
প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও মিয়ানমারের সাথে কৌশলগত সম্পর্কের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
চট্টগ্রামের ভূরাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মাবুদ বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর একটি মানবিক উদ্যোগ হলেও এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ভূরাজনৈতিক ইস্যু। এটি চীন-ভারত-মিয়ানমার ভূরাজনৈতিক খেলার মাঠে বাংলাদেশকে একরকম চাপের মুখে ফেলতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যেন নতুন এক সাহসের নাম। প্রফেসর ইউনূসের সেই দাপুটে ঘোষণাটি যদি আমরা ধরে কথা বলি- ‘বঙ্গোপসাগরে একমাত্র অধিপতি বাংলাদেশ’! তবে ‘রাখাইনে মানবিক করিডোর’ বাংলাদেশের জন্য একটি সাহসী মাইলফলক।
তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তার এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী।
একসময়ের আলোচিত ছাত্রনেতা সৈয়দ আবদুল মাবুদ গণতান্ত্রিক মঞ্চের নেতা হিসেবে ঢাকায় ফ্যাসিবাদী হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ মাবুদ শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৯২ সালে সৈয়দ মাবুদ লন্ডনে বসবাস শুরু করেন এবং এরপর সেখানে তিনি বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেন। জনাব মাবুদ লন্ডন শিক্ষা কর্তৃপক্ষের (খঊঅ) অধীনে স্কুল গভর্নর ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড কর্তৃক প্রত্যয়িত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন স্বাধীন কাস্টডি ভিজিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পরিবেশ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং এষড়নধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ ভড়ৎ জবংঃড়ৎধঃরাব ঔঁংঃরপব ঙভ ডড়সবহ, ঘধঃঁৎব ধহফ ঘধঃরড়হ-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কানেক্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী নাগরিক আন্দোলন, যুক্তরাজ্যের সভাপতি এবং ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে চট্টগ্রাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য। তিনি জাতিসঙ্ঘের ‘বাংলাকে একটি সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি’ প্রদানের উদ্যোগের সাথেও জড়িত ছিলেন।
নিচে সৈয়দ আবদুল মাবুদের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত:
প্রশ্ন : আপনি কয়েক দশক সময় ইংল্যান্ডে কাটালেও রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের বড় সময় কাটিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে। রাখাইনে মানবিক করিডোরের যে প্রস্তাব জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে সেটিকে কিভাবে দেখেন?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর একটি মানবিক উদ্যোগ হলেও এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ভূরাজনৈতিক ইস্যু। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও মিয়ানমারের সাথে কৌশলগত সম্পর্কের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। এক দিকে এটি আন্তর্জাতিক মানবিক সহযোগিতার প্রতিফলন, অন্য দিকে এটি চীন-ভারত-মিয়ানমার ভূরাজনৈতিক খেলার মাঠে বাংলাদেশকে একরকম চাপের মুখে ফেলতে পারে। ফলে এই প্রস্তাব গ্রহণের আগে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সম্ভবত আপনিও আমার সাথে একমত হবেন, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর অন্যান্য আঞ্চলিক রাজনীতির তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার; মানে আমাদের এ অঞ্চলের রাজনৈতিক গতিধারা একটু আলাদা। অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বলয় বিস্তৃতির স্নায়ুযুদ্ধ তো বটেই; খুব নিকট অতীতে ১৯৯৮ সালের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক প্রবাহ দ্রুত বদলে যেতে থাকে। সেই সাথে এ অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা মূলত দক্ষিণ চীন সাগর সঙ্কট, তাইওয়ান সঙ্কট, চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত নতুন এক সমীকরণ। এত কিছুর মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যেন নতুন এক সাহসের নাম। প্রফেসর ইউনূসের সেই দাপুটে ঘোষণাটি যদি আমরা ধরে কথা বলি- ‘বঙ্গোপসাগরে একমাত্র অধিপতি বাংলাদেশ’! তবে ‘রাখাইনে মানবিক করিডোর’ বাংলাদেশের জন্য একটি সাহসী মাইলফলক।
