Image description

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে শেখ সালেহ বিন ফাওজান বিন আবদুল্লাহ আল-ফাওজানকে দেশের নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নতুন গ্র্যান্ড মুফতি সম্পর্কে এরইমধ্যে কৌতূহল ছড়িয়েছে।

এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সামা টিভি।

এতে বলা হয়, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রস্তনের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি প্রয়াত গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুলআজিজ বিন আবদুল্লাহ আল-আশাইখের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, যিনি ৮২ বছর বয়সে ২৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।

রাজকীয় ফরমান অনুযায়ী, শেখ আল-ফাওজান সৌদি আরবের সিনিয়র আলেম পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক সাধারণ সভাপতির দায়িত্বও পালন করবেন—যা মন্ত্রী পর্যায়ের পদ। এই পদগুলো তাকে সৌদি আরবের ধর্মীয় ও আইনি কাঠামোর অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।

শিক্ষাগত ও একাডেমিক জীবন

১৯৩৫ সালে সৌদি আরবের কাসিম অঞ্চলের আশ-শিমাসিয়াহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ সালেহ আল-ফাওজান। শৈশবে অনাথ হয়ে তিনি পরিবারের অভিভাবকত্বে বড় হন। স্থানীয় মসজিদের ইমাম শেখ হাম্মুদ বিন সুলায়মান আল-তিলাল তার শিক্ষক ছিলেন, যিনি তাকে কুরআন ও প্রাথমিক পাঠ শেখান।

১৯৫০ সালে আশ-শিমাসিয়াহর একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে ১৯৫২ সালে বুরাইদাহর আল-ফয়সালিয়াহ স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৫৪ সালে বুরাইদাহর ‘শরিয়ত ইনস্টিটিউট’-এ ভর্তি হন। সেখানে চার বছর পড়াশোনার পর তিনি রিয়াদের শরিয়াহ কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৬১ সালে ইসলামী আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠানে ফিকহ (ইসলামী বিচারশাস্ত্র) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

তার মাস্টার্স থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘বংশগত সম্পদের বিজ্ঞানে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক অনুসন্ধান’, আর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইসলামী শরিয়তে খাদ্য সংক্রান্ত বিধান’।

বহু দশকের একাডেমিক জীবনে তিনি রিয়াদের বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে শরিয়াহ কলেজ ও ধর্মীয় মূলনীতির কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি এক সময় বিচার বিভাগীয় উচ্চতর ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ফিকহ, আকিদা ও ইসলামী নৈতিকতা বিষয়ে তাঁর অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বজুড়ে তার বক্তৃতা, গবেষণা ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনার জন্য তিনি পরিচিত।

ধর্মীয় নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

নতুন দায়িত্ব পাওয়ার আগে শেখ আল-ফাওজান সৌদি আরবের সিনিয়র আলেম পরিষদ ও মক্কার ফিকহ কাউন্সিলের দীর্ঘদিনের সদস্য ছিলেন। হজ মৌসুমে ইমাম ও দাঈদের জন্য ইসলামী সচেতনতামূলক কর্মসূচিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে তার নিয়োগ ইসলামী শিক্ষায়, বিচারশাস্ত্রে ও জনসেবায় আজীবন নিবেদিত এক জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তিনি শেখ আবদুলআজিজ বিন আবদুল্লাহ আল-আশাইখের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, যিনি দুই দশকেরও বেশি সময় সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের ধর্মীয় ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।