Image description

জুলাই সনদ স্বাক্ষর, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে জোট গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রথম আলো

অনেক ঘটনাপ্রবাহ ও তর্কবিতর্ক পেরিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হলো। এখন সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়কে ঘিরে নতুন কোনো সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন কি?

মাহমুদুর রহমান মান্না: অসম্ভব নয়। আমরা যদি সংকট তৈরির চেষ্টা করি, তাহলে তো করতেই পারি। যদি মনে করি যে সংকট এড়িয়ে যাব, সে ক্ষেত্রে সংকট এলে সমাধানের পথও আছে।

প্রথম আলো

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল না। তাদের স্বাক্ষর না করার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: মূলত উভয় পক্ষের অনভিজ্ঞতা, ধারণার অভাব এবং খানিকটা জেদ—এগুলোর কারণে এটা হয়েছে বলে মনে করি। আমাদের প্রথমে বলা হয়েছিল, এনসিপির সঙ্গে সরকার আলোচনা করে এটা মিটিয়েছে।

সত্যি কথা হলো, এত কিছুর পরও এখনো জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্ন করার মতো অনেক জায়গা আছে। সেগুলো তাদের সঙ্গে আলাপ করে একটা সমাধান কি করা যেত না?

আমার কাছে মনে হয় করা যেত। এটা এড়ানো গেলে ভালো হতো। আফটার অল, এদের (এনসিপি) কারণেই তো এই অভ্যুত্থান হয়েছিল। আমরা যে এই সনদ করতে পারলাম, তা তো প্রধানত তাদেরই অবদান। তাদের বাইরে রেখে বিষয়টা (সনদ স্বাক্ষর) ভালো দেখায় না।

প্রথম আলো

এনসিপির দাবি বা উদ্বেগের জায়গাগুলো সমাধান না হলে নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আপনি কীভাবে দেখেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর কারণ বলা হয়েছে, জুলাই সনদের পরিবর্তন-সংযোজন ইত্যাদি করা হবে। সেটা যদি করাই হয়, আগে কেন সেটেল করা হলো না? তবে এনসিপির জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ফলে কোনো সংকট তৈরি হবে—এমনটা আমি মনে করি না।

প্রথম আলো

ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতের পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলো। অনেকে মনে করেন, এই সনদ প্রস্তুত, ভিন্নমত, স্বাক্ষরসহ অনেক বিষয়ে বিএনপির চাওয়াই প্রাধান্য পেয়েছে। আপনি কী মনে করেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি মনে করি, কথাটা এভাবে বলা ঠিক নয়। বিএনপি একটা বড় ও মেজর (প্রধান) দল। তাদের কোনো ডিসেন্ট (ভিন্নমত) থাকলে সেটা তো হিসাবে নিতে হবে। এখন এই ডিসেন্টকে কীভাবে ট্রিট (বিবেচনা) করা হবে, সেটা ঠিক করা দরকার ছিল।

প্রথম আলো

গত শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া একদল ব্যক্তি যেভাবে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঢুকে পড়লেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশের যেভাবে সংঘর্ষ হলো—সরকার এ পরিস্থিতি এড়াতে পারত কি না?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এ পরিস্থিতি এড়ানো যেতই—এ রকম করে বলতে পারব না। তবে এটা না পারার মতো হওয়ার কথা ছিল না।

প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সময়ে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আপনি কোনো শঙ্কা দেখেন কি না?

মাহমুদুর রহমান মান্না: সে রকম কিছু দেখছি না। তবে নির্বাচনের কোয়ালিটি (মান) নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে।

প্রথম আলো

বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব?

মাহমুদুর রহমান মান্না: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমি বললাম যে নির্বাচনের মান নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। পুলিশ তো এখনো সেভাবে সক্রিয় নয় আসলে।

প্রথম আলো

আপনি ছাত্রজীবনে ডাকসু ও চাকসুর শীর্ষপদে কয়েকবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি দেশের প্রধান চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রথমবারের মতো অনেকটা একচেটিয়া জয় পেয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের এমন ফলাফল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে কী?

মাহমুদুর রহমান মান্না: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। কিন্তু এত প্রভাব পড়বে না যে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে।

প্রথম আলো

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, দেশের সবকিছু নিয়ম ও শৃঙ্খলার মধ্যে চলবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষের মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে দেখা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারেনি—এমন আলোচনাও জনপরিসরে আছে। নির্বাচিত সরকার এসে এ ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: যে সরকার আসবে, তাদের না দেখে এ বিষয়ে আসলে মন্তব্য করা কঠিন। যারা ক্ষমতায় আসতে পারে বলে আমি মনে করি—সরাসরি বললে বিএনপি—তাদের নেতৃত্বের আন্তরিকতার সমস্যা আমি দেখছি না। কিন্তু তারা বিষয়টা কতখানি বুঝে করতে পারবে, তা এখনই বলতে পারব না।

প্রথম আলো

আপনাকে ধন্যবাদ।

মাহমুদুর রহমান মান্না: আপনাকেও ধন্যবাদ।