Image description

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর্যাপ্ত কারণ ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।  অভিযোগ তুললেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। তার আরো অভিযোগ, প্রশাসন ৫ মার্চ, ২০২৬ তারিখে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করার এক মাসেরও বেশি সময় পর কাঠমান্ডুতে সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের  সামনে  প্রথম আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় ওলি  এই মন্তব্য করেন।

সিপিএন-ইউএমএল চেয়ারপারসন ওলি বলেন যে, কোনও আইনি ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও সরকার তাকে  গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে। তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেন। ওলি বলেন,  সরকার শাসনব্যবস্থার চেয়ে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার দিকে বেশি মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে। তার দল ভেঙে দেওয়া প্রতিনিধি পরিষদ পুনর্বহালের চেষ্টা করবে বলেও আশ্বাস দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনরোষ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞার কারণে নেপালে জেন-জি এর নেতৃত্বে সহিংস বিক্ষোভের মুখে পড়ে ওলি  পদত্যাগ করেন।ওলির পদত্যাগের পর, সাবেক  প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ১২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেপালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সুপারিশে প্রেসিডেন্ট  রামচন্দ্র পাউডেল সংসদ ভেঙে দেন।ওলি  তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলে অভিযুক্ত করে বলেন যে এই সরকার ‘গণতান্ত্রিক নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে’ গঠিত হয়েছে। তার নিরাপত্তা হ্রাস করার জন্যও সরকারের সমালোচনা করেছেন ওলি। তিনি বলেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, নেপাল সেনাবাহিনী তাকে বালুওয়াতারে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে আন্দোলনকারীদের আক্রমণের মুখে উদ্ধার করে। 

ওলি দাবি করেন, ‘আমি অল্পের জন্য জনতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। সেই সময়কালে আমার মোবাইল ফোন বেশ কয়েকদিন ধরে জব্দ করা হয়েছিল।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, জেন জি আন্দোলন বহিরাগত শক্তির দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভ চলাকালীন অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় প্ররোচনা দিয়েছিল বহিরাগতরা। জেন-জি  বিদ্রোহের ঠিক আগে  নেপো-কিডস প্রচারণার মাধ্যমে রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রাকে টার্গেট করা হয়েছিল। যুব আন্দোলন শীঘ্রই নৈরাজ্য, দুর্নীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উপর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিবাদে রূপান্তরিত হয়।

ওলি বলেন যে তিনি দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবকে সমর্থন করলেও, বিক্ষোভের ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির সাথে একমত নন। এর ফলে সিংহদরবারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবন এবং সুপ্রিম কোর্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একইসঙ্গে ওলি সাংবাদিকদের ভয় এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে স্ব-সেন্সরশিপের অভিযোগ এনেছেন। বলেছেন, গণমাধ্যম আন্দোলনের সময় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও, ওলি স্পষ্ট করে দিয়েছেন  যে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার বা দলের সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা তার নেই। শের বাহাদুর দেউবা এবং পুষ্প কমল দহল 'প্রচণ্ড'-এর মতো অন্যান্য শীর্ষ নেতারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে তাদের দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে সেই পথে হাটতে রাজি নন ওলি। তার স্পষ্ট  বার্তা, ‘জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয় তাহলে আমি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি। দেশ এবং আমার দলের এখনও আমাকে প্রয়োজন এবং আমি তাদের জন্য কিছু করে যেতে এখনো সক্ষম।’

সূত্র :  ইন্ডিয়া টুডে