Image description
 

যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে চীন বলেছে, তারা যেন বাস্তবতা মেনে চলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিধি অনুসরণ করে এবং এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকির পর এই কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছে চীন।

 

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‌‘চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে বাস্তবতা ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্যবিধি মেনে চলতে, বাজার অর্থনীতি ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি অনুসরণ করতে, ভুল সিদ্ধান্ত সংশোধন করতে এবং চীনের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করা অবিলম্বে বন্ধ করতে।’

এর আগে মঙ্গলবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন ‘সেকশন ৩০১’ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান হানহওয়া ওশান কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাঁচটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চীনের প্রতিশোধমূলক ‘অ্যান্টি-ফরেন স্যাংশনস’ আইনের অধীনে, জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর জারি করা নির্দেশ (অর্ডার নম্বর ৬/২০২৫) অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ‘সেকশন ৩০১’ ব্যবস্থা চীনের সামুদ্রিক, লজিস্টিক ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বৈধ অধিকার ক্ষুণ্ন করছে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো হানহওয়া শিপিং এলএলসি, হানহওয়া ফিলি শিপইয়ার্ড ইনক, হানহওয়া ওশান ইউএসএ ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি, হানহওয়া শিপিং হোল্ডিংস এলএলসি এবং এইচএস ইউএসএ হোল্ডিংস কর্প।

চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘সেকশন ৩০১’ তদন্ত কীভাবে চীনের নৌ-নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং সরবরাহ চেইনকে প্রভাবিত করছে—তা যাচাইয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই বিবৃতি এসেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওয়াশিংটন ও বেইজিং উভয়ই নতুন বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা তাদের অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

চীন গত ১৪ অক্টোবর থেকে চীনা বন্দরে পৌঁছানো মার্কিন জাহাজের ওপর নতুন বন্দর ফি আরোপ করেছে। এই ফি প্রতি নেট টনে ৪০০ ইউয়ান (প্রায় ৫৬ মার্কিন ডলার) থেকে শুরু হবে এবং আগামী তিন বছর ধরে তা ধাপে ধাপে বাড়বে।

বেইজিং জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যে একই ধরনের ফি চীনা জাহাজের ওপর আরোপ করেছে, তার জবাবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চীনের দাবি, মার্কিন সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক পরিবহন চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে চীনা আমদানিপণ্যের ওপর আরও ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশে।

‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে, যা বর্তমান শুল্কের ওপর প্রযোজ্য হবে।’

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি রপ্তানির ওপরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে, কারণ বেইজিং “শত্রুতাপূর্ণ অবস্থান” নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর প্রতিক্রিয়ায় জানায়, ‘উচ্চ শুল্কের হুমকি কোনোভাবেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার সঠিক উপায় নয়।’ 

চীন বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না, তবে ভয়ও পায় না

চীন তাদের দুর্লভ খনিজ রপ্তানিনিয়ন্ত্রণকে বৈধ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও রপ্তানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের অংশ। একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দ্বৈত মানদণ্ড’ অনুসরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একদিকে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে, আর অন্যদিকে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে—এভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করা যায় না।’

গত মাসে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনার পর বেইজিং অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন আরও চীনা প্রতিষ্ঠানকে ‘এন্টিটি লিস্টে’ যুক্ত করেছে এবং ‘সেকশন ৩০১’ ব্যবস্থা জাহাজ নির্মাণ খাতে সম্প্রসারিত করেছে।

চীন বলেছে, এসব পদক্ষেপ তাদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে ‘ভুল সিদ্ধান্ত সংশোধন করতে’ ও ‘সংলাপের মাধ্যমে পার্থক্য সমাধান করতে’, যাতে দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও টেকসই থাকে।