'গণহত্যার ঘটনায় তদন্ত চলছে হাসিনাসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে' প্রথম আলো পত্রিকার শিরোনাম এটি। এ খবরে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা গেছে ৩৪ জনকে। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মামলা (মিস কেস) হয়েছে ১৬টি। এই মামলাগুলোতে আসামির সংখ্যা ১০৮। তবে একটি মামলারও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো ট্রাইব্যুনালে জমা হয়নি। এই ১৬ মামলা এখন প্রাক্-বিচার পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করলে এসব মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গণ-অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে এই ট্রাইব্যুনালে। যদিও এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় সূত্র বলছে, গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যা এবং আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩০০টির মতো অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ যাচাই–বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে ১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা হয়েছে গুমের ঘটনায়। বাকি ১৩টি মামলা হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। ১৬ মামলার মধ্যে ২টিতে আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তার বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ (একটি মামলায়) আনা হয়েছে। এ মামলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা হয়েছে গুমের অভিযোগে। সেই মামলার শুনানি ১২ ফেব্রুয়ারি।
এখন পর্যন্ত একটি মামলাতেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত বিস্তৃত ও জটিল বিষয়। এই অপরাধ দেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে। ফলে মামলার সাক্ষী ও তথ্য-উপাত্ত বিপুল। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসংগত সময় প্রয়োজন। বেশি তাড়াহুড়ো করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ত্রুটি থাকতে পারে, এতে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেশবাসীর উচিত হতাশ না হয়ে যুক্তিসংগত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। চলতি মাসের শেষ দিকে কিংবা মার্চের শুরুর দিকে দু-তিনটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
'এজেন্সির লোভে টিকিট দুর্মূল্য' কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম এটি। এ খবরে বিমানের ভাড়া নিয়ে যে নৈরাজ্য হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, অতি মুনাফালোভী কিছু ট্রাভেল এজেন্টের লোভের মাশুল গুনছে প্রবাসীসহ সাধারণ বিমান যাত্রীরা। এই চক্রের সিন্ডিকেটের কবজায় বিমানের টিকেট বাণিজ্য। তারা এয়ারলাইনসগুলোর টিকেট আগাম ব্লক করে নিজেদের জিম্মায় রেখে পরে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। ফলে বিদেশগামী বিমানের যাত্রীদের স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে হচ্ছে। যাত্রী, কর্মী ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সংবাদটিতে। জানা যায়, ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার টিকেট তাদের সিন্ডিকেটের কারণে কিনতে হচ্ছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী ও দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে প্রভাবশালী এক সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে।
‘আগে শত্রু মনে হতো একটা, এখন মনে হচ্ছে চতুর্মুখী’-প্রথম আলো পত্রিকার আরেকটি শিরোনাম এটি। পত্রিকাটিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তথ্য উপদেষ্ঠা নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেছেন। প্রথম আলো থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়-এই সরকারের ওপর মানুষের আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। একটা বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল সিন্ডিকেট করে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হতো, এটা আর হবে না। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার আসলে কী করছে, মুখের কথায় তো আর স্বস্তি আসে না। এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই বাস্তবতা তো আসলে আছে। এটা নিয়ে আমরাও আসলে অনেকটা বিব্রত। মানুষ চেয়েছিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিটা সামাল দেয়া যাবে...কিন্তু এই সরকার তো আগের সরকারের ধ্বংসাবশেষের ওপর তৈরি হয়েছে। আমরা আমলাতন্ত্র, পুলিশকে যে জায়গায় পেয়েছি...সরকারকে সেই জায়গা থেকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা, ষড়যন্ত্র...। আগে শত্রু মনে হতো একটা, এখন মনে হচ্ছে চতুর্মুখী। নানা ধরনের শত্রু আছে। যেভাবে চাঁদাবাজি বেড়েছে...মানুষের তো এটাও প্রত্যাশা ছিল যে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হবে। যে দলগুলো অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের কর্মীরাই তো চাঁদাবাজিতে। সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা তো তাদের পক্ষ থেকেও লাগবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে শুধু গ্রেপ্তার করে বা আইনশৃঙ্খলা দিয়ে তো এটার পরিবর্তন হবে না।
নিচে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
প্রথম আলো: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছে। দুজন উপদেষ্টার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে ধারণা করা যায়, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে আপনারা দলে যোগ দিতে যাচ্ছেন...
