Image description
সাক্ষাৎকার : এম শাহীদুজ্জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এম শাহীদুজ্জামান বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন ও তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ, চীন, আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে না পারলে এবং আরাকান আর্মির তাণ্ডব ও বিচ্ছিন্নতাবাদিদের কবল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরাকানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর একটা ফুটহোল্ড বা উপস্থিতি বা নিয়ন্ত্রণ দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামাল দিতে হলেও সামরিক প্রভাব ছাড়া হবে না। বরং ভারত পুরো বিষয়টিকে সুযোগ পেলে স্যাবোটাজ করবে।

অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতেই হবে। তা না হলে তাদের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে, রোহিঙ্গারা না খেয়ে মরলে এর প্রভাব আমাদের সমাজে পড়বে। রোহিঙ্গাদের সেকেন্ড জেনারেশন ভিক্ষা করে বাঁচতে চায় না, তারা অসহায় হয়ে মরতে চায় না। তারা তাদের দেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। আরাকান আর্মির পাশাপাশি রোহিঙ্গা আর্মি ডেভেলপ করা দরকার। রোহিঙ্গা আর্মি ও আরাকান আর্মি পাশাপাশি থাকবে রাখাইনে। একটা বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে ওই এলাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপদ থাকবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম শহীদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই আগোচ্ছে। আরাকান আর্মিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সামরিক প্রভাবের কোনো বিকল্প নেই।

নয়া দিগন্ত : দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় কূটনীতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করে আসছে, বারবার মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি উপরন্তু এখনো রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে তাদের আগমন আরো বড় আকারে হতে পারে। কেন এমন হচ্ছে?

এম শাহীদুজ্জামান : রোহিঙ্গা সঙ্কটের পুরো বিষয়টিকে দেখা হয়েছে শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি সামনে রেখে। ফলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও চীন সরকারের ওপর ভরসা করে থাকতে হয়েছে। তারা নন স্টেট অ্যাক্টের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে আমরা নন স্টেট অ্যাক্টের ছিলাম ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। হাসিনার শাসনামলে মিয়ানমারের রেজিমকে কনফিডেন্সে রাখতে চাওয়া হয়েছে। এটা ফ্যাসিজমের জন্য অত্যন্ত কার্যকর নীতি ছিল। বার্মা অ্যাক্টকে পাত্তা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে বার্মা অ্যাক্টের ট্র্যাপে আমাদের পা দেয়া উচিত না। আমেরিকানদের সাথে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জড়ানো ঠিক হবে না। কিন্তু রাখাইনে আরাকান আর্মির সাথে কিন্তু আমেরিকানরা ঠিকই শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। অস্ত্র দিয়েছে। আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। মাঝখান থেকে বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন করা তো সম্ভব হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে। আফগানিস্তান, ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে আমেরিকানদের ওপর আস্থা না রাখার কথা বলা হয়েছে। অথচ ২০১৮ সাল থেকে প্রতিটা বছর লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে পালতে হয়েছে যার খরচ বহন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন ঘুরেও তাকায়নি। চীন মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পেছনে এত অর্থ খরচ করেছে, এমনকি ট্রাম্পের এই শাসনামলেও অর্ধেক খরচ দিচ্ছে, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনো ইন্টারেস্ট বা স্বার্থ থাকবে না?

এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ ও সামরিক স্টাবলিস্টমেন্টের চিন্তাধারায় এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে এবং অনেক কিছুই তারা গোপন রাখছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে এ ধরনের উদ্যোগে রাষ্ট্রের স্বার্থেই অনেক গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। এখন শিরিখালিতে যদি আমেরিকান ঘাঁটি করতে হয়, করিডোর বলেন আর চ্যানেল বলেন রাখাইনে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে হলে তো সেনাবাহিনীকে যুক্ত করতে হবে, তো তিনটি ডিভিশনকে ইনভলব করার কথা ভাবতে হচ্ছে। সামরিক প্রয়োজনেই এসব উদ্যোগ গোপনীয় রাখতে হয়। এ ধরনের গোপনীয়তা না রাখলে ভারত স্যাবোটাজ করবে, আরাকান আর্মির ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। আমাদের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে ইনফ্লুয়েন্স করবে। এমনিতে ভারতীয় মিডিয়াগুলো অপপ্রচার শুরু করেছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, তাদের দাবি তাদের না জানিয়ে কেন এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের বুঝতে হবে পাবলিক পলিসি ও অপারেশনাল পলিসি ডিফারেন্ট।

নয়া দিগন্ত : কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তে এ ধরনের করিডোরের ফলাফল তো ভালো হয় না। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়ে আশপাশের দেশগুলো। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে, চীন ও ভারত আরাকানে বড় আকারের বিনিয়োগ করেছে। এ দু’টি দেশ মিয়ানমার জান্তা সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সাথেও যোগাযোগ রাখছে...

