
২০২৬ সালে শুরু হবে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়া। মহাসচিব বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়া শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি থাকলেও বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন, তা নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আগামী বছর নির্বাচতি জাতিসংঘের পরবর্তী নতুন মহাসচিব দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। বর্তমান মহাসচিবের উত্তরসূরি বেছে নিতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে সংস্থাটি। মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি কীভাবে হয় এবং কারা এ পদে আগ্রহী। এ নিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে কখন: প্রথম ধাপে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ ও ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদের সভাপতি যৌথভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে মনোনয়ন আহ্বান করে চিঠি পাঠাবেন। নির্বাচনের অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই কোনো একটি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মনোনীত হতে হয়।
নিয়ম অনুসারে, সাধারণত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল থেকে মহাসচিব বাছাই করা হয়ে থাকে। বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (পর্তুগাল) নির্বাচিত হওয়ার সময় পূর্ব ইউরোপের পালা ছিল। সে অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, এবার লাতিন আমেরিকার পালা। যদিও ক্যারিবীয়সহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও প্রার্থী আসতে পারে বলে ধারণা করছেন কূটনীতিকরা।
এ নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন: প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রার্থী নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মিশেল ব্যাচেলেট (চিলি): দেশটির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিক ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেটকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি দুইবার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ও জাতিসংঘ নারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রেবেকা গ্রিনস্পান (কোস্টারিকা): কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো চাভেস জানিয়েছেন, দেশটি প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী রেবেকা গ্রিনস্পানকে প্রার্থী করবে। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (ইউএসিটিএড)-এর মহাসচিব।
রাফায়েল গ্রোসি (আর্জেন্টিনা): আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর মহাপরিচালক গ্রোসি গত মাসেই ঘোষণা দেন, তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এই আর্জেন্টাইন ২০১৯ সাল থেকে আইএইএর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
নির্বাচন কীভাবে হবে: সাধারণ পরিষদের কাছে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি নাম সুপারিশ করবে। প্রতিটি সদস্য প্রার্থীর পক্ষে ‘সমর্থন’, ‘অসম্মতি’ বা ‘মত নেই’ ভোট দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স- এই পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন) ঐকমত্যই এখানে মুখ্য। এরপর পরিষদের সুপারিশ পেয়ে সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নিয়োগ অনুমোদন করবে, যা ঐতিহ্যগতভাবে আনুষ্ঠানিকতাই মাত্র।
নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ: অতীতে অনেকটাই অস্বচ্ছ এই প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে কাজ করছে জাতিসংঘ। সর্বশেষ চলতি বছর সেপ্টেম্বরের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, প্রত্যেক প্রার্থীকে মনোনয়নের সময় তাদের ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ বা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে এবং তা জনসমক্ষে প্রদর্শিত হবে। জাতিসংঘের কোনো পদে থাকা প্রার্থীদের নির্বাচনী সময় নিজেদের দায়িত্ব থেকে বিরতি নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে, যাতে স্বার্থের সংঘাত না ঘটে।
মহাসচিব কী পালন করেন: জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী মহাসচিব হলেন সংস্থার ‘প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা’। তিনি একাধারে কূটনীতিক, সচিব ও নির্বাহী প্রধান। বর্তমানে গুতেরেস ৩০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক কর্মী এবং প্রায় ৬০ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী তত্ত্বাবধান করেন। জাতিসংঘের বার্ষিক মূল বাজেট ৩.৭ বিলিয়ন ডলার। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বাজেট ৫.৬ বিলিয়ন ডলার। যেহেতু, সামরিক ব্যবস্থা বা নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন নিরাপত্তা পরিষদের হাতে, তাই মহাসচিবের ক্ষমতা সীমিত বলেই ধরে নেওয়া হয়। অনেকেই বলেন, পাঁচ স্থায়ী সদস্য এমন কাউকেই পছন্দ করেন, যিনি ‘সচিব’ বেশি, ‘জেনারেল’ কম।
নারী মহাসচিব: এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৮০ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী মহাসচিব হননি। সম্প্রতি সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কোনো নারী এখনো মহাসচিব পদে আসেননি,’ এবং সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা নারীদের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে। ২০১৬ সালে সবশেষ বাছাইপ্রক্রিয়া চলার সময় কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মহাসচিব হিসেবে তারা নারী প্রার্থীদের অনুমোদন দেবে।
শীর্ষনিউজ