নাহিদ ইসলাম: উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। হয়তো আরেকটু সময় লাগবে। আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করছি কোথায় আমাদের ভূমিকাটা সবচেয়ে বেশি হবে— সরকারের ভেতরে নাকি বাইরে, মাঠে। শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন, এই সময়ে বা সামনের দিনগুলোর জন্য তাদের সংহত ও ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের ব্যানারে সক্রিয় হয়েছে। তাদের কর্মীরা নিজ নিজ ব্যানারে চলে গেছেন। কিন্তু যাদের কোনো দল নেই, তাদের মধ্যেও একধরনের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আছে। নেতৃত্ব বা রাষ্ট্র গঠনে তারাও ভূমিকা রাখতে চান। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকেই এ ধরনের একটা আলাপ ছিল। সেই সময় আমরা ভেবেছি রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে সংহত করা প্রয়োজন। আমরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে এসেছি। আমাদের কিছু অঙ্গীকার আছে। সেটা বাস্তবায়ন করে সরকার ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেই বিষয়টা এখন পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে।
প্রথম আলো: আপনি কি নতুন দলে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: সরকার ছাড়ার সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদি সে রকম হয়, তখন...।
প্রথম আলো: দলের নাম বা আত্মপ্রকাশের সময়ের ব্যাপারে কি কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে?
নাহিদ ইসলাম: যতটা জানতে পেরেছি, কোনো নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে দলের আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। ১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটা হতে পারে, এমনটাই এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।
প্রথম আলো: শোনা যাচ্ছে, ছাত্র উপদেষ্টাদের তিনজনের একজন হয়তো প্রথমে নতুন দলে আসবেন, দুজন আপাতত সরকারে থেকে যাবেন।
নাহিদ ইসলাম: হতে পারে।
প্রথম আলো: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। আপনি নিজেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, মির্জা ফখরুলের দাবির মধ্যে আরেকটি এক-এগারোর ইঙ্গিত দেখেন। এক-এগারোর সরকারের সময় বিএনপির অভিজ্ঞতা তো সুখকর নয়। তাহলে আপনার কেন মনে হলো, বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যে এক-এগারোর ইঙ্গিত আছে?
নাহিদ ইসলাম: বিএনপির মহাসচিব যে অর্থে নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছেন...। এই সরকার তো যথেষ্ট নিরপেক্ষ। সরকার বিএনপির সঙ্গে একধরনের আলোচনার মধ্য দিয়েই বড় সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে। রাষ্ট্রপতিকে পরিবর্তনের বিষয়ে ছাত্ররা দাবি জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে যেহেতু সমর্থন ছিল না, ঐকমত্য ছাড়া সরকার এ বিষয়ে এগোয়নি। আমরা এটাও বলেছি, রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিলে আমরা সরকার থেকে বের হয়ে গিয়েই করব। কিন্তু যেভাবে নিরপেক্ষতার কথা বলা হচ্ছে, তাতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে আরেকটা সরকারের পরিকল্পনা বিএনপির আছে কি না বা বিএনপি এটা চায় কি না, সেই প্রশ্ন আসছে। যদি চেয়ে থাকে, সেটা একটা এক-এগারো টাইপের সরকার হবে। আগেরবারের ভুক্তভোগী ছিল বিএনপি। পরে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে ওই সরকার (এক-এগারোর) আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। সে ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই জায়গা থেকে আমি কথাটা বলেছি। আগেরবারের ভুক্তভোগী হলেও এবারের সুবিধাভোগী তারা (বিএনপি) হতে পারে একটা ‘এক-এগারো’ ধরনের সরকার করলে। অবশ্য বিএনপির মহাসচিব খুব ইনটেনশনালি (উদ্দেশ্যমূলক) এটা বলেছেন বলেও আমি মনে করি না।
প্রথম আলো: এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির কথার ‘টোন’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আপনার কেন এমন মনে হচ্ছে?
নাহিদ ইসলাম: বিএনপি এর আগেও বলার চেষ্টা করেছে যে এটা অনির্বাচিত সরকার; দ্রুত একটা নির্বাচিত সরকার হতে হবে। আওয়ামী লীগও বলছে, এটা অনির্বাচিত, অবৈধ, অসাংবিধানিক সরকার। বিএনপিও যখন সে ধরনের বক্তব্য দেয়, তখন কিন্তু প্রশ্ন ওঠে সরকারকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটা কী। সেই জায়গায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কিন্তু অনেক ধরনের মিল পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ইস্যু, জুলাই ঘোষণাপত্র ইস্যুতেও বিএনপি বলতে গেলে ছাত্রদের সঙ্গে অবস্থানটা নেয়নি। এ কারণে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিএনপি যেটা বলার চেষ্টা করছে যে এটা অনির্বাচিত সরকার, এই কথাটা তো ভুল আসলে। এই সরকারের বৈধতা তো নির্বাচন নয়। কারণ, ক্ষমতার পটপরিবর্তন তো নির্বাচনের মাধ্যমে হয়নি, একটা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানের সমর্থনই তো থাকে। সেটাই আছে এবং একটা অন্তর্র্বতী সময়ের জন্য এসেছে। এই সরকারকে অনির্বাচিত, অবৈধ, অসাংবিধানিক বলাটা—আওয়ামী লীগ-বিএনপি তো কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমি বলেছি, এটা যাতে আমরা খেয়াল রাখি আওয়ামী লীগ যে দৃষ্টিতে সরকারকে দেখে ও ব্যাখ্যা করে, বিএনপি যদি সেই দৃষ্টিতেই ব্যাখ্যা করা শুরু করে, তাহলে জনগণ তাদের মধ্যে তো পার্থক্য পাবে না।
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সম্প্রতি এ বক্তব্য দিয়েছেন। সরকার কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে?
নাহিদ ইসলাম: মাহফুজ আলম রাজনৈতিক জায়গা থেকে কথাটা বলেছেন। আমরা যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করছি, আমরাও মনে করি যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বা নৈতিক অধিকার নেই এই দেশে এই (আওয়ামী লীগ) নামে বা এই আদর্শ নিয়ে আর রাজনীতি করার। এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া এগোলে আদালত থেকে সুপারিশ আসতে পারে, নির্বাচন কমিশন থেকে সুপারিশ আসতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত থাকবে। এসব বিবেচনায় হয়তো আমরা আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। তার আগে বিচার কার্যক্রমটা প্রধান। বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা বুঝতে পারব আওয়ামী লীগের দল হিসেবে অংশগ্রহণ (গণহত্যায়) কতটুকু, দলটির নেতা-কর্মীদের কত অংশ জড়িত এবং কীভাবে অপরাধটা সংঘটিত করেছিলেন।
প্রথম আলো: জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি এখন সরকারের কাছে কোন পর্যায়ে আছে?
নাহিদ ইসলাম: বিএনপি তাদের খসড়াটা এখনো দেয়নি। তারা বলছে, তারা তৈরি করছে, খুব দ্রুতই দেবে। অন্য অনেক দল তাদের খসড়া পাঠিয়েছে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে অনেক আগে। সরকারের জায়গা থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। এখন এটা মূলত বিএনপির অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে।
প্রথম আলো: জুলাই অভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারকে কেন বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য? অনেকেই বলছেন, আহত ও শহীদ পরিবার সরকারের যথাযথ মনোযোগ পাচ্ছে না।
নাহিদ ইসলাম: কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কিছু ক্ষেত্রে ধীরগতি হয়েছে। কিন্তু সরকারের সব ধরনের উদ্যোগ চলমান আছে। শহীদ পরিবারগুলোকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করেছে। সরকারের জায়গা থেকে তাদের (পরিবারপ্রতি) জন্য ৩০ লাখ টাকা করে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, যেটা এই মাস থেকে দেওয়া শুরু হবে ১০ লাখ করে। আহতদের জন্যও একটা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর শিগগিরই কাজ শুরু করবে। এই অধিদপ্তর সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে তাদের জন্য সারা জীবন কাজ করবে।
প্রথম আলো: তারপরও কিছুদিন পরপরই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে হচ্ছে...
