Image description
 

ইরান জানিয়েছে, বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির ১০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা আর পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞায় বাধ্য নয়। তবে তেহরান জানিয়েছে, দেশটি কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকবে।

 

শনিবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

 
 

বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৫ সালের চুক্তির সব বিধান, যার মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত, এখন থেকে বাতিল বলে গণ্য হবে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২২৩১ গৃহীত হওয়ার ঠিক ১০ বছর পর চুক্তির মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। JCPOA নামে পরিচিত এই চুক্তিটি ইরান, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার বিনিময়ে।

 

তবে ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গিয়ে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর থেকেই তেহরান ধীরে ধীরে তার পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করে।

চুক্তি পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টা বহুবার ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি বছরের আগস্টে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স তথাকথিত “স্ন্যাপব্যাক” প্রক্রিয়া চালু করে, যার ফলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন, “স্ন্যাপব্যাক” কার্যকর হওয়ায় চুক্তির সমাপ্তি দিবসটি বাস্তবে তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করছে না। আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলী ভায়েজের মতে, পারমাণবিক চুক্তি বহু বছর ধরেই “নিষ্প্রাণ” ছিল, আর এখন তা “আনুষ্ঠানিকভাবে সমাহিত” হয়েছে।

বর্তমানে ইরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা অচল অবস্থায় রয়েছে। ভায়েজ মনে করেন, ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের কারণে তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন করে সম্পৃক্ত হতে অনিচ্ছুক, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি “বৃহত্তর চুক্তি”-র সন্ধানে রয়েছে।

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করলেও বলেছিলেন, পদক্ষেপ নেওয়ার পালা এখন তেহরানের। অন্যদিকে ইরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার গ্যারান্টি দিলে তারা আলোচনায় রাজি। 

এর আগে জুন মাসে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলা চালায়। ১২ দিনব্যাপী সেই সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি ইরানি নিহত হয়, যার মধ্যে শতাধিক বেসামরিক নাগরিক ছিল। এতে অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এই হামলায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা নীরব থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জুলাইয়ে জাতিসংঘের সংস্থাটির সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করেন এবং পরিদর্শকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেন।

আইএইএ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ইরানের পারমাণবিক মজুদ যাচাই করতে পারছে না, যা “গুরুতর উদ্বেগের বিষয়”।

অন্যদিকে ইউরোপের তিন শক্তি—যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স—গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে তারা একটি “ব্যাপক, টেকসই ও যাচাইযোগ্য চুক্তি” অর্জনের লক্ষ্যে নতুন আলোচনা শুরু করতে চায়। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইউরোপ স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া চালু করায় তেহরান তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো কারণ দেখছে না।