সারা দেশে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, গণ-অভ্যুত্থানের ৬ মাস পরে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এটাকে নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দলটি। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে। আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনিধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় বৈঠকটি শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর ১টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না বিএনপি। এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিও দেবে না। কিন্তু বিষয়টিকে যে তারা সমর্থন করে না, সেটি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্যদিয়ে তুলে ধরবে দলটি।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি সারা দেশে সংঘটিত ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। একইসঙ্গে এটাকে এক ধরনের ফাঁদ হিসেবেও মনে করছে তারা। এজন্য নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা তৃণমূলে দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন কোনো প্রকার জড়িত না হয়।
সূত্র আরও জানান, বৈঠকে নেতাদের অভিমত, একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য হলো- নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা। যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। তাই বিএনপি মনে করে, এমন অবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এরমধ্যে আছে বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলায় জেলায় সমাবেশ। এই ইস্যুতে রমজানের আগেই কর্মসূচি পালিত হবে। আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। মূলত নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি।
বৈঠকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে) উপস্থিত ছিলেন।