামনের দিকে রাখা আছে। এভাবে ভারতীয় অবৈধবাসীদের আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে সংসদে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর জানান, বিমানের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরানোর যে নিয়ম আছে, তাতে বিধিনিষেধের ব্যাপার আছে। তবে আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে যে মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সেরকম কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সেইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। শৌচাগারে গেলে অবৈধ অভিবাসীদের উপরে কোনও বাধানিষেধ চাপানো হয় না। বুধবার যে বিমান এসেছে, তাতে যাবতীয় নিয়ম পালন করা হয়েছে বলে আমেরিকার তরফে দাবি করা হয়েছে।
গত মাসে কোনও কাগজপত্র ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে দালের সিংয়ের ছয় মাস সময় এবং ৪৫,০০০ ডলার খরচ হয়েছিল। পৌঁছানোর তিন সপ্তাহের মধ্যে, তাকে একটি সামরিক বিমানে তার জন্মস্থান ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, পুরো যাত্রা জুড়ে তার হাত ও পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায়। ৩৭ বছর বয়সী সিং বুধবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্বাসিত ১০৪ জন ভারতীয়ের মধ্যে ছিলেন, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হলেও, ভারতের জন্য একটি বিব্রতকর ঘটনা, যে ভারতের ঘনিষ্ঠ অংশীদার, যার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ ১৫ জানুয়ারী তাকে আটক করে এবং তারপর তাকে এবং অন্যদেরকে এই সপ্তাহে একটি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানে করে দেশে ফেরার জন্য নিয়ে যায়। ৪ থেকে ৪৬ বছর বয়সী ২৫ জন নারীসহ ১০৪ জন ভারতীয়ের প্রত্যাবর্তন দেশের বিরোধী দলগুলোকে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগ করে দিয়েছে, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেছেন। বহিষ্কৃতরা ভারতের পাঁচটি রাজ্যের, যার মধ্যে মোদির নিজ রাজ্য গুজরাট এবং চ-ীগড়ের ফেডারেল অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।