
আগের আইনে বিধান ছিল—কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটা নির্বাচনি এলাকাতেই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সংশোধিত আরপিও অনুমোদনে সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধিত আরপিওতে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজধানীর ফরেন একাডেমি সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সংশোধিত আরপিওতে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
পলাতক আসামি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, পলাতক হচ্ছে—আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না—আদালত পলাতক ঘোষণা করে। বিচার চলাকালীন সময়ে পলাতক হয়।
সংশোধিত আরপিওর নতুন বিধানের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব কিছু প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এটা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করার ব্যবস্থা করা হবে। যেন সবাই জানবে কার কী সম্পত্তি। উনি নির্দেশ দিয়েছেন, এ সংক্রান্ত বিধান আইনে থাকবে।
এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'না' ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে না ভোট হবে। ২০১৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ১৫৩ বা ১৫৪টি আসনে একজন প্রার্থী ছিল। এই ধরনের নির্বাচন যেন আর না হয়। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে যারা ভোটার আছে তারা না ভোট দিতে পারবেন। যে এই প্রার্থী তাদের পছন্দ না। যদি না বেশি ভোট পায় তখন সেখানে আবার নির্বাচন হবে।
জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিও-তে। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচনি জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় উনি কোন দলের।
নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান আরপিও যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধন সেরে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এভাবে ভোট দিতে পারবেন।
রাজনৈতিক দলকে অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, যিনি অনুদান দেবেন, তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
তিনি বলেন, সংশোধিত আরপিওতে ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে।
অনিয়ম বন্ধে ইসি প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে—এমন বিধান যুক্ত করার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগের আইনে বিধান ছিল—কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটা নির্বাচনি এলাকাতেই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আগে নির্বাচনি কাজে সম্পৃক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ হাজারখানেক মানুষ ভোটদানে বিরত থাকতেন। তাদের জন্য এবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।