এক দিকে আধিপত্যবাদের গভীর রেশ কাটানোর বিপুল হিম্মত, অন্য দিকে রাজনৈতিক নয়া মেরুকরণের ত্রাতা হিসেবে এখানে বাংলাদেশ হাজির হতে চাইছে। সোজা সরল কথায়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির শক্ত শক্তি হিসেবে ‘কী-পয়েন্ট’ বাংলাদেশ; সেটি আরো স্পষ্ট করে বলে দেয়া। আঞ্চলিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে বাংলাদেশের যে আলাদা বন্দোবস্ত বিদ্যমান, সেই জানান দেয়াটা আমি সাহস হিসেবে মূল্যায়ন করতে চাই। সেই মূল্যায়নটা আরো শক্ত হয় যখন এই দেশের গণমানুষের পূর্ণ রায় তার পক্ষে থাকে। যদিও দু-একটি রাজনৈতিক দল বিষয়টি অন্যভাবে দেখছে।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ মানবিক করিডোরের বিরোধিতা করে বলছে এটি দেয়া হলে অঞ্চলটি ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে পরিণত হবে আবার এটাও বলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আপনি কি মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ অমূলক নয়। মানবিক করিডোর যদি বিদেশী সামরিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বানাতে পারে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বাস্তবসম্মত সমাধান যদি জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবে থাকে এবং তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে কৌশলগত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
প্রশ্ন : আপনি যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম। কুকি-চিনের তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা এবং সাম্প্রতিক আারাকান আার্মির বান্দরবানের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠান করা- এসব কি পাহাড়ের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য এটি একটি বড় হুমকি। কুকি-চিন ও আরাকান আর্মির বিদ্রোহীরা যদি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় বা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তা পাহাড়ি এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা বাড়াতে পারে। এটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জটিলতা আরো বাড়াবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট, শক্ত প্রতিরক্ষা কৌশল জরুরি হয়ে পড়বে।
প্রশ্ন : প্রতিবেশী দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাস করতে দেয়ার কথা বলছে, এর মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি দেখতে পান কি?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : প্রতিবেশী দেশের কিছু মিডিয়ার এমন প্রচারণা বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির ইঙ্গিত রয়েছে, যার লক্ষ্য হতে পারে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনবিন্যাস পরিবর্তন, জাতিগত উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলা।
প্রশ্ন : পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য জরুরি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে সীমান্তে সেনা ও বিজিবির উপস্থিতি বাড়ানো, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা নেয়া, পাহাড়িদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, রোহিঙ্গা ও সীমান্ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে অবস্থান স্পষ্ট করা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থায় সমান বা কাছাকাছি ব্যবস্থা রূপক বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট’ নীতি এক দেশ নির্ভরশীলতা কাটাতে সাহায্য করবে বলে অনেকের ধারণা। আলাদা আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা এতে কি কোনো প্রভাব ফেলবে?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট’ নীতি চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করে ভারত নির্ভরতা কমানোর একটি চেষ্টা। কিন্তু যদি একটি আলাদা আরাকান রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা সফল হয়, তবে তা চীন-ভারত-মিয়ানমার সম্পর্কের জটিলতা বাড়াবে এবং বাংলাদেশ সেখানে অপ্রত্যাশিত কৌশলগত চাপে পড়তে পারে। ফলে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ পরাশক্তিগুলোর সাথে সম্পর্কে কী ধরনের ভারসাম্য অনুসরণ করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : বাংলাদেশের উচিত ‘ব্যালেন্সড নন-আলাইনমেন্ট’ কৌশল গ্রহণ করা; অর্থাৎ কোনো পরাশক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা না করে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা। জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা জরুরি। ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন ও কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ আমি তার কিছু জায়গা নিয়ে আগেই কথা বলেছি। সুতরাং আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে ভূপ্রকৃতির প্রভাব প্রভাবিত করবে। সেক্ষেত্রে মনের সাহস আর বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির রসদ জরুরি। যেমন ধরুন, আমার সাগর আছে, অন্যজনের হয়তো পাহাড় আছে। এখন ভারসাম্য রক্ষায় বীরদর্পে বুদ্ধি নিয়ে বসে যান। কিন্তু কাচুমাচু করলে কী হবে?