নাহিদ ইসলাম: বিচারের বিষয়টা তাঁদের (শহীদ পরিবার ও আহতরা) খুব ভাবাচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়টাও তাঁদের ভাবাচ্ছে। এখনো যেহেতু পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মী যাঁরা মামলার আসামি, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাশাপাশি বিচার না হওয়ার কারণে তাঁদের ভেতরে একধরনের ক্ষোভ ও ট্রমা রয়ে গেছে।
প্রথম আলো: এগুলো তো আপনাদেরই দায়িত্ব। তাঁরা যাতে উদ্বিগ্ন না হন, বিচার যাতে ঠিকমতো হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আপনাদেরই।
নাহিদ ইসলাম: আমরা বারবার তাঁদের সঙ্গে বসছি, কথা বলছি। সামাজিকভাবে তাঁরা চাইছেন জুলাইয়ের স্বীকৃতিটা। জুলাইয়ের ঘটনাগুলো মানুষ আরও বেশি করে মনে রাখবে, তাঁদের সম্মান দেবে, এই প্রত্যাশাও তাঁদের মধ্যে আছে। সেই জায়গা থেকে সামাজিকভাবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও কথা বলা উচিত, তাঁদের নিয়ে আরও আয়োজন করা উচিত। আমরা যদি জুলাই ঘোষণাপত্রটা দিতে পারতাম, সেখানে শহীদ ও আহতদের একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হয়ে যেত। আমি মনে করি, এটা শুধু সরকারের একক ব্যাপার নয়। তাঁরা চাইছেন, তাঁরা পাবলিক মেমোরিতে (জনগণের স্মৃতি) অনেক বেশি করে থাকবেন, তাঁদের ট্রমাটা দূর হবে। দেশের সবারই শহীদ ও আহতদের বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সরকারের জায়গা থেকে উদ্যোগগুলো কিন্তু চলমান আছে। আশা করি, তাঁরা খুব দ্রুতই সেই সুবিধাগুলো পাবেন।
প্রথম আলো: জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারিতে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল নারীরা। কিন্তু আন্দোলনের পর সংস্কার কিংবা পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা-সব জায়গা থেকে তারা কেন ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল? সরকারের কি এখানে কিছু করার নেই?
নাহিদ ইসলাম: এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের একটা বাস্তবতা আছে। তখন জাতি নারীদের অংশগ্রহণকে সেলিব্রেট (স্বাগত) করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি মানুষ এখনো ওইভাবে সেলিব্রেট করে না। আপনি দেখবেন, আমাদের যাঁরা নারী আন্দোলনকারী বা সমন্বয়ক আছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা কিন্তু নানা ধরনের ‘বুলিংয়ের’ শিকার হচ্ছেন। আমাদের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, মারামারি-হানাহানির সংস্কৃতি আছে, যেটা এখনো যায়নি। সেই জায়গা থেকে পরিবারগুলোর শঙ্কা থাকে। সমাজ তাঁদের নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সেই জায়গা থেকে নারীদের বড় অংশ ঘরে ফিরে গেছে। তারপরও আমি মনে করি তাদের মধ্যে এখনো সেই বিপ্লবী চেতনাটা আছে। তাঁরা আমাদের সঙ্গে নানাভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়, যুক্ত থাকতে চায়। আমরাও বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই একটা কর্মসূচি করেছেন জুলাই কন্যাদের নিয়ে, যে নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আন্দোলনে ছিলেন। বিদেশে বিভিন্ন লিডারশিপ ও ট্রেনিং প্রোগ্রামে আমরা নারীদের পাঠাচ্ছি। আমরা এমন নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। নারীদের রাজনীতি বা নেতৃত্বে আরও বেশি অংশগ্রহণের জন্য আসলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা দরকার।
প্রথম আলো: ৫ আগস্টের পরও গণমাধ্যমের ওপর হুমকি-চাপ দেখা গেছে। আপনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করছেন। মুক্ত গণমাধ্যম, ভয়ভীতিমুক্ত গণমাধ্যম—এটা নিয়ে আপনার কী চিন্তা?