এম শাহীদুজ্জামান : করিডোর বললেই এমন ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে, উদাহরণ টেনে আনা হচ্ছে যেন সেখানে ফুল ফ্লেজেড ওয়ার শুরু হয়ে যাচ্ছে, এখন যেটা গাজায় হচ্ছে বা আর্মেনিয়াতে। দেখেন ওখানে কিন্তু কনভেনশিয়াল ওয়ার হচ্ছিল। আরাকানে কিন্তু গেরিলা যুদ্ধ হচ্ছে এবং অনেকাংশে একটা পক্ষ।

নয়া দিগন্ত : ইউএন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সেখানে দুর্ভিক্ষ চলছে। রয়টার্সের বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির উল্লেখ করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত বা বাংলাদেশ থেকে চোরাচালানে কিছু পণ্য আরাকানে যাচ্ছে, যা নিতান্তই অপ্রতুল। মিয়ানমার জান্তা সেনাবাহিনী আরাকানে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে ঘিরে রেখেছে।

এম শাহীদুজ্জামান : আমার কাছে জরুরি মনে হয় সেখানে কাকে আপনি সহায়তা দেবেন। কনফিউজিং। ফেমিন বা দুর্ভিক্ষ কি সত্যি সত্যি ঘটেছে। ফেমিন ঘটলে ওই টেরেন্ট বা স্থান পার হবেন কেমনে? রাখাইনে ঢুকলেই তো আরাকান পর্বতমালা। ওটা পার হতে হবে। আরাকান পর্বতমালার ওপার এবং এপারে জনগোষ্ঠী রয়েছে। বেশির ভাগ রাখাইনরা কিন্তু আরাকান পর্বতমালার ওপারে থাকে। এখান থেকে যাওয়ার পথ খুব রুক্ষ। আরাকান আর্মি জায়গাগুলো চেনে। পাহাড় রয়েছে, পর্বতমালা আরো পরে। এখন ওখানে সামরিক শক্তি ছাড়া সহায়তা নিয়ে পৌঁছানো অসম্ভব। সেটা কি বাংলাদেশের? কেননা আরাকান আর্মির ব্যবহার আনপ্রেডিক্টেবল। তারা আমেরিকানদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক গড়েছে, আলোচনা করছে, নিশ্চয় তারা আমেরিকানদের কিছু কথা দিয়েছে। আরাকান আর্মির আচরণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি সেখানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী প্রবেশ করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে কতটুকু। এগুলো সবই ‘গ্রে এরিয়া’।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলছেন, চ্যানেলের ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। বিষয়টি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। তার সাথে মার্কিন ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারের আলাপ হয়েছে। তার সাথে আলোচনা হয়েছে দুইজন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সাথে, মিয়ানমারে মার্কিন মহিলা কূটনীতিকের সাথে আলোচনা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহাসচিব আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্কেত দিয়েছেন। আরাকান আর্মিকে ইগনর করতে পরামর্শ দিয়েছেন। আরাকান আর্মির সাথে আমাদের আলোচনা হলে সেখানে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আরাকান আর্মির আন্তর্জাতিক বৈধতা নেই। আরাকান আর্মি কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করলে মানতে হবে ওরকম কোনো আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট নেই। আরাকান আর্মির আচরণ বিপজ্জনক। ইনডিসিপ্লিন্ড। তাদেরকে আস্থায় আনা বা বিশ্বাস করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি মার্কিনিরা তাদেরকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে আমরা জানি না। কিন্তু চূড়ান্তভাবে আমাদের রাখাইনে যেতে হবে কারণ রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠাতে হবে। সেই ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি আরাকান আর্মিকে বাধ্য করতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি নিশ্চিত করতে পারবে রোহিঙ্গারা আরাকানে ফেরত গেলে তখনি সেখানে মার্কিন স্বার্থ পূরণ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ র‌্যাশনাল হবে এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই। র‌্যাশনাল হওয়ার অর্থ মার্কিনিরা রোহিঙ্গা ও রাখাইনদেরকে আরাকানে সহাবস্থানের নীতিতে আসতে বাধ্য করবে। রোহিঙ্গারাও আরাকান আর্মিকে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে বিশ্বাসের আওতায় আনতে হবে, আরাকান আর্মিকে বাধ্য করতে হবে, ফোর্স ছাড়া আরাকান আর্মি কিছু বুঝে না। এমনভাবে আরাকান আর্মির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে যে তোমরা যদি রোহিঙ্গাদের স্থান না দাও তো আমরা তোমাদের শেষ করে দেবো।

