
বিশ্ব রাজনীতির আকাশে আবারও নতুন সামরিক সমীকরণ। এবার সে আলো ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতার। আর সেই আলোয় মুখ উজ্জ্বল করছে যুক্তরাষ্ট্রও। শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ঘোষণা করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যের একটি বিমান ঘাঁটিতে কাতারের বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতেই এবার যুদ্ধবিমানের শান দেবে কাতারের পাইলটরা, গড়ে তুলবে নিজেদের দক্ষ হিসেবে।
ঐতিহাসিক চুক্তি ও যৌথ শক্তি বৃদ্ধি
এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেক্সেদ এবং কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি।
হেক্সেদের মন্তব্য: হেক্সেদ বলেন, "এই যৌথ উদ্যোগ আমাদের দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। একসঙ্গে প্রশিক্ষণ মানে একসঙ্গে একসঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি। এটা আমাদের সমন্বিত যুদ্ধ ক্ষমতা ও প্রাণঘাতী সামর্থ্য আরও বাড়াবে।"
চুক্তি অনুযায়ী, আইডাহোর বিখ্যাত মাউন্টেন হোম এয়ারফোর্স বেজে নির্মিত হবে কাতারি এমিরি এয়ারফোর্সের প্রশিক্ষণ সুবিধা। সেখানে থাকবে অত্যাধুনিক হ্যাঙ্গার, স্কোয়াড্রন ভবন এবং ফাইটার জেট এফ-১৫ কিউএ। এই জেটগুলো তৈরি করেছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং। প্রায় ৫০ মাইল দূরে রাজ্য রাজধানী বইসির দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই ঘাঁটিতে কাতারি পাইলটদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীও যৌথভাবে প্রশিক্ষণ নেবে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
কিন্তু এই ঘোষণা যতটা প্রশংসা কুড়িয়েছে, ততটাই জাগিয়েছে বিতর্কও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক বিতর্কিত ডানপন্থী মুখপাত্র লরা লুমার একে বলেছেন, "এটা একটা জাতীয় লজ্জা। কোনো দেশকে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।"
তবে মার্কিন বিমান বাহিনীর মুখপাত্র অ্যান স্টেফানেক দ্রুতই সেই সমালোচনায় জল ঢেলে দেন। তিনি ব্যাখ্যা দেন, "এটা কোনো বিদেশী ঘাঁটি নয়। এটি যৌথ প্রশিক্ষণের অংশ, যেমন আমরা সিঙ্গাপুর বা জার্মানির সঙ্গে করে থাকি।"
সম্পর্কের আড়ালে 'উপহার' এবং নাটকীয় মোড়
ওয়াশিংটন ও দোহা একে অপরের রাজনৈতিক ছায়াতলে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। সমালোচকরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে চুক্তির পেছনে আরও 'উপহারমূলক' গল্প রয়েছে।
বিশাল উপহার: সম্প্রতি কাতার যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের এক বিশাল বোয়িং ৭৭-৮জেট। যা ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টের নতুন এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তবে আমেরিকান কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, চুক্তি পরিকল্পনা এই উপহার পাওয়ার অনেক আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল।
ঘটনাপ্রবাহ আরও নাটকীয় মোড় নেয় গত মাসে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেন, কাতারের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘোষণার আগেই ইসরাইলি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দোহা। হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও তারা কাতারকে সতর্ক করেনি—এই অভিযোগে দোহা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। তবে হামলার নিন্দা এসেছিল আন্তর্জাতিক মহল থেকে।