
সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এতে বহু সেনা হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এটি। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই শতাধিক তালেবান যোদ্ধা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করেছে তারা। পাশাপাশি আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্ত পোস্ট দখলের দাবি করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে আফগানিস্তানের অতর্কিত হামলায় নিহত হয়েছে পাকিস্তানের ২৩ সেনাসদস্য। তবে রয়টার্স এক খবরে বলছে, তালেবান সরকার কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছে যে, তাদের হামলায় অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ কাবুলকে লক্ষ্য করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। দুই দেশের মধ্যে ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান দু’টি ক্রসিং তোরখাম ও চমন বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। প্রতিবেশী এ দুই দেশের সংঘর্ষে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সৌদি আরব, ইরান ও কাতার। প্রতিটি দেশই দুই দেশকে সংযম ও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। এমন এক সময় সীমান্ত সংঘাতে লিপ্ত হলো এ দুই দেশ যখন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সাতদিনের সফরে ভারতে অবস্থান করছেন। রোববার ভারতের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে সংঘাত থামিয়েছে তার দেশ। কাতার এবং সৌদি আরবের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয়দাতা হিসেবে উল্লেখ করলেও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরকেই ইসলামাবাদের সঙ্গে কাবুলের উত্তেজনার মূল কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
রোববার পাকিস্তানের আইএসপিআর জানিয়েছে, শনিবার রাতে বিনা উস্কানিতে তালেবান যোদ্ধা ও ‘ভারত সমর্থিত’ তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) যৌথভাবে হামলা চালায়। এর জবাবে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। এতে ২০০ জনের বেশি টিটিপি সদস্য এবং তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী আরও জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী আফগান ভূখণ্ডে থাকা তালেবান ক্যাম্প, ফাঁড়ি, সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সহায়ক নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট হামলা এবং অভিযান চালিয়েছে। এ সময় একাধিক তালেবান স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সীমান্তে প্রবেশ করে অস্থায়ীভাবে ২১টি ঘাঁটির দখলে নেয় পাকিস্তান। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর একাধিক হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হয়।
সীমান্তবর্তী আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল এবং বারামচাসহ ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, ইসলামাবাদ সংঘাত ও উগ্রতার চেয়ে গঠনমূলক কূটনীতি ও সংলাপকে অগ্রাধিকার দেয়। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে তালেবান সরকারের প্রতি তাদের মাটি সন্ত্রাসীদের জন্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, যদি তালেবান সরকার অন্ধের মতো এ অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ভারতের সঙ্গে একজোট হয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থেমে থাকবে না এবং আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদের মূল সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেদের জনগণের সুরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সৌদি আরব, কাতার এবং ইরান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিন দেশই উত্তেজনা প্রশমন করতে সংযম প্রদর্শন এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উত্তেজনা কমানো অপরিহার্য। কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও উত্তেজনা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পার্থক্য নিরসনের উপর জোর দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ইরান সহায়তা করতে প্রস্তুত।