নয়া দিগন্ত : এমনিতেই আরাকান আর্মি বাংলাদেশী জেলেদের অপহরণ করছে, মালামালভর্তি ট্রলার ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে, তারা তো রোহিঙ্গাদের স্বীকার করতেই চায় না। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো সম্ভব?

এম শাহীদুজ্জামান : পলিসি নিয়ে এগিয়ে যেতেই হবে। মুখ ঘুরিয়ে নিলে চলবে না। নাফ নদীর ওপারে আরাকান আর্মি এটা এখন বাস্তবতা। এবং আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে রাখাইনকে। তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের ভেতরে এসে তারা তাদের পতাকা উড়িয়েছে। সেন্ট মার্টিনের দিকে তাদের চোখ রয়েছে। এদেরকে যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায় সামরিক শক্তির ভয় দেখিয়ে, বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে আমাদের সমূহ বিপদ রয়েছে। আগামী সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসবে যারা তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ধর্মীয় গ্রুপগুলো বেশি থাকবে। তারা খুব সম্ভবত রোহিঙ্গা আর্মির ধারণাকে সমর্থন দেবে। আরাকান আর্মি ও আমাদের মাঝখানে একটা বাফার থাকা প্রয়োজন। ঠেকানোর জন্য। কারণ আমাদের সীমান্তে আরাকান আর্মি থাকলে আমরা কখনই শান্তিতে থাকতে পারব না। এ জন্য আমাদেরকে আরাকান আর্মির সাথে নানা রকমের দ্বন্দ্ব, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা এই ধরনের দীর্ঘ ঝামেলায় না যেয়ে আমাদেরকে রোহিঙ্গাদের অনেক আগেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা উচিত ছিল। রোহিঙ্গাদের সেকেন্ড জেনারেশন চলে আসছে, তারা তাদের উত্তরসূরীদের মতো ভিক্ষাবৃত্তি, দয়া, হেলপলেস কালচারে বিশ্বাস করে না। এরা কুড়ি থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী, এদের শত শত তরুণ মিয়ানমারে ঢুকছে, তাদের নেতারা বলছে আমরা যুদ্ধ করেই আমাদের দেশ স্বাধীন করব। কেউ আমাদের করে দেবে না। আমরা ভালো করে বুঝতে পারছি। এই চিন্তাধারা ওদের মধ্যে আসার কারণে ওদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ২০ হাজারের রোহিঙ্গা ফোর্স ডেভেলভ করা খুব কঠিন কিছু হবে না। তারা ইকুইপমেন্ট পেলে সামরিক প্রশিক্ষণ পেলে দাঁড়াতে পারবে।

নয়া দিগন্ত : আপনি কি মনে করেন এসব করার এখনই উপযুক্ত সময়?

