Image description
 

আসামে কংগ্রেসের এক সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা' গাওয়ায় তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে চলছে তুমুল কথার লড়াই।

 বিজেপির অভিযোগ ও রাজনৈতিক দাবি

 

বিজেপি এই ঘটনাকে কংগ্রেসের ‘তুষ্টিকরণ রাজনীতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দলের মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন’ করছে এবং ‘ভোটব্যাংক রাজনীতি’র জন্য এই পথ বেছে নিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘কংগ্রেস বাংলাদেশকে সমর্থন করছে, যে দেশ ভারতকে বিভক্ত করার কথা বলছে।’

 

 আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘটনাকে ‘ভারতের জনগণের প্রতি স্পষ্ট অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছেন এবং পুলিশকে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার মতে, এটি বাংলাদেশের কিছু নাগরিকের ‘উত্তর-পূর্ব ভারত শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অংশ হবে’ এই দাবির সঙ্গে সংযুক্ত।

আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘল অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ তৈরির চেষ্টা করছে এবং গত কয়েক দশক ধরে ভোটব্যাংকের জন্য আসামের জনবিন্যাস পরিবর্তনে অনুপ্রবেশে সাহায্য করেছে। আসাম কংগ্রেসের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়ার ভিডিও পোস্ট করে সমাজমাধ্যমে অশোক লিখেছেন, ‘আসামের শ্রীভূমিতে কংগ্রেসের এক সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবেশন করা হয়েছে। ওই দেশটি (বাংলাদেশ) উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।’

 কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি

কংগ্রেস এমপি গৌরব গগৈ এই অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছেন যে, ‘আমার সোনার বাংলা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা এবং এটি বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন,  ‘বিজেপি সবসময় বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি এবং বাংলার (পশ্চিমবঙ্গের) মানুষকে অপমান করে। ওদের (বিজেপির) আইটি সেল সব সময় বাংলার মানুষকে অপমান করে।’

 বিজেপির উদ্দেশ্যে শ্রীভূমি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তাপস পুরকায়স্থ বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। এই গানের সমালোচনা, মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করা।

তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মহুয়া মৈত্র জানিয়েছেন যে, ১৯০৫ সালে ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ এই গান লিখেছিলেন এবং ১৯৭১ সালে এর প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই বিতর্কের মূলে রয়েছে আসামের জটিল জনতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, বাঙালি মুসলমান জনসংখ্যা এবং অসমীয়া পরিচয়ের প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটিতে স্পর্শকাতর বিষয়। বিজেপি এই সমস্যাকে তাদের রাজনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে, যেখানে কংগ্রেস সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের কথা তুলে ধরছে।

বিজেপি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের ইস্যুতে জোর দিয়ে এই ঘটনাকে তাদের রাজনৈতিক আখ্যানের অংশ করেছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বাঙালি পরিচয়ের প্রশ্নে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

তবে কি উভয় দলই নিজ নিজ রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এই সাংস্কৃতিক প্রতীককে ব্যবহার করছে? রবীন্দ্রনাথের গানটি রচনার পর থেকেই বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হলেও পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হওয়ার কারণেই গানটি নিয়ে এমন বিতর্ক জমে উঠেছে।

ডয়চে ভেলে