বিজ্ঞানীরা এমন এক যুগান্তকারী ক্যানসার ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন, যা নানা ধরনের ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম—এমনকি যেসব টিউমার সাধারণত চিকিৎসার প্রতি প্রতিরোধী, সেগুলোকেও। গবেষকদের তৈরি এই নতুন mRNA-ভিত্তিক ক্যানসার ভ্যাকসিন ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে।
প্রচলিত ক্যানসার ভ্যাকসিন সাধারণত নির্দিষ্ট টিউমার প্রোটিন বা মার্কারকে লক্ষ্য করে কাজ করে। কিন্তু এই নতুন ভ্যাকসিনের লক্ষ্য আরও বিস্তৃত। এটি দেহের ইমিউন সিস্টেমকে সর্বাত্মকভাবে সক্রিয় করে তোলে, যেন শরীর নিজেই বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে আক্রমণ করতে পারে। গবেষকদের ভাষায়—এ ভ্যাকসিন যেন ইমিউন সিস্টেমকে “ঘুম ভেঙে জাগিয়ে তোলে।”
ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?
ভ্যাকসিনের mRNA শরীরে বিশেষ সিগন্যালিং প্রোটিন তৈরি করে, যা ইমিউন সিস্টেমকে তীব্রভাবে সক্রিয় করে। এতে ক্যানসার কোষগুলো দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার আক্রমণের জন্য আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট কোনো ক্যানসার মার্কার টার্গেট করে না। বরং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে।
ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটরের সঙ্গে আরও শক্তিশালী ফল
গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি যখন ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটার (ICI)-এর সঙ্গে ব্যবহার করা হয়—যা ইমিউন সিস্টেমের ওপর থাকা ‘ব্রেক’ সরিয়ে দেয়—তখন এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়।
দুই চিকিৎসা একসঙ্গে প্রয়োগ করার পর ইঁদুরের শরীরে দেখা গেছে—
✔ শক্তিশালী অ্যান্টি-ক্যানসার প্রতিক্রিয়া
✔ এমন টিউমারেও কার্যকারিতা, যা সাধারণ চিকিৎসায় সাড়া দেয় না
✔ এবং কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ টিউমার বিলুপ্তি
এই ফলাফল চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মানুষের ওপর প্রয়োগের আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন
যদিও গবেষণার ফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, তবুও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন—মানুষের ওপর ব্যবহার করার আগে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন।
গবেষকরা বিশ্বাস করছেন, সফল হলে এই ভ্যাকসিন হতে পারে ভবিষ্যতের ক্যানসার চিকিৎসার এক বিশাল বিপ্লব—যেখানে একটি ভ্যাকসিনই বহু ধরনের ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।