এম শাহীদুজ্জামান : টাইমিংটা এ সময়েই হবে এটা অনিবার্য ছিল। এ টাইমিংটা ঠিক করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বার্মা অ্যাক্টের সমর্থনে। তারা দেখতে পারছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় বিশ্বব্যাপী যখন সমস্ত এইড কমে যাচ্ছে তখন গাজা, ইউক্রেন আর একটাই অঞ্চল আরাকানে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এই কারণে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব ঢাকায় এসে বলেছেন, এইড কিন্তু আর আসবে না। তোমাদের এই রোহিঙ্গারা না খেতে পেরে মারা যাবে। তোমাদের সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাদের একটা কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রাণসহায়তার কথা তুলেছেন। আসল কথা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টকে সামনে রেখে মহাসচিব এসেছেন কেন? বাংলাদেশে এমন একটা সরকার ক্ষমতায় এসেছে, হাসিনার মতো না। ইউনূস সাহেবকে যদি বলে তিনি আমেরিকানদের কথা শুনবেন। আমেরিকার ইচ্ছাতেই খলিলুর রহমানকে বসানো হয়েছে। খলিলুর রহমান থরোলি ট্রেইন্ড ইন কোয়ার্সিভ ডিপ্লোমেসি। প্লেচার্জ স্কুল অব ল থেকে পিএইচডি করা। তারমতো ওই ডিগ্রি একমাত্র আমাদের চিফ জাস্টিসের রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখছে বাংলাদেশে ফেবারেবল রেজিম। দ্বিতীয়ত আরাকান আর্মিও এখন আনকোশ্চেন সুপিরিয়রিটি। আমেরিকানরা ডিসাইড করেছে যে আরাকান আর্মিকে তারা প্রভাবিত করতে পারবে। আরাকান আর্মিকে সে আর্মস দিয়েছে। এমনো হতে পারে চীন যে আরাকান আর্মির ওপর আস্থা রাখে সে ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেমিক লেভেলে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে একটা আলাদা সংযোগ রয়েছে। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। চীন যদি আমেরিকার বন্ডস ট্রিলিয়ন অব ডলারস উইড্র করে আমেরিকান ইকোনমি কলাপ্স করবে। আবার আমেরিকান মার্কেট যদি বন্ধ করে দেয়া হয় চীনের ইকোনমি তখন ভয়ঙ্কর পজিশনে যাবে। তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারত ও চীনের ইকোনমি তেমন নির্ভরশীল। আমার মনে হয় আরাকান আর্মিকে চীন বেশি পছন্দ করে না। তারা দেখতে পাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার কলাপ্সের পথে। তারা দেখতে পাচ্ছে আরাকান আর্মি অত্যন্ত সুযোগ সন্ধানী। বিশ্বাসঘাতক। এবং মঙ্গোলয়েড ক্যারেক্টারের ওয়ার্স্ট এলিমেন্ট তাদের মধ্যে আছে। সেই ক্ষেত্রে আমেরিকা যদি আরাকান আর্মিকে ব্যবহার করে স্ট্যাবিলাইজেশন আনতে পারে তাহলে চীনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের স্থিতি, তারা অ্যাসুউরেন্স চায় তাদের সমস্ত অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো এখানে থাকবে, তারচেয়ে আরো বেশি বঙ্গোপসাগরে চাইনিজ নেভির অ্যাক্সেস যেন সম্ভব হয়, চীনা নৌবাহিনীর প্রবেশাধিকার মালাক্কা প্রণালীতে যেন নিশ্চিত থাকে কারণ ওই প্রণালীর নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়। এটা তাদের মধ্যে গোপনে আলাপ হয়েছে বলে আমার ধারণা।

নয়া দিগন্ত : কিন্তু ভারতও তো মিয়ানমারে কালাদান প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে...

এম শাহীদুজ্জামান : চীন ও আমেকিার জন্য এমন একটা কমন ফ্যাক্টর যেটা ভারতের স্পাইনে আঘাত হানবে। চীন ও আমেরিকা দু’টি দেশ চায় উত্তর-পূর্ব ভারত ভেঙে যাক। এটাই ভারতের সবচেয়ে বেশি শঙ্কার কারণ। আমেরিকা দেখতে পেয়েছে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইন্ডিয়া চায়নার সাথে গোপনে ডিল করছে। ইন্ডিয়া কখনো চায়নাকে বে অব বেঙ্গলে থাকতে দিতে চায় না। আমেরিকা এটা পছন্দ করে না। আবার চায়না মনে করে ইন্ডিয়াকে আমরা কেন অ্যালাউ করব কালাদান প্রজেক্টে। কেন তার সেভেন সিস্টার্সের ব্যাপারে আমরা তাকে হেল্প করব। চীনের পৃথক পরিকল্পনা আছে। নর্থ ইস্টকে সে বলে আমরা তোমাকে অনেক বড় সমৃদ্ধি এনে দেবো। ইন্ডিয়ার মতো গরিব দেশের সাথে থেকে তোমরা কেন গরিব থাকবা। তোমরা মঙ্গোলয়েড, আমরা মঙ্গোলয়েড। চায়না হ্যাজ এ লট অব পার্লস। আমেরিকা এখানে সো পাওয়ারফুল যে কেউ এখানে ওভারলুক করতে পারে না। ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মুখ ঘুরিয়ে থেকে কি লাভ?

নয়া দিগন্ত : রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার কি তাহলে ঠিক পথেই আগোচ্ছে?