নাহিদ ইসলাম: আমার জানামতে, ৫ আগস্টের পর সরকারের সমালোচনা করার কারণে কোনো গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ তৈরি করা হয়নি। আমরা বলেছি, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন, মামলার আসামি, ফ্যাসিস্টদের সহযোগী—এদের বিষয়ে যাতে গণমাধ্যমগুলো সতর্ক হয়। পাশাপাশি ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে যাতে তারা সতর্ক হয়।
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের জায়গা থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সামাজিক চাপ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার কিন্তু গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গ্রুপ আন্দোলন করেছে, সরকারের জায়গা থেকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জায়গা থেকে গণমাধ্যমকে সমর্থন করা হয়েছে। কড়া বার্তা (বিশৃঙ্খলাকারীদের) দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের রাজনৈতিকভাবে অনুসন্ধান করা উচিত, কেন জনগণের একটা অংশ গণমাধ্যমের ওপর ক্ষুব্ধ, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল। এই সরকার চায় গণমাধ্যম উন্মুক্ত থাকুক, যৌক্তিকভাবে তারা সমালোচনা করুক এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করুক। কিন্তু ১৫ বছর বিভিন্ন গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা পেশাদারত্ব বাদ দিয়ে যে ধরনের অবস্থান নিয়েছেন, সে বিষয়ে গণমাধ্যমের জায়গা থেকেও কিন্তু কোনো বক্তব্য আসেনি। কোন পরিস্থিতিতে বা কেন তারা সংবাদ প্রচার করতে পারেনি, কোন ধরনের চাপে তারা ছিল, গণমাধ্যমগুলোর জায়গা থেকেও আসলে এই বক্তব্যগুলো আসা প্রয়োজন। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই মুক্তভাবে সরকারের সমালোচনা করুক। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা সমালোচনাগুলোকে ‘অ্যাড্রেস’ (বিবেচনায় নেওয়া) করি। সেই অনুযায়ী আমরা আমাদের অনেক নীতি পরিবর্তন করেছি, সামনেও করব।
প্রথম আলো: গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে এখন নানা রকম দূরত্ব ও বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। ছাত্ররা কোনো একটা ইস্যুতে এগোলেই দেখা যায় একটা বিরোধিতা তৈরি হয়। অভ্যুত্থানে কার কতটুকু অংশীদারত্ব, সেটা নিয়েও রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক তৈরি হলো।
নাহিদ ইসলাম: অভ্যুত্থানের পর আমরা নিজেদের অনেক দলীয় স্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ইত্যাদিতে ঢুকে গেছি। এটার কারণে অনেক বিষয়ে আমরা এক থাকতে পারিনি। শুধু তো রাজনৈতিক দল নয়, এই যে এত এত আন্দোলন হচ্ছে, সবাই নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থের আন্দোলন করছে। আমাদের তো এখন জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সবার এক হয়ে কাজ করা উচিত ছিল। সেই ঐক্যটাও দেখা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তেই নিজ নিজ স্বার্থ আদায় করে নিতে চাইছে। তারপরও আমি মনে করি না যে ঐক্য পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছে। ভিন্নমত তৈরি হচ্ছে, সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হচ্ছে। আমাদের আগের যে ট্র্যাডিশন (ঐতিহ্য), একেবারে বিরোধাত্মকভাবে প্রতিহিংসা, সেই জায়গায় আমরা যাচ্ছি না এখনো। সংস্কারের জায়গায় আমাদের কতটুকু ঐকমত্য হচ্ছে, সেটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে ঐক্য আসলে কতটুকু আছে আর কতটুকু নেই।
প্রথম আলো: সংস্কার না নির্বাচন-রাজনীতিতে একটা মুখোমুখি অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম: সংস্কার আর নির্বাচনকে আমরা তো আলাদা করে দেখি না; বরং নির্বাচনকে প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) দিয়েই সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে। যে ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এগুলো কিন্তু শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু নির্বাচন ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছয়টা সংস্কার কমিশন হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি ও জামায়াত, তাদের একটা রাজনৈতিক কৌশলের জায়গা থেকে নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচনের কথা বলা ছাড়া এই মুহূর্তে বিএনপির কোনো রাজনীতিও নেই আসলে। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, সেই সংস্কার তো সরকার এই সময়েই করতে আগ্রহী ও উদ্যোগী। তবু তারা একটা চাপ তৈরি করছে। এটাকে আমরা খুব একটা নেতিবাচকভাবে দেখি না। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে সময় চাইছি এবং ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্যই সরকার চালানো কঠিন হবে। মানুষের প্রত্যাশা যদি পূরণ না হয়, পরিবর্তন যদি না দেখে, মানুষের সেই ক্ষোভ কিন্তু যাবে না।
প্রথম আলো: গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের ওপর মানুষের ব্যাপক প্রত্যাশা। গত ছয় মাসে সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন আপনারা? আপনি ১০-এর মধ্যে কত দেবেন?
