জুম্মার নামাজের দিনে উগ্র হিন্দুত্ববাদের এক নতুন চেহারা দেখল কলকাতা। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দীপু দাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবাদে হিন্দুদের গর্জনে কেঁপে উঠল বেকবাগান সংলগ্ন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সংলগ্ন চত্বর। যদিও পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এদিন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু সংহতি সংঘের চার প্রতিনিধিকে নিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে। পরে শহরের একটি ধর্নামঞ্চের সামনে শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখেন। ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের ২ কোটি হিন্দুকে বাঁচাতে ভারতের ১০০ কোটি হিন্দু একত্রিত থাকবে।
শুক্রবার বিকেল হতে না হতেই শিয়ালদহ স্টেশনের দিক থেকে গেরুয়া সন্ন্যাসীরা তলোয়ার, ত্রিশুল নিয়ে মিছিল করে এগোতে থাকে বেকবাগান সংলগ্ন বাংলাদেশে ডেপুটি হাইকমিশনের দিকে। সঙ্গে ছিল ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খের ধ্বনি। প্রতিধ্বনি উঠেছিল হর হর মহাদেব। এদিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, নদীয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ইত্যাদি জেলা ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকেও হিন্দুরা প্রতিবাদ জানাতে আসেন। নাগা সন্ন্যাসীরা, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মহিলা সদস্যরা। তাদের অধিকাংশের গলায় ঝোলানো ছিল দীপু দাসের ছবি, যার তলায় লেখা ছিল, দীপু দাসের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ।
এ বিক্ষোভের সংবাদ আগ থেকেই জানাতেন দেশটির পুলিশ প্রশাসন। তারা বেকবাগানের বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে একতলার সমান শেকল লাগানো অস্থায়ী লোহার ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এদিন বিরোধী দলনেতাসহ পাঁচ প্রতিনিধিকে অনুমতি দিয়েছিলেন ভেতরে প্রবেশ করে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার জন্য। সেই মতো শুভেন্দু অধিকারীসহ পাঁচজন গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনে। পুলিশ অবশ্য বাকিদের বেশ খানিকটা দূরে আটকে দেয়। সেই সময় হিন্দুরা রাস্তায় বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকে। ঢাকঢোল পিটিয়ে, তলোয়ার ঘুরিয়ে, তীক্ষ্ণ ত্রিশুল, চিমটি, লাঠি উঁচিয়ে প্রতিবাদি স্লোগান দিতে থাকে।
এদিন হিন্দুদের গলায় ছিল উগ্রবাদের শাসানি। নাগা সন্ন্যাসীরা বলেন, আমরা চাইলে গোটা বাংলাদেশ ঘিরে ফেলতে পারি। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নির্মমভাবে মেরে ফেলার প্রতিবাদে। কেউ বললেন, ভারত সরকারের কাছে দাবি করব ওপার বাংলাকে সবরকম বাণিজ্যিক পণ্য দেওয়া বয়কট করতে।
এক সন্ন্যাসী বলেন, গুলি-বন্দুকের দরকার নেই। সন্ন্যাসীর হাতের শক্ত, তলোয়ারই যথেষ্ট। এদিন ওপার বাংলার দীপু দাসের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের দাস পরিবারের পিতাপুত্রের মৃত্যু নিয়ে সরব হন অনেকে। বলেন দুই বাংলার ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটছে। মারছে একটিই সম্প্রদায়, মরছে আরেকটি সম্প্রদায়।
শুক্রবার সনাতনীদের অস্ত্র সহযোগে প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
ওপার বাংলার হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে যখন হিন্দু প্রতিবাদ জানায়, সেই মুহূর্তে ওড়িশার সম্বলপুরে গণপিটুনিতে নিহত এই বাংলারই এক পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল শেখের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে তার নিজের গ্রাম মুর্শিদাবাদের সুতিতে। বুধবার রাতেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকরাও দানিশ আলিকে আচমকা গুলি করে খুন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই বাংলাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ উগ্রবাদের বলি হচ্ছে। আর মানুষের হত্যাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলছে রাজনীতি।
শুক্রবার বাংলাদেশে ডেপুটি হাইকমিশন থেকে ফিরে রাজনৈতিক স্লোগানে সোচ্চার হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এদিন ওপার বাংলার দীপু দাসের সঙ্গে এপার বাংলার মুর্শিদাবাদের দাস পরিবারের পিতাপুত্রের মৃত্যুর এক প্রসঙ্গে গেঁথে ফেলেন। বলেন, হিন্দুদের ওপর এ আঘাত মানা হবে না। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনেও আমরা দীপু দাসের হত্যায় অভিযুক্তদের কঠোর সাজার দাবি জানিয়েছি। এ ধরনের ঘটনায় ডেপুটি হাইকমিশন ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেকথাও জানতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা।