‘বাংলাদেশি’ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সেখানে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সিআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু হিন্দুর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা নাগরিকত্বের আশায় বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়েছেন। এখন এসআইআর প্রক্রিয়ায় বাদ পড়তে পারেন অনেকে। এ নিয়ে অনেক দল রাজনীতি করছে। তবে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে যদি একজন বৈধ ভোটারকেও বাদ দেয়া হয়, তাহলে তৃণমূল সিআইআর ইস্যুতে লড়াই দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি ও ভারতের নির্বাচন কমিশন হাত মিলিয়ে বাংলার পরিচয় মুছে দিতে ও বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিতে চায়।
এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই বলছে অভিষেক বলেন, শুরু থেকেই আমরা বলেছি- যদি একজন বৈধ ভোটারকেও বাদ দেয়া হয়, তৃণমূল এই লড়াই নিয়ে যাবে দিল্লি পর্যন্ত। যারা কেন্দ্র সরকারের পুতুল হয়ে বাংলার পরিচয় কাড়তে চায়, আর আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমার প্রশ্ন বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বন্ধুদের কাছে সহজ- যে ৫-৬ জন মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তারা কি বৈধ ভোটার ছিলেন, নাকি অবৈধ?
তিনি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেন, যেন কেউ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ক্যাম্পে না যান। কারণ তাতে ‘আসামের মতো পরিণতি’ হতে পারে, যেখানে অনেককে আটক শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। অভিষেক বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করছি- এই সিএএ ক্যাম্পে কেউ যাবেন না। সেখানে গেলে আপনারা আসামের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, যেখানে নিরীহ মানুষদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। ভয় পাবেন না- আমাদের কর্মীরা মাঠে আছে। মঙ্গলবার থেকেই সদস্যরা ঘরে ঘরে যাবে, সাহায্য ডেস্ক ও ক্যাম্প খোলা হবে। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ওয়ার্ড অফিস সক্রিয় থাকবে। সাংসদ- বিধায়করা দায়িত্বে থাকবেন। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, সিআইআর ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। মাত্র ৫-৬ দিন হয়েছে, ইতিমধ্যেই ছয়টি আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। পানিহাটির প্রদীপ কর থেকে শুরু করে ইলামবাজারের ৯৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ, বারাসাত, তামিলনাড়ুতে অবস্থানরত বর্ধমানের এক ব্যক্তি, এবং ডানকুনির একজন। সবাই আতঙ্ক ও মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সকল বাঙালিকে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, আমি আবেদন করছি, ধর্ম বা দলের বিভেদ ভুলে- সবাই এক হোন। বিজেপি যেভাবে বাংলার মানুষকে অপমান করছে, মর্যাদা কাড়ছে, আমাদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিটি বাঙালিকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দেখাতে হবে, বাংলার শক্তি কী।
তিনি জানান, তৃণমূল কর্মীরা রাজ্যজুড়ে সিআইআর বিরোধী মিছিল করবে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হলে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে। অভিষেক বলেন, যারা বাংলার ভোট চায়, অথচ আমাদের বাংলাদেশি বলে, তাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই কেবল তৃণমূলের নয়- এটি ১০ কোটি বাঙালির লড়াই।
ওদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানান, দ্বিতীয় দফার সিআইআর কার্যক্রম ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চালানো হবে, যার মধ্যে রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরালা, লক্ষদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬। প্রথম দফা সিআইআর ইতিমধ্যেই বিহারে সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ৯ সেপ্টেম্বর আদেশে আধারকে সিআইআর প্রক্রিয়ার ১২টি প্রমাণপত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।