
অধ্যাপক এম এম আকাশ—বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলনের এক সুপরিচিত নাম। তিনি শুধু অর্থনীতিবিদ হিসেবেই নন, একজন প্রগতিশীল চিন্তক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম নেতৃত্বদানকারী হিসেবেও পরিচিত। আজকের অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন একদিকে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে আর অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে, তখন তাঁর মতামত নতুন করে মূল্যায়নের দাবি রাখে। তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপে জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁর ভাবনা, প্রত্যাশা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার ও মাসুদ রানা কথা বলেছেন।
আপনি অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক কর্মী, দুটি পরিচয়ই আপনার সঙ্গে জড়িয়ে। আপনি ব্যক্তিগতভাবে এই দুই ভূমিকাকে কীভাবে মেলাতে সক্ষম হয়েছেন?
এটা সহজ ছিল না। অর্থনীতি পড়া মানে শুধু উন্নয়ন বা মুনাফা বোঝা নয়, এর ভেতরে শ্রেণিবৈষম্য, উৎপাদনব্যবস্থার সংকট, ক্ষমতার প্রবাহ এসব বোঝাও জরুরি। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন দেখেছি কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ সরাসরি মানুষের জীবনকে বদলে দেয়। ফলে আমার কাছে রাজনীতি ও অর্থনীতি আলাদা কোনো বিষয় ছিল না। দুটি একই বাস্তবতার দুই দিক। বামপন্থী দর্শন আমাকে এটাই শিখিয়েছে: অর্থনীতির ন্যায়পরায়ণ নীতি ছাড়া রাজনীতিতে ন্যায্যতা আসে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী বলে?
প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে উল্লাস করা এক কথা, আর তার বাস্তবিক মানে বিশ্লেষণ করা আরেক কথা। বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু একই সঙ্গে আয়বৈষম্যও বাড়ছে। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী অস্বাভাবিক হারে ধনী হচ্ছে, আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠী স্থানে স্থানে বেকার, স্বল্প আয়ে জীবন কাটাচ্ছে। আপনি যদি প্রবৃদ্ধি দেখেন, দেখবেন; কিন্তু আয়বণ্টন দেখলে হতাশ হতে হবে। উন্নয়ন মানে যদি কেবল এলিট শ্রেণির জীবনযাত্রার উন্নতি হয়, তাহলে সেটাকে প্রকৃত উন্নয়ন বলা যায় না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) দেশে মানুষের মধ্যে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
সত্যি কথা বলতে গেলে এর পেছনে ঐতিহাসিক বাস্তব কারণ রয়েছে। আমাদের নিজেদেরও কিছু দায় নেই, তা নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনের প্রাধান্য বদলেছে। আমরা সেই পরিবর্তিত বাস্তবতার (বিষয় ও বিষয়ীগত) সঙ্গে নিজেদের কথাবার্তা, সংগঠন ও কৌশল প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বদা ঠিকমতো বদলাতে পারিনি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের পতন, বাজারমুখী বিশ্বায়ন, মানুষের চাহিদার বৈচিত্র্য—এসবও বড় কারণ। তবে আমি করি, এর জন্য মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী ধ্রুপদিতত্ত্বকে দায়ী করা ঠিক হবে না। আমরা নিজেরাই আসলে তা সৃজনশীলভাবে পাঠ ও প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। মূল সমস্যা হলো, আমরা জনতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ হারিয়ে ফেলেছি। কমিউনিস্ট রাজনীতিকে যদি জীবন্ত রাখতে হয়, তবে তাকে তার নিজস্ব শ্রেণিগুলোর সঙ্গে, তথা মাটির মানুষের জীবনের সমস্যা ও স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
আপনার কি মনে হয় কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি বাংলাদেশের জন্য এখনো প্রাসঙ্গিক?
আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি প্রাসঙ্গিক। তবে অবশ্যই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হবে। মানুষ এখন আরও বেশি ব্যক্তিস্বাধীনতা চায়, প্রযুক্তির সুবিধা চায়, দ্রুত উন্নতি চায়। কমিউনিস্ট আন্দোলন যদি সেসব আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে এবং মুক্তির সংগ্রামকে সেই পরিসরে পুনর্নির্মাণ করতে পারে, তাহলে তার প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে ফিরে আসবে। সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো ন্যায্যতা, সমতা এবং মানবিক মর্যাদা। এগুলো কখনোই অচল হয়ে যাবে না। তবে সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার ভাষা ও কৌশল অবশ্যই সময়োপযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এটা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা। আমাদের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছিল, ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের মূলনীতি হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি, রাজনীতির মঞ্চে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে—কখনো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে, কখনো নিরীহ মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্র থেকে সেটাকে আলাদা রাখতে না পারলে বিভাজন, সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের মূলধারার রাজনীতিবিদেরা এ বিষয়ে নীতিগত কঠোরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেটা রোধ করার জন্য বামপন্থীরা কী ভূমিকা রাখতে পারেন?