এম শাহীদুজ্জামান : আমাদের স্বার্থেই এখন সিরিয়াসলি রিঅ্যাক্ট করতে হবে। গোপনে হলেও আমাদের সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে হবে। এটাই সামরিক বাহিনীর কৌশল, সে কখনো আপনাকে জানতে দেবে না কোন কৌশলে সে আগাবে। আর আমেরিকানরাও চায় ওই অঞ্চলের রিসোর্স নিয়ন্ত্রণ করতে। এই যে স্যাটারবেল্ট। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিগনিয়া ব্রিজনস্কি ছিলেন অ্যান্টি কমিউনিস্ট। তিনি ছিলেন সাংঘাতিক সম্প্রসারণবাদি। তিনি বলতেন আরাকানটা হচ্ছে স্যাটারবেল্ট। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা যেখানে রাষ্ট্র ভেঙে পড়ছে ওই জায়গায় স্বার্থ থাকলে আমেরিকার গ্রাব করা উচিত। ওটা অরিজিনালি ব্রিজনস্কির ধারণা যে আমেরিকানরা বার্মা অ্যাক্ট রিনিউ করছে একেবারে বাই পার্টিজান এগ্রিমেন্ট এবং টাকা আলাদা করে রেখেছে। বিলিয়ন্স অব ডলারস। এখানে খরচ করবে। চীনকে একা সেখানে থাকতে দেবে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাগ বসাবে। এই যে প্যাসিফিক ডেপুটি কমান্ডার এসে কথা বলে গেল, এখানে তো সামরিক কথাবার্তাই হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি যদি থাকে সেই প্রস্তুতিটা শান্তির জন্য থাকাই বাঞ্ছনীয়। ঠিক। কিন্তু আমরা তো অন্যের আচরণ ঠিক করতে পারব না। আপনি রাস্তায় গাড়ি চালালে বিপরীত দিকে যে গাড়ি চালিয়ে আসছে তার ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হয় সে কি করছে। আরাকান আর্মি যদি সম্প্রসারণবাদী হয়ে ওঠে তাহলে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। প্রথমে আমরা তাদের ভালোভাবে বুঝাবো। ওদের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতেই হবে। ইরাবতিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওদের একজন জেনারেল কিন্তু বলেছে যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আমাদের আপত্তি নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যদি আমাদের রিসোর্সেস দেয়া হয় তাহলে আপত্তি নেই। আমাদের আমেরিকানদের মাধ্যমে ওদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য। কিন্তু আরাকানরা খুবই রেসিস্ট। বৌদ্ধদের মধ্যে এমন ঘৃণা ও রেসিজম, রোহিঙ্গাদের তারা তিরস্কার করে ‘ব্লাক পিগস’ বলে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওরা বাঙালিদের গালি দেয়। ওরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুশাসনকে একেবারে গিলে খেয়েছে। ওদের মনুষ্যত্বের দিকে আনতে হলে বল প্রয়োগের প্রাসঙ্গিকতা কখনো উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী যে কখনো আরাকানে যাবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যত রোহিঙ্গা ওরা মেরেছে এবং এই হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসতেই থাকলে কিছু করার থাকবে না। ভীতি মঙ্গোলয়েডদের বাধ্য করার একমাত্র পথ। থাইল্যান্ড ও চীন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।

নয়া দিগন্ত : রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারের কি কিছুই করার নাই?

এম শাহীদুজ্জামান : মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ তো দেখা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের জেনারেলরা এখনো যারা ক্ষমতায় বসে আসে তাদের ওয়ার ক্রাইমের জন্য টার্গেট করা হয়েছে। অনেকে অবসর নেয়ার পর চিহ্নিত বলে পালিয়ে বেড়ায়। আমেরিকায় যেতে তারা পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারে না। ইউরোপেও তারা যেতে পারে না। মিয়ানমারের বাইরে তাদের যে সম্পদ তা জব্দ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি তাতমাডাও (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) কখনো ফেস করেনি। রাশিয়া ওদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট পুতিন কোনো রকমের রুশ অর্থনীতিকে ধরে রেখে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চাচ্ছেন। তাতমাডাওকে বাঁচাতে পারবে না রাশিয়া। অলৌকিক কিছু না ঘটলে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমেরিকানরা এই সুযোগটাই নিচ্ছে। আমেরিকানরা দেখছে ভবিষ্যতের মিয়ানমার বেশি প্রয়োজন নাকি অটোনোমাস মিয়ানমার একটা, মানে আরাকান আর্মি এনইউজির প্রতি অনুগত থাকে কি না।

নয়া দিগন্ত : তাহলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের বাইরে অন্য দেশগুলোর স্বার্থের দিকে নজর রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে?

এম শাহীদুজ্জামান : পরিস্থিতি সত্যিই ক্রিটিক্যাল। ইদানীং ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে চীনকে ক্ষুব্ধ করে মিয়ানমারের দিকে এগোচ্ছে আমেরিকানদের সাথে। যোগসাজশ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ কখনই এমন কোনো নীতি গ্রহণ করবে না যাতে চীন আমাদের প্রতি সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। চীন আমাদের জন্য অস্তিত্বজনিত বন্ধু। চীনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো দেশ নেই। আমাদের উত্তরে ভারত একটা অংশ নিয়ে নিতে চায়। ফেনী করিডোরের কাছে ভারত থাবা দিতে চায়। এ দু’টি জায়গায় চীনের সাহায্য আমাদের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ যা কিছু করছে বা করবে তা চীনকে আস্থায় নিয়েই করবে। বার্মা অ্যাক্ট আমেরিকা বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশকে চীনের স্বার্থ রক্ষা করেই অবস্থান নিতে হবে। চীন সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে আমেরিকার প্রতি। আরাকান অঞ্চলে রিসোর্স, ডিপ সি অয়েলের প্রতি আমেরিকার নজর সম্পর্কে চীন ভালো করেই জানে। চীন বাংলাদেশকে সমভাবে গুরুত্ব দেয় বলেই বঙ্গোপসাগরে তার উপস্থিতি অনিবার্য। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে ভারত না ভাঙলে আমরা ভেঙে যাবো। আমাদের সাথে ভারতের সম্পর্ক হচ্ছে হয় ভারত ভাঙবে না হয় আমরা ভাঙব। কিন্তু ভারত যদি আমাদের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেয় তাহলে আমরা ভারতের বন্ধু হয়েই থাকতে চাই। সেই পথ ভারতকে করে দিতে হবে। এখনো যদি আরএসএস বলে অখণ্ড ভারত তৈরি করতে হবে, তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমরা তো একটা ছোট দেশ, আমাদের তো উপায় থাকতে হবে। আমরা পাকিস্তানের দিকে বাধ্য হয়েই হাত বাড়াই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জার্মানির সাংবাদিককে বলে দিয়েছেন, ইন সেভেন্টি ওয়ান ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ ইজ মিসটেক। ইটস থ্রেটিং আওর নর্থইস্ট।

নয়া দিগন্ত : কিন্তু কূটনীতিতে বলা হয় প্রতিবেশী বদল করা যায় না।

এম শাহীদুজ্জামান : আমাদের সচেতন থাকতে হবে, ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। আগেকার ভারত নেহেরুর সময় বা কংগ্রেসের সময় তারা কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি অনেক ডিসেন্ট ছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার চালাচ্ছে আরএসএস। এটি একটি সন্ত্রাসী সংস্থা। ভারতীয় জেনারেলরা ইউটিউবে অত্যন্ত একাডেমিক আলোচনা করে কিভাবে রংপুর অঞ্চলটা দরকার হলে কিনে নেবে। ফেনীর কাছে তারা চিটাগাংকে আলাদা করে দেবে। এসব জিনিস আমরা আগে কখনো শুনি নাই। ইদানীং ভারতের শিক্ষিত বিশারদরা খোলাখুলি পশ্চিমবঙ্গে বসে তাদের অধ্যাপকরা পর্যন্ত এসব আলোচনা করছে। টেলিভিশন টকশোতে অ্যাপ এঁকে দেখাচ্ছে এগুলো। গত কয়েক মাস ধরে ভারত মারাত্মক প্রপাগান্ডা ওয়ার লঞ্চ করে স্পেশালি তারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে কেন, কারণ এই যে জুলাই বিপ্লব ঘটল এর বিরুদ্ধে ভারত সরাসরি ইনভলভ ছিল। ভারতের ট্রুপাররা এসে সরাসরি গুলিবর্ষণ করেছে। তাদেরকে চলে যেতে দেয়া হয়েছে। এই বাস্তবতাগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে। মোদি কিন্তু বারবার হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারত কি বলে, আমাদের সীমান্তে লালমনিরহাটে এয়ারবেজ তৈরি হলে তাহলে তা তার নিরাপত্তাকে বিঘিœত করবে। আমরা তো উল্টোটাও বলতে পারি বাগডোঙ্গা হাসিমারায় ভারত এত পাওয়ারফুল মিসাইল বসিয়েছে, আমরা তো ছোট, তারা কি আমাদের নিরাপত্তা বিঘিœত করে, এটা বুঝবে না। ভারতের এসব আচরণ আমাদেরকে খুবই নিরাপত্তাহীন করে তোলে।