চট্টগ্রামে ২০০ কোটি টাকার লোভে দিনদুপুরে বাড়ির মালিককে জিম্মি করে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। মঙ্গলবার নগরীর পাঁচলাইশে একটি বাসায় গৃহকর্মীসহ ডাকাতরা প্রবেশ করে ডাকাতির চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দুই ডাকাতকে গ্রেফতার এবং বাড়ির মালিককে উদ্ধার করে। নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডের বাসায় আল-হিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশের ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যরা দুপুর ২টার দিকে পুরো ভবন ঘিরে ফেলে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের নেতৃত্বে রুদ্ধশ্বাস অভিযানে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাড়ির মালিক মোহাম্মদ লোকমানকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি দুই ডাকাতকে আটক করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান বাসায় একাই থাকতেন। আগস্টের শেষের দিকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবুল খায়ের গ্রুপের কর্ণধার আবুল খায়েরের মেয়ে জামাতা। জ্বালানি সেক্টরে কর্মরত থাকাকালে লোকমান বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। বাসায় তিনি ২০০ কোটি টাকা রেখেছেন বলে ডাকাতদের কাছে তথ্য ছিল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ষষ্ঠতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন লোকমান। বেলা ১১টার দিকে গৃহকর্মীসহ চার ডাকাত তার বাসায় প্রবেশ করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লোকমানকে বাথরুমে জিম্মি করে। এ সময় লোকমানকে তারা টাকা বের করে দিতে বলে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। তাকে রামদা দিয়ে আঘাত করা হয়। অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন ও প্রতিবেশীরা টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। বেলা ২টার দিকে পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যদের যৌথ দল ভবনটিতে ঢোকে। লোকমানকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারের পাশাপাশি ডাকাত বায়েজিদ শেখকে আটক করে। এছাড়া পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাত মো. আকাশকে আশপাশের লোকজন ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানায়, পলাতক দুজনের মধ্যে একজনের নাম সাব্বির ও অপরজনের নাম রিয়াদ। সাব্বির ভবনে গৃহকর্মীর কাজ করে। রিয়াদও ওই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করত। দুই পেশাদার ডাকাতকে নিয়ে তারা ভবন মালিককে জিম্মি করে।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, দুপুর ১২টায় পুলিশ খবর পেয়ে পুরো ভবন ঘিরে ফেলে। এরপর র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে যোগ দেয়। ভবনের মালিক লোকমানকে ডাকাতরা বাথরুমে বন্দি করে রেখেছিল। পাঁচ মিনিটের অপারেশনে আমরা তাকে উদ্ধার করি। তিনি কিছুটা আহত হয়েছেন। তাকে আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তিনি আরও বলেন, তাকে রক্ষা করার জন্য আমরা একটি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছি। এ ঘটনায় দুজন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছি।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর খুলশী এলাকায় যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটে একটি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতদের কাছে তথ্য ছিল গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটে ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা করে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ২০ জনের একটি দল সেই ফ্ল্যাটে যায়। টাকা আনতে নিয়ে যান ২০টি বস্তা ও দুটি মাইক্রোবাস।