সবচেয়ে আগে দরকার, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটা বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। বামপন্থীরা সেই প্ল্যাটফর্ম হতে পারতেন। আমরা ধর্মের বিরুদ্ধে নই; ধর্মের নামে যে রাজনীতির অপব্যবহার হয়, তার বিরুদ্ধে। আমাদের কাজ হওয়া উচিত সমস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে একত্র করা—মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবাইকে। একমাত্র ঐক্যের রাজনীতি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষকে মোকাবিলা করা সম্ভব। তা ছাড়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাবাদী চেতনা জাগাতে হবে।
কিছু সমালোচক বলেন, বাংলাদেশের বামপন্থীরা ‘ভদ্রলোকের রাজনীতি’ করেন। তাঁরা ‘মাঠের রাজনীতি’ করতে পারেন না। আপনি কীভাবে দেখেন?
সমালোচনায় একটা সত্য আছে। আমাদের অনেক নেতা ও কর্মী, বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অংশ রাজনীতিকে অনেক সময় তাত্ত্বিক পরিসরে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। মাঠে, শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে, কৃষকের সঙ্গে, মজুরের সঙ্গে থেকে আন্দোলন চালানো দরকার ছিল। বাস্তবে রাজনীতির শক্তি আসে জীবন্ত সংযোগ থেকে, বক্তৃতা বা সেমিনার থেকে নয়। অবশ্যই তত্ত্ব জরুরি, কিন্তু মাঠ ছাড়া তত্ত্ব মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এই সত্যটি আমরা অনেক সময় উপেক্ষা করেছি।
বাংলাদেশের তরুণসমাজ ক্রমেই ‘ডানপন্থী’ হয়ে যাচ্ছে—অন্তত ধর্মীয় অনুরাগ বা জাতীয়তাবাদী আবেগে। কেন বামপন্থীরা তরুণদের কাছে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে পারছেন না?
বামপন্থীরা তরুণদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারিয়েছেন, এটা একটা বড় কারণ। আজকের তরুণেরা চায় সাহসী নেতৃত্ব, স্পষ্ট স্বপ্ন এবং বাস্তবসম্মত কর্মসূচি। আমাদের ভাষা, আমাদের কর্মপদ্ধতি অনেক সময় এতটাই পুরোনো হয়ে গেছে যে তরুণেরা আগ্রহ পায় না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, তরুণদের উদ্বেগ এখন চাকরি, স্টার্টআপ, প্রযুক্তি—এসব ঘিরে। আমরা যদি তাদের এই বাস্তব আকাঙ্ক্ষার ভাষা না বুঝি, তবে আমরা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারব না। একটা নতুন ধরনের প্রগতিশীল আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার, যেখানে তরুণদের স্থান থাকবে অগ্রভাগে।
বর্তমান বৈশ্বিক পুঁজিবাদ ও প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগে কমিউনিজম কি এখনো সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে?
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য, জলবায়ু সংকট, রাজনৈতিক দুর্নীতি—এসব পুঁজিবাদীব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যা। তাই বিকল্প সন্ধানের প্রয়োজনীয়তা কখনোই এত তীব্র ছিল না। কমিউনিজমের পুরোনো রূপ হয়তো আর ফিরবে না, তবে একটি নতুন মানবিক সমাজতান্ত্রিক রূপ—যা ব্যক্তি স্বাধীনতা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং পরিবেশ সচেতনতার সঙ্গে মিশে থাকবে—সেটার সম্ভাবনা প্রবল। এটা নির্মাণের লড়াই এখনো চমৎকার!
আপনার দৃষ্টিতে সিপিবির সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক দুর্বলতা কী?
আমি বলব সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো সাংগঠনিক স্থবিরতা। একটা সময় ছিল যখন আমরা গ্রাম-শহর মিলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শাখা কমিটি গড়ে তুলতে পারতাম, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-মহিলা-সংগঠন ছিল সক্রিয়। কিন্তু এখন সংগঠনের শিকড় অনেক জায়গায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় সমস্যা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামো। কখনো কখনো আমরা দলের অভ্যন্তরে মুক্ত বিতর্কের চর্চা কমিয়ে দিয়েছি, ফলে কর্মীদের সৃজনশীল অংশগ্রহণ কমেছে। আর তৃতীয়ত, সাংগঠনিক পুনরুজ্জীবনের জন্য যে পরিকল্পনা ও প্রয়াস দরকার, তা পর্যাপ্ত মাত্রায় নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের বামপন্থীদের ঐক্য প্রক্রিয়া বহুবার শুরু হয়েছে, কিন্তু ফলাফল খুব বেশি আশাব্যঞ্জক হয়নি। কেন?
বাম ঐক্যের প্রয়াস প্রতিবার ভেঙে পড়েছে দুটি প্রধান কারণে: নেতৃত্বের সংকীর্ণতা এবং অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা। প্রতিটি দল বা গোষ্ঠী মনে করে তারাই একমাত্র সঠিক। এ মনোভাব ঐক্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় মতাদর্শগত বিশুদ্ধতার নামে একধরনের সংকীর্ণতা চলে আসে—যার ফলে বাস্তবতাকে সামলানোর কৌশলগত নমনীয়তা হারিয়ে যায়। ঐক্য চাইলে ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডাকে ছাপিয়ে বৃহত্তর লক্ষ্যের জন্য কাজ করতে হয়, সেটা আমরা পারিনি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, বামপন্থী নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন দুই কারণে, তত্ত্বশূন্য অন্ধত্বের জন্য এবং কর্মশূন্য বন্ধ্যত্বের জন্য। তবে দুই বিপরীতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা একটি কঠিন কাজ।
বর্তমান বিশ্বের সংকট, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে বামপন্থীরা কীভাবে এগিয়ে আসতে পারেন?
এই সংকটগুলো আসলে বাম রাজনীতির জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। জলবায়ু সংকট দেখিয়েছে যে পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থাই পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ। প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে দেখা যাচ্ছে গুগল, অ্যামাজনের মতো করপোরেট জায়ান্টরা ব্যক্তিগত তথ্য এবং বাজারের একচেটিয়া অধিকার নিয়ে নতুন ধরনের শোষণ চালাচ্ছে। বামপন্থীদের উচিত হবে এসব নতুন ইস্যুকে নিজেদের আন্দোলনের অঙ্গ বানানো এবং ‘সবুজ সমাজতন্ত্র’, ‘ডিজিটাল ন্যায়বিচার’ ইত্যাদির মতো ধারণাগুলো নিয়ে কাজ করা। প্রচলিত কথা নয়, নতুন ভবিষ্যতের ভাষা গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করেন?
শ্রমিক আন্দোলন একটা জটিল সংকটে আছে। একদিকে বিক্ষিপ্ত ও স্পোরাডিক বিক্ষোভ হচ্ছে—বিশেষ করে গার্মেন্টস, চা-বাগান বা রিকশাচালকদের মতো খাতগুলোতে। কিন্তু সংগঠিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন শ্রমিক আন্দোলন অনেক দুর্বল। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর বড় অংশই এখন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ন্ত্রিত, অনেক সময় তাদের আসল উদ্দেশ্য শ্রমিকের স্বার্থ নয়, বরং মালিকশ্রেণির সঙ্গে আপস করা। ফলে শ্রমিক আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ততার চেয়ে ব্যবস্থাপনা-নির্ভরতা বেশি। এটা পাল্টাতে হলে শ্রমিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা—এসব ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে কি বামপন্থীরা নিজেদের অস্তিত্ব নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন?
আমি মনে করি, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবহেলিত ক্ষেত্র। বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের গুরুত্ব বুঝেছেন, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে পারেননি। আজকের বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িকতা, ভোগবাদিতা, সহিষ্ণুতার অভাব দেখা যাচ্ছে—তার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ জরুরি। গান, নাটক, কবিতা, চলচ্চিত্র, সাহিত্য—এগুলোতে নতুন মূল্যবোধ ও স্বপ্নের বীজ বপন করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক ভাষণে মানুষের মন পরিবর্তন হয় না; সাংস্কৃতিক চেতনার মাধ্যমে মানুষ গভীরে বদলায়।
আপনি নিজের জীবনে বড় ভুল কী মনে করেন?
(হাসি) ভুলের তালিকা ছোট নয়। তবে সবচেয়ে বড় ভুল মনে হয়, অনেক সময় বাস্তবতাকে অতিরিক্তভাবে তাত্ত্বিকভাবে বিচার করেছি। মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি, স্থানীয় বাস্তবতা—এগুলোর প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল। শুধু যুক্তি দিয়ে রাজনীতি হয় না; হৃদয়ের স্পর্শও দরকার। হয়তো আরও বেশি মাঠে সময় কাটানো উচিত ছিল, আরও বেশি তরুণদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল।
এখনো আপনি কী নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী?
মানুষের সম্ভাবনা নিয়ে। আজকের তরুণেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি জানে, দেখে, শোনে। তারা প্রশ্ন করে, তর্ক করে, ন্যায়বিচার চায়। এই প্রশ্ন করার শক্তিটা যদি না হারায়, তাহলে আমি আশাবাদী—ভবিষ্যৎ প্রগতির পথেই এগোবে।