Image description

গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হামাসের সঙ্গে এই ভঙ্গুর সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে মার্কিন দূতেরা কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, গাজা সিটির তুফাহ এলাকার পূর্বাংশ আল-শাফে দুটি ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। তারা নিজেদের বাড়ি দেখে ফেরার পথে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান। খবর আল জাজিরার। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এমন “সন্ত্রাসীদের” দিকে গুলি চালিয়েছে, যারা শুজাইয়া এলাকায় তথাকথিত “হলুদ সীমারেখা” অতিক্রম করে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল।

এই “হলুদ সীমারেখা”টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত মানচিত্রে নির্ধারিত, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে পিছু হটে অবস্থান করছে।

গাজা সিটির বাসিন্দারা জানান, পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সীমারেখাটি কোথায় তা বোঝা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা সামির (৫০) বলেন, “আমরা মানচিত্র দেখেছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো সীমারেখা খুঁজে পাওয়া যায় না।”

গাজায় ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির মধ্যে ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের জন্য দায়ী করছে।

রোববারের (১৯ অক্টােবর) ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশু। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধারা রাফাহ এলাকায় তাদের দুই সেনাকে হত্যা করায় এটি “প্রতিশোধমূলক হামলা।”

তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে তাদের কোনো ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এবং ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল “অজুহাত তৈরি করে” যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে চাইছে।

এদিকে, রেড ক্রস হামাসের কাছ থেকে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে।

রোববার ইসরায়েল মানবিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিলেও পরে জানায়, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন আবার শুরু করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দ্যুজারিক বলেন, গাজায় সাহায্য পৌঁছানো এখনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম বলেন, “গাজায় প্রবেশের পথে একাধিক চেকপোস্ট সাহায্যবাহী ট্রাকগুলোকে আটকে রেখেছে, ফলে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে আছে।”অবিরত সহিংসতার মধ্যে সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার ইসরায়েল পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

আগামী মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও তার স্ত্রী উশা ভ্যান্স ইসরায়েল সফরে যাবেন।

চুক্তির পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, ইসরায়েলি সেনাদের আরও পিছু হটা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজার প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

তবে হামাস ও তাদের মিত্র সংগঠনগুলো এই পরিকল্পনায় “বিদেশি প্রশাসন” প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানও নাকচ করেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামাসের ভেতরে কিছু “বিদ্রোহী” উপাদান রয়েছে, যা সংগঠনের নেতাদের ঠিক করতে হবে।

ট্রাম্প বলেন, “তাদের ভালো হতে হবে। না হলে তারা নিশ্চিহ্ন হবে।” তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থল সেনা এতে অংশ নেবে না।

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামাস নিরাপত্তা বাহিনী আবারও রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “হামাস কয়েকটি ভয়ঙ্কর গ্যাং ধ্বংস করেছে, যা আমি মেনে নিতে পারি।”