![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/a589c1a03fcf88fe4387dc2242fcffc6.webp)
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স যত বাড়ছে, ততই নানামুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার গঠনের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে এ সরকারকে ব্যর্থ করতে ভিতরে-বাইরে চলছে ষড়যন্ত্র। আশার কথা, এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অর্ধবছরে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনায় ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আরও চারটি কমিশনের রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে আজ। সব কমিশনের রিপোর্টের পর শুরু হবে নির্বাচন অভিমুখে যাত্রা।
সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুসারে দেশের সংস্কার কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিয়েও তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভা ছাড়াও সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ড. ইউনূস একের পর এক নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ, আইএলও, ইউরোপীয় কমিশন, বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাপ্রধানদের কাছে দেশের সংকট সমাধানে সহায়তা চেয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে আরও বেশি সোচ্চার হতে জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এত সব উদ্যোগের পরও সরকারের চ্যালেঞ্জ কমছে না। সরকার গঠনের পর থেকেই একের পর এক দাবিদাওয়ার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর ফলে সরকারের লক্ষ্যপূরণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতাও সংকট তৈরি করেছে। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। বেড়েছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই। শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো সব বই পৌঁছে দেওয়া যায়নি। প্রশাসনিক কাজেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সরকার গঠনের পর ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে সরকার। তবে জনবল, অস্ত্র, যানবাহনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সে প্রচেষ্টা খুব একটা সাফল্য পাচ্ছে না। এরই মধ্যে পুলিশের মনোবল ফেরত আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনেও ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে। পুলিশে নতুন জনবল নিয়োগ হলে যানজট নিরসন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ ও সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি বেড়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ছাত্রদের জুলাই ঘোষণা নিয়ে এখনো মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট যে রাজনৈতিক ঐকমত্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল, ছয় মাস পরে এসে নির্বাচন ইস্যুতে সেখানে কিছুটা মতদ্বৈধতা দেখা যাচ্ছে। এ সরকার যখন ছয় মাস পূর্তিতে পা দিয়েছে, সে মুহূর্তেও নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ছাড়াও সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। বেকার হচ্ছে শত শত শ্রমিক। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কাটেনি। উপরন্তু সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েই চলেছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বাড়ছে। উন্নয়ন ব্যয় কমছে অথচ বাড়ছে অনুন্নয়ন খরচ। শীতে সবজির দাম কমলেও মূল্যস্ফীতি এখনো ২ অঙ্কের কোঠায়। এরই মধ্যে ভোক্তার খরচ বাড়াতে কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে এখনো তারল্যসংকট রয়ে গেছে। ডলারসংকটও কাটেনি। কাঁচামাল আমদানিতে ব্যর্থ হয়ে ঘোষণা দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা আস্থার সংকটে ভুগলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আস্থা ফেরানোর মতো কোনো বার্তা আসেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করলেও সে সুপারিশ অনুযায়ী এখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি সরকার।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও জনজীবন এবং ব্যবসাবাণিজ্যে স্বস্তি আনার মতো কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে তেমন কোনো চাঞ্চল্য দেখছি না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অনেক খাতভিত্তিক সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছে। অর্থনীতিকেন্দ্রিক কিছু সংস্কার আমরা লক্ষ করছি। তবে এখন পর্যন্ত জনগণের জীবনে কিংবা ব্যবসাবাণিজ্যের অঙ্গনে স্বস্তি আনার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।’