নাহিদ ইসলাম: আমি ৫০ শতাংশের কিছু কম দেব। সরকারের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছাটা সম্পূর্ণভাবে আছে। যদি রাজনৈতিক দল, অভ্যুত্থানের শক্তি এবং সাধারণ মানুষের জায়গা থেকে আরও সহযোগিতা পাওয়া যায়, আমরা আশা করি সরকার আরও কার্যকর হতে পারবে। মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকতে পারে, পরিবর্তনের স্বাদ সবাই পেতে চায়। কিন্তু আমাদের কাজগুলো করতে হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। সংস্কার, বিচার এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন-এই তিনটা আমাদের বেসিক লক্ষ্য। এ ছাড়া আছে রুটিনওয়ার্ক—আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য। এই পাঁচটা জিনিসকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। কিন্তু এর মধ্যে যে নানা আন্দোলন ও দাবিদাওয়া, এ বিষয়গুলো আসলে আমাদের কাজে অনেক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নানা আন্দোলন কিন্তু সেভাবে আগের মতো দমন করা হচ্ছে না। আমরা সেটা করতেও চাই না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা হচ্ছে।
'এলএনজিতেই ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা' এটি নয়াদিগন্ত পত্রিকার শিরোনাম। এতে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদনের মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিলাসী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন হবে তা নিশ্চিত করা হয়নি। এ কারণে উচ্চ দরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে। এ দিকে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। বর্তমানে চাহিদার ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বছরে ভর্তুকি দিতে হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে। চাহিদার অর্ধেক এলএনজি আমদানি করতে দেশে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বতী সরকার জ্বালানি নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় এলএনজি মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। দাম কম থাকার সময় বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করে মজুদ করা হবে। প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে ১০০ গ্যাস কূপ খনন করা হবে। পাশাপাশি সাগরে গ্যাস ব্লকগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হবে। সরকারের এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে গরিবের সুরক্ষায় ভাটা-এটি সমকাল পত্রিকার শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। সামগ্রিক আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ঘাটতি রয়েছে। ঋণ পরিশোধে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় এ খাতে ভর্তুকি বাবদ বাড়তি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি। এসব ক্ষেত্রে বাড়তি অর্থের তেমন সংস্থান করা যাচ্ছে না। খাদ্য সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ বা আংশিক চালু থাকার পর সামাজিক সুরক্ষার আওতায় কয়েকটি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকা হালনাগাদ করে ফের চালু করা হচ্ছে।
'বাজার থেকে আবার উধাও সয়াবিন তেল' এটি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শিরোনাম। খবরটিতে বলা হয়, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন, পাম অয়েলের বাজার স্থিতিশীল। দেশেও যে পরিমাণে সয়াবিন, পাম অয়েল আমদানির পাশাপাশি পাইপ লাইনে রয়েছে তাতে আসন্ন রমজানে সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রমজানের এক মাস আগেই ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানের সেই পুরোনো পথে হাঁটছেন। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয় খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অবস্থা। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
'বোরো মৌসুমের আগে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি' বণিক বার্তা পত্রিকার শিরোনাম এটি। খবরে বলা হয়, দুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের উৎপাদন। বোরোয় এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য কৃষি খাতে সহজ শর্তে সুলভ ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছিল বেশি।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বোরো মৌসুমের আগে দেশের কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশের কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৮০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।