Image description
 

ফেসবুকে এখন ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্রুপ ও পেজ। প্রতিটি গ্রুপে হাজার থেকে লাখের বেশি সদস্য। এসব গ্রুপে নিয়মিত শেয়ার করা হচ্ছে তরুণী-যুবতীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর ডেমো ক্লিপ। ফাঁদে ফেলা হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের।

ফেসবুকের এসব পেজ ও গ্রুপে দেওয়া হয় টেলিগ্রাম চ্যানেলের লিংক। লিংকে প্রবেশ করলেই আসে দেশি নগ্ন ও অশ্লীল ভিডিওর প্রলোভন। প্রথমে দেওয়া হয় আংশিক ভিডিও, যাতে আগ্রহ বাড়ে। পুরো ভিডিও দেখতে হলে গুনতে হয় টাকা। অগ্রিম টাকা পাঠানোর পরই পাঠানো হয় পুরো ভিডিওর লিংক।

নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে এসব ভিডিও কিনছে নানা বয়সী তরুণ-তরুণী। আর সর্বনাশ হচ্ছে সেই নারীদের, যাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিছু প্রতারক প্রেমিক গোপনে ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাক করেও অনেকের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

 
 

সূত্র জানায়, শুরুটা হয় ফেসবুকে। সেখানে ‘এক্সপোজ’ বা ‘ভাইরাল ভিডিও’ নামে পেজ-গ্রুপ খুলে আপত্তিকর স্ক্রিনশট পোস্ট করা হয়। এরপর দেওয়া হয় টেলিগ্রাম গ্রুপের লিংক। গ্রুপে প্রবেশ করলে দেখা যায় আংশিক ভিডিও, আর পুরো ভিডিওর জন্য দিতে হয় টাকা।

 

‘প্রিমিয়াম’ নামে মাসিক বা বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশনও বিক্রি হচ্ছে। মাসে এক হাজার টাকা বা পুরো বছরের জন্য এককালীন টাকা পরিশোধ করলে সদস্যরা দেখতে পাচ্ছেন অশ্লীল কনটেন্ট। অনেক সময় একজন নারীর ভিডিও ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

ফেসবুক ও টেলিগ্রাম ঘেঁটে এমন বহু গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘এক্সপোজ ভাইরাল ভিডিও’ (২০ হাজার সদস্য), ‘দেশি ভাইরাল ভিডিও’ (১০ হাজার), ‘এক্সপোজ অরিজিনাল’ (১০ হাজার) ও ‘ব্রেইনটস অফিসিয়াল ডেমো’ (৩৮ হাজার সদস্য)। এসব গ্রুপের অ্যাডমিনরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে পরিচালনা করছে নেটওয়ার্ক।

একজন ‘মার্কো’ নামের অ্যাডমিনের লোকেশন দেওয়া আছে কলকাতায়। যোগাযোগের চেষ্টা করলে অধিকাংশই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে, কেউ কেউ সরাসরি ব্লক করে দেয়।

চক্রের পদ্ধতি ও ভয়ঙ্কর পরিণতি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই এসব চক্র গোপনে পর্ন ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা প্রেমের সম্পর্ক, প্রতারণা কিংবা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে। পরে সেগুলো বিক্রি করে টেলিগ্রামের নানা গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়।

অনেক নারী নিজের অজান্তে এই চক্রের হাতে সর্বনাশের শিকার হচ্ছেন। তাদের ব্যক্তিগত ভিডিও ও ছবি দিয়ে তৈরি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট। অতীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন বহু চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের স্বীকারোক্তি থেকেও এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইনের চোখে ফৌজদারি অপরাধ, তবু থামছে না বাণিজ্য

বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, এ ধরনের ভিডিও তৈরি ও প্রচার একটি ফৌজদারি অপরাধ। তবুও ফেসবুক ও টেলিগ্রামের আড়ালে দেদার চলছে এই অবৈধ ব্যবসা। চক্রের সদস্যরা ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে থাকে, এমনকি বিকাশ ও নগদের অ্যাকাউন্টও খোলা হয় ভুয়া তথ্য দিয়ে।

ফলে তাদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। এভাবে তারা শুধু অর্থ কামাচ্ছে না, বরং এক প্রজন্মকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। আর যেসব নারীর ছবি ও ভিডিও ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা চরম মানসিক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

সাইবার পুলিশের কঠোর অবস্থান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার বলেন, এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

সূত্র : দৈনিক মানবজমিন