Image description

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাবের অন্যতম একটি ধারা, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করা এবং একে সমর্থন করা।

এই নিরাপত্তা সংস্থা গাজা উপত্যকাকে অসামরিকীকরণ করতে ইসরায়েল ও মিশরের সঙ্গে কাজ করবে এবং একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানা গেছে।

যদিও এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ‘দলগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে’, তবুও হলুদ রেখার ফিলিস্তিনি অংশের এলাকাগুলোসহ গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।

আইএসএফ কী

আইএসএফ হলো একটি বহুজাতিক বাহিনী, যা গাজায় মোতায়েন হয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে, সীমান্ত সুরক্ষিত রাখবে, গাজাকে অসামরিকীকরণে সহায়তা করে নিরাপত্তা বজায় রাখবে, বেসামরিক নাগরিক এবং মানবিক কার্যক্রমকে সুরক্ষা দেবে (যার মধ্যে মানবিক করিডোর সুরক্ষিত করাও অন্তর্ভুক্ত) এবং বিস্তৃত পরিকল্পনার সমর্থনে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কাজও করবে।

এই বাহিনী গত ১৯ বছর ধরে হামাস যে নিরাপত্তা দায়িত্বগুলো সামলে আসছে, তার বেশিরভাগই নিজেদের হাতে তুলে নেবে। ২০০৬ সাল থেকে হামাস সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিষেবাসহ গাজা উপত্যকার শাসনের দায়িত্বে ছিল। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের এই ব্যাপক পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি দলগুলোর কোনো প্রকার অংশগ্রহণ ছাড়াই প্রণয়ন করা হয়েছিল।

এই বাহিনীতে কারা থাকবে?

এটি এখনো স্পষ্ট নয়, তবে প্রস্তাব অনুসারে এই বাহিনী ইসরায়েল এবং মিশর এবং নতুন প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর (যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে না) সঙ্গে কাজ করবে। এতে মিশর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। যদিও সংযুআইএসএফক্ত আরব আমিরাতের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনোয়ার গারগাশ জানিয়েছেন, তার দেশ এতে অংশ নেবে না। কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিশর এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে পারে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অক্টোবরে বলেছিলেন, তার দেশ গাজাকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তবে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’আর বলেছেন, গাজার মাটিতে তুরস্কের সেনাদের উপস্থিতিতে ইসরায়েল সম্মতি দেবে না।

ভোট প্রক্রিয়া কেমন ছিল?

প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়েছে। তবে রাশিয়া ও চীন ভোটদান থেকে বিরত ছিল। তারা এই বাহিনীতে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণের অভাব এবং গাজার ভবিষ্যতে জাতিসংঘের স্পষ্ট ভূমিকার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। রাশিয়া এর আগে ‘মার্কিন খসড়া দ্বারা অনুপ্রাণিত’ নিজস্ব একটি প্রস্তাব এনেছিল, যেখানে গাজার আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে অংশগ্রহণের সম্ভাব্য বিকল্পগুলো চিহ্নিত করতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছিল।

হামাসের প্রতিক্রিয়া কী?

হামাস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। টেলিগ্রামের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে যে এই ভোট ‘গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্বের প্রক্রিয়া চাপিয়ে দিয়েছে’।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসের গাজায় কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং তাদের নিরস্ত্র করা হবে। হামাস কর্মীদের দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে: হয় সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া, নয়তো গাজা থেকে নিরাপদ পথ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। হামাস বারবার বলে আসছে যে তারা শাসনভার ছেড়ে দিতে রাজি, কিন্তু অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে।’

ইসরায়েল কী বলেছে?

ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের ওপর জোর দিয়েছে। ইসরায়েলে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত ড্যানি ড্যানন জানিয়েছেন, তার দেশ হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে দৃঢ় সংকল্প দেখাবে।

ইসরায়েলে এই প্রস্তাবটি অন্তত একটি বিরোধী দলকে নেতানিয়াহুর সরকারের সমালোচনা করতে উৎসাহিত করেছে। আল্ট্রান্যাশনালিস্ট রাজনীতিবিদ আভিগডর লিবারম্যান (ইয়েসরায়েল বেইতেনু দলের প্রধান) এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘আজ রাতে জাতিসংঘে যা ঘটেছে তা ইসরায়েলি সরকারের ব্যর্থ আচরণের ফল। এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র, সৌদি পরমাণু এবং তুরস্ক ও সৌদি আরবের জন্য এফ-৩৫ বিমান সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।’