২০২২ সালে হিজাববিরোধী বিক্ষোভের পর ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার প্রতিবাদে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ। রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাস্তায় নেমেছেন ইরানের সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তৃতীয়দিনের মতো তেহরানের বেশ কয়েকটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, তেহরানের শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের একটি সমাবেশে ‘তুমিই বিকৃতকারী, তুমিই হয়রানিকারী, আমিই মুক্ত নারী’ স্লোগান দিচ্ছে।
পৃথক ভিডিওতে ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাবেশ করার সময় ‘ন্যায়বিচার কোথায়?’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
আই২৪নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানী তেহরানের গ্র্যান্ড বাজার বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দোকান খোলেননি। রাজধানীর পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমানশাহ শহরেও বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। কোথাও কোথাও ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে পাহলভি বা রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার স্লোগানও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভের মুখে অস্বাভাবিক ঠান্ডার প্রভাবে জ্বালানি ব্যবহার স্থিতিশীল করার অজুহাতে তেহরানে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারীদের দমাতে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করেছে। এতে করে অনেক জায়গায় সহিংসতা দেখা গেছে।
সমালোচকরা বলছেন বিক্ষোভ দমাতেই এ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের এ বিক্ষোভকারীদের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফারসি ভাষায় দেওয়া এক পোস্টে ইরানি জনগণকে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে মোসাদ বলেছে, ‘বিক্ষোভকারীদের শুধুমাত্র দূর থেকে নয়, বিক্ষোভস্থল থেকেও সহায়তা করা হচ্ছে’।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী নেতাদের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করছে ইরান সরকার। সোমবার রাতে এক এক্স বার্তায় ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিছেন, ‘তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের ‘বৈধ দাবি’ শোনার জন্য অনুরোধ করেছেন।’
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, শিগগিরই একটি সংলাপ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে এবং বিক্ষোভকারীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ইসলামিক রাষ্ট্রটিতে সর্বশেষ বিক্ষোভ। এরআগে ২০২২ সালে ২২ বছর বয়সী ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতেই তার মৃত্যু হলে কয়েক মাসব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল কিছু মানুষ। এটি ছিল কয়েক বছরের মধ্যে কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার সবচেয়ে বড় ঘটনা।
সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল, আই২৪, রয়টার্স