প্রশ্ন : পাহাড়ের উন্নয়ন এবং সম্পদ আহরণ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : এ ক্ষেত্রে পরিবেশসম্মত পর্যটন, কৃষি ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন, স্থানীয় জনগণকে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নে যুক্ত করা, শিক্ষার প্রসার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন ও উন্নয়নকে নিরাপত্তার ভিত্তি বানানো, পাহাড়ে বন উজাড় করে সেগুন, রাবার বাগান সৃজনের পরিকল্পনা রিভিউ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে সেখানে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আধুনিক কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা করা প্রয়োজন।
মাটি ও ভৌগোলিক অবস্থার বিবেচনায় অঞ্চলভিত্তিক কৃষি পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। ফল, সবজি ছাড়াও উদাহরণ হিসেবে বলছি আদা, হলুদ, গোলমরিচ, মাষকলাই ডাল অনায়াসে উৎপাদিত হতে পারে সেখান বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির জন্য এ ক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পাহাড়ে ট্যুরিজম ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনেরও উদ্যোগ নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ ড্রাই ম্যাংগো, কলা, কাঁঠাল, আনারস প্রভৃতির বাজার বিশ্বজোড়া। পাহাড়ের মাটি মূলত এসিডিক তাই সাইট্রাস গ্রুপের ফল কমলা মুসাম্বি, লেবু, সাইট্রোনিলা গ্রাস, পাঁচুলি প্রভৃতির জন্য বিশেষ উপযোগী। লেমন ড্রিংকসগুলোর কাঁচামালের বাজার বিশ্বজোড়া।
প্রশ্ন : চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য ‘ফেনী নেক’কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে এটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির মুখপত্র রিপাবলিক টিভির আগ্রাসী প্রচারণা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন।
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : ‘ফেনী নেক’ (Feni Neck) কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে চট্টগ্রামের নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে। ভারতীয় কিছু মিডিয়ার উত্তেজনাকর প্রচারণা দুই দেশের সম্পর্ককে উত্তপ্ত করতে পারে। বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে এমন প্রচারণার প্রতিবাদ জানিয়ে, স্থল সীমান্তে সক্রিয় নজরদারি রাখতে হবে এবং তথ্যভিত্তিক জবাব প্রস্তুত রাখতে হবে। কেবল ফেনী কেন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমার দেশের প্রতি ইঞ্চি গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশের প্রতি ইঞ্চির জন্য আমার দেহের প্রতি ফোঁটা রক্ত সঞ্চিত রেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, দেশকে কিভাবে রক্ষা করতে হয়, তা আমাদের জানা আছে। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ককে আপনি কিভাবে দেখেন?
সৈয়দ আবদুল মাবুদ : বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্থায়িত্বের সাথে যুক্ত। একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা জনগণের আস্থা ফেরাতে এবং আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলা করতে সহায়ক হবে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আস্থার সঙ্কট নিরসনে একটি অন্তর্বর্তী সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। আপনাকে একটা বিষয় স্পষ্ট মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে অভ্যুত্থান হয়নি। শুধু তথাকথিত নির্বাচনের জন্য হাজার হাজার মানুষ রক্ত দেয়নি। অভ্যুত্থান-ই গণতন্ত্র। যখন বিপুল মানুষের ঢল স্বৈরাচার হাসিনার গদি গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় বসালো, এর চেয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর কী